বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৫০ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

দক্ষিণগ্রাম বিলের তিন রঙের পদ্মফুল

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

কুমিল্লার দক্ষিণগ্রাম বিলে বিরল প্রজাতির হলুদ পদ্মফুল নিয়ে গবেষণায় যুক্ত হয়েছে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা-ইউনেস্কো। শুধু বিরল প্রজাতির হলুদ পদ্মফুল নয়, এই বিলে ফোটা গোলাপি, সাদা ও হলুদসহ তিন রঙের পদ্মফুল নিয়ে গবেষণা করছে রাজধানীর বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বেঙ্গল প্ল্যান্টস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ইউনেস্কোর অর্থায়নে গবেষণা পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের এই পদ্মবিলের ঐতিহ্য রক্ষা, গবেষণার পাশাপাশি জলাভূমি ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায়ও কাজ করবে ওই বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাটি।

ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণগ্রাম জলাশয়ের কিনারায় সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে। এই সময়ে সেখানে নৌকা নিয়ে কেউ পদ্মফুল ছিঁড়তে পারবেন না। জলাশয়ে গিয়ে মাছও আহরণ করতে পারবেন না। কুমিল্লা জেলা প্রশাসন এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে। এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে কুমিল্লার পরিবেশবাদী সংগঠন ও পরিবেশবিদরা।

comilla lotus news pic
সূ

ত্রে জানা যায়, বেঙ্গল প্ল্যান্টস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশে পদ্মফুলের বৈচিত্র্য, গুণাগুণ ও সংরক্ষণ দিয়ে গবেষণা করে আসছে। গবেষণা করতে গিয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ৩০ থেকে ৩৫টি বিলে পদ্মফুলের সন্ধান পায় তারা। এরই মধ্যে কুমিল্লার বুড়িচংয়ের দক্ষিণগ্রাম জলাশয়েই হলুদসহ তিন ধরনের পদ্মফুলের সন্ধান মিলেছে। এ কারণে এখানে গবেষণা করার জন্য ২০১৯ সালেই ইউনেস্কোতে আবেদন করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর চলতি বছরে ওই গবেষণা কাজ করার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয় ইউনেস্কো। আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের গবেষণার কাজ চলবে।

এদিকে সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, দক্ষিণগ্রাম এলাকার অন্তত ১০ একর জায়গা নিয়ে বিস্তীর্ণ জলাশয়ে পদ্মফুল ফুটে আছে। প্রকৃতির আপন খেয়ালে ওই জলাশয়ে এই ফুলের জন্ম। অন্যবারের তুলনায় এবার কম ফুল ফুটেছে। পদ্মফুল বেড়ে উঠছে, আর দখিনা বাতাসের সঙ্গে দোল খাচ্ছে পুরো জলাশয়ে। পদ্মফুলের ওপর ওড়াউড়ি করছে নানা প্রজাতির জলজ প্রাণী।

বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘অপরূপ এই পদ্মবিল শুধু বুড়িচং বা কুমিল্লার নয়, সারাদেশের গৌরব। কাজেই এই বিল এবং বিলের হলুদ পদ্ম রক্ষায় আমরা সবাইকে নিয়ে কাজ করবো।’

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘এখানে হলুদ পদ্ম রয়েছে, এটি সম্পূর্ণ নতুন একটি প্রজাতি হিসেবে বিবেচিত হতে চলেছে। তাই এই পদ্মের গবেষণা ও সংরক্ষণে সবারই এগিয়ে আসা উচিত।’

তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা গেলে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কর্মসূচিটি পদ্মরক্ষার পাশাপাশি জলাশয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ এবং প্রাণীকেও রক্ষা করবে।’

বেঙ্গল প্ল্যান্টস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক সিকদার আবুল কাশেম শামসুদ্দীন বলেন, ‘প্রায় দুই বছর ধরে দক্ষিণগ্রাম পদ্মবিলে গবেষণা করার তাগিদ অনুভব করি। এরপর ইউনেস্কোতে প্রস্তাব দিই। ওরা সাড়া দেয়। এখন গবেষণা শুরু হয়েছে। পদ্ম গাছ আমাদের জীববৈচিত্র্যের অন্যতম বড় উপাদান। তাই যেসব জলাশয়ে এখনও পদ্ম আছে, সেগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হলে গোটা জলাশয়ের অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ ও ক্ষুদ্র প্রাণীদেরও সংরক্ষণ করা যাবে।’

প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ হিসেবে যুক্ত অধ্যাপক ড. রাখহরি সরকার বলেন, ‘আমরা না বুঝে অনেক পদ্মবিল এরই মধ্যে নষ্ট করে ফেলেছি। কর্মসূচিটি বাস্তবায়িত হলে মানুষ পদ্মকে নতুনভাবে চিনবে। এই সমীক্ষা প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় যেমন সহযোগিতা করবে, তেমনি অর্থনৈতিকভাবেও অবদান রাখবে।’

তিনি বলেন, ‘পদ্মফুলের আদিনিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশ, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশ। কুমিল্লার বুড়িচংয়ের জলাশয়ের পদ্মফুল আমরা সংরক্ষণ করে বীজ নিতে চাই। এখানে হলুদ পদ্মফুল ফোটে। এটি সচরাচর অন্য কোনও বিলে মেলে না। এক জলাশয়ে তিন ধরনের পদ্মফুল পাওয়াও কঠিন।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com