দক্ষিণ আফ্রিকা একটি বৈচিত্র্যময় ও সমৃদ্ধশালী দেশ, যা আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণপ্রান্তে অবস্থিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বর্ণাঢ্য সংস্কৃতি, রাজনৈতিক ইতিহাস এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কারণে এই দেশটি বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত।
ভূগোল ও জলবায়ু
দক্ষিণ আফ্রিকার ভৌগোলিক অবস্থান একে একটি অনন্য বৈচিত্র্যময় পরিবেশ প্রদান করেছে। দেশটি আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এটি উত্তরে নামিবিয়া, বতসোয়ানা ও জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করে এবং উত্তর-পূর্বে মোজাম্বিক ও এসওয়াতিনির (সাবেক সোয়াজিল্যান্ড) সীমানা রয়েছে। এছাড়া, দেশটির অভ্যন্তরে লেসোথো নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র সম্পূর্ণভাবে বেষ্টিত রয়েছে।
দেশটির জলবায়ু অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত হয়। পশ্চিম উপকূলে শুষ্ক মরুভূমি অঞ্চল (নামিব মরুভূমি) এবং পূর্ব উপকূলে গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু বিদ্যমান। রাজধানী প্রিটোরিয়াতে শীতকালে (জুন-আগস্ট) তাপমাত্রা কমে গেলেও গ্রীষ্মকালে বেশ উষ্ণ থাকে।
ইতিহাস
দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাস বহু শতাব্দী ধরে বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের বসবাসের গল্প বহন করে। এখানে আদিবাসী খোইসান ও বান্টু জনগোষ্ঠীর বসবাসের পাশাপাশি ১৫শ শতাব্দীতে ইউরোপীয় উপনিবেশবাদীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
১৬৫২ সালে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কেপ টাউনে একটি উপনিবেশ স্থাপন করে, যা পরবর্তীতে ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে আসে। ১৯৪৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদী শাসনব্যবস্থা (আপারথাইড) চালু হয়, যা ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত চলেছিল। নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (ANC) আপারথাইডের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যায় এবং অবশেষে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও রাজনীতি
দক্ষিণ আফ্রিকা একটি সংসদীয় গণতন্ত্র, যেখানে প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রের প্রধান ও সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দেশটির তিনটি রাজধানী রয়েছে:
- প্রিটোরিয়া (প্রশাসনিক রাজধানী)
- কেপ টাউন (আইনপ্রণেতা সংসদের কেন্দ্র)
- ব্লুমফন্টেইন (বিচার বিভাগীয় রাজধানী)
অর্থনীতি
দক্ষিণ আফ্রিকা আফ্রিকার অন্যতম বৃহৎ ও শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ। দেশটির প্রধান অর্থনৈতিক খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে খনি শিল্প, কৃষি, পর্যটন, ও বাণিজ্য। বিশ্বের বৃহত্তম স্বর্ণ, হীরা ও প্লাটিনাম রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
সংস্কৃতি ও ভাষা
দক্ষিণ আফ্রিকায় ১১টি সরকারী ভাষা রয়েছে, যার মধ্যে ইংরেজি, আফ্রিকান্স, জুলু ও কোসা অন্যতম। বহুজাতিক সংস্কৃতির দেশ হিসেবে এখানে আফ্রিকান, ইউরোপীয় ও এশীয় ঐতিহ্যের মিশ্রণ দেখা যায়।
পর্যটন ও দর্শনীয় স্থান
দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি দেশ।
- কেপ টাউন ও টেবিল মাউন্টেন
- ক্রুগার ন্যাশনাল পার্ক (বন্যপ্রাণীর জন্য বিখ্যাত)
- রোবেন দ্বীপ (নেলসন ম্যান্ডেলার কারাবাসস্থল)
- গার্ডেন রুট (সুন্দর উপকূলীয় রাস্তা)