শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:০৭ অপরাহ্ন
Uncategorized

থাইল্যান্ড ঘুরে আসুন

  • আপডেট সময় শনিবার, ১০ জুলাই, ২০২১

পাতায়া সমুদ্র সৈকত

থাইল্যান্ড-এর অসংখ্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করে পাতায়া সমুদ্র সৈকত। এই সৈকতের সাদা নরম বালু, সামনে বিস্তৃত নীল সমুদ্র এবং তাতে চরে বেড়ানো রং-বেরংয়ের ছোট ছোট নৌকা আর পেছনে সবুজের চাদর বিছানো পাহাড় অন্যরকম অনুভূতির জোগান দেয়। থাইল্যান্ডের সমুদ্রশহর পাতায়ার প্রবাল দ্বীপের প্রতিটি পরতে পরতে সাজানো রয়েছে এমন সৌন্দর্য। থাইল্যান্ড ভ্রমণ করে আসা এক ভ্রমণ প্রিয় মানুষের অভিজ্ঞতা ট্রাভেল বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হবে তারই ভাষ্যমতে। পাতায়া সমুদ্র সৈকত খুব বেশি বড় না হলেও বেশ সাজানো গোছানো। সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য সবরকম ব্যবস্থা করেছে থাই সরকার। ব্যাংকক-পাতায়ার দূরত্ব ৭ কিলোমিটার।

সমগ্র সৈকতের সবকিছুই অত্যন্ত গোছানো। সৈকতের ধারে রেস্তরাঁ এবং বারগুলো চব্বিশ ঘণ্টাই খোলা থাকে। তাছাড়া, বিচ রোড থেকে স্পিডবোটে করে পৌঁছে যাওয়া যায় সমুদ্রের গভীরে। এখানে, প্যারাগ্লাইডিংয়েরও ব্যবস্থা রয়েছে। তবে, দিনের পাতায়ার তুলনায় রাতের পাতায়া অনেক বেশি মায়াবী ও আকর্ষণীয়। আর থাইল্যান্ডে এসে যদি থাই জনগোষ্ঠীর জীবনধারা, ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে চান তবে যেতে হবে রাজধানী ব্যাংককে। চাও ফারায়া নদীর পশ্চিম তীরে থাইল্যান্ড উপসাগরের কাছাকাছি অবস্থিত ব্যাংককের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ চাও ফারায়া নদীর পশ্চিম তীরে নাফ্রালারন রোডের উপর প্রায় এক বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত প্রাচীন রাজপ্রাসাদ। এই রাজপ্রাসাদ থাই জাতির পুরনো দিনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়!

চমৎকার কিছু মন্দির

এছাড়া, প্রাসাদ চত্বরে অবস্থিত পান্না দিয়ে বানানো বুদ্ধের মূর্তি আছে যা দেখলে থাইদের অতীত ঐতিহ্যের পরিচয় পাওয়া যায়। একটিমাত্র জেড পাথর কেটে তৈরি করা মূর্তিটি ছাড়াও বৌদ্ধ মন্দিরটির বাইরের ও ভেতরের দেয়ালে রয়েছে নানা ধরণের ভাস্কর্য। তাতে রয়েছে ফ্রেসকো ও সূক্ষ্ম কারুকাজ। প্রাসাদ চত্বরে আরও বেশ কয়েকটি মন্দির এবং কম্বোডিয়ার আঙ্কোরভাটের একটি মিনিয়েচার মডেল আছে। চমৎকার সব মন্দির, বৌদ্ধমূর্তি, রাজপ্রাসাদ, জাদুঘর, পার্ক সবকিছু মিলিয়ে ব্যাংকক ট্যুরিস্টদের জন্য একটি আদর্শ শহর।

থাইল্যান্ড
ছবি : সংগৃহীত

ফুকেট

সাদা হাতির দেশ থাইল্যান্ডের অন্যতম আরেকটি দর্শনীয় স্থান হল ফুকেট। ফুকেটে সমুদ্রের নীল জলরাশি, বন ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দ্বীপসমূহ, সাদা বালুময় সমুদ্র সৈকত, আইল্যান্ড ও নীল সমুদ্রের মাঝে পাহাড় জঙ্গল ভরা ছোট ছোট নির্জন দ্বীপ ও তার বেলাভূমি সৌন্দর্যের এক অনন্য বিস্ময়। যা আপনাকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও নিয়ে যাবে কল্পনার স্বর্গরাজ্যে। ব্যাংকক থেকে ফুকেটের দূরত্ব প্রায় ৮৬০ কিলোমিটার। এটি থাইল্যান্ডের একটি অন্যতম পর্যটন প্রিয় বৃহত্তম দ্বীপ। সৈকতের জন্যও ফুকেট বিখ্যাত। তবে, সৈকতের পাশাপাশি ফুকেটের আরেকটি সৌন্দর্য হলও আন্দামান সাগরের ভেতর চুনাপাথরের পাহাড়। তবে এর জন্য সৈকত থেকে নৌকা নিয়ে যেতে হবে ‘ফাং-বে’ তে। বৈচিত্র্যময় এসব চুনাপাথরের পাহাড়ে অনেক সিনেমার শুটিং হয়। ১৯৭৪ সালের জেমস বন্ড সিরিজের দ্য ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন গান সিনেমার শুটিং হয়েছিল এখানকার একটি দ্বীপে। তাই দ্বীপটির নাম রাখা হয়েছে ‘জেমস বন্ড আইল্যান্ড’। ফুকেট গেলে সেই স্থানটিও ঘুরে আসা যায়। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক থাইল্যান্ডের পূর্ব-উপকূলে থাইল্যান্ড উপমহাসাগর ও পশ্চিমে আন্দামান সাগর।

থাইল্যান্ড ভ্রমণ করার কিছু টিপস

শুধু উপমহাদেশেই নয় সমস্ত পৃথিবী থেকে থাইল্যান্ডে বেড়াতে আসেন অসংখ্য পর্যটক, দর্শনার্থী। প্রাকৃতিক রূপ লাবণ্যে ভরা থাইল্যান্ডে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যা আগত দর্শনার্থীদের ব্যাপক আনন্দ দেয়। গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীতকালের তিনটি ঋতুতে সারা বছর পার হয়ে যায়। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এ দেশের সমুদ্রসৈকত, ভূদৃশ্য ও সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সমৃদ্ধ থাইল্যান্ড বিশ্বের পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। যারা থাইল্যান্ড ভ্রমণ করার প্ল্যান করেছেন তাদের জন্য কিছু টিপস :

১।  জার্নি শুরু করার ২/১ দিন আগেই বাংলাদেশ থেকে অল্প কিছু থাই বাত নিয়ে নিবেন! এয়ারপোর্ট থেকে ডলার না ভাঙিয়ে বাইরে ভাঙালে দাম বেশি পাওয়া যায়। এয়ারপোর্টের স্ক্রিনে আপনার ফ্লাইট টাইম বারবার ভালো করে চেক করে নিন! আর ইমিগ্রেশন ফেইস করার সময় অবশ্যই কনফিডেন্ট থাকবেন।

২। আপনার ফোনের প্লে স্টোর কিংবা এপল স্টোর থেকে Wifi Master Key নামের একটা এপ্স আছে সেটা ইন্সটল করে নিন, অনেক সময় এয়ারপোর্টে সরাসরি WiFi কাজ করে না তাই ফোনে সিম না থাকলেও এটা দিয়ে Internet কানেক্ট করতে পারবেন।

৩। যদি টিকেটের কোন অফার না থাকে তাহলে BKK এয়ারপোর্ট হয়ে না গিয়ে ডন মুয়াং এয়ারপোর্ট হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে ফ্লাইট ফেয়ার কমে পাবেন।

৪। এয়ারপোর্টে নেমে এয়ারপোর্ট স্ট্যান্ড থেকে গাড়ি ঠিক করবেন না। তাহলে, নির্ঘাত ধরা খাবেন। আগে থেকেই আপনার ফোনে ‘Grab’ এপটি ইন্সটল করে নিন। এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে সব জায়গায় ‘Grab’ ইউজ করুন। গাড়ি ভাড়া নিঃসন্দেহে অনেক সেইভ করতে পারবেন। যারা আমার মতো সলো ট্রাভেলার তারা রেটিং দেখে তারপর হোটেল বুক করবেন! রেটিং ৮ দশমিক ৫ এর নিচে হলে সেই হোটেল বুক না করাই উত্তম! রেটিং এর পাশাপাশি সার্বক্ষণিক স্ন্যাক্স সুবিধা আর ২৪/৭ রিসেপশন ওপেন থাকা হোটেল হলে আরও ভালো। যদিও হোস্টেলে কেও সারাক্ষণ খাওয়ার খাবার জন্য থাকেনা, তবুও একটা ফেসিলিটিজ থাকলে ভালো!

৫। যারা ব্যাংককে গ্র্যান্ড প্যালেস দেখতে যাবেন বলে প্ল্যান করেছেন তাদের বলবো ৫০০ বাত খরচ করে সেটা দেখার কোন মানে নাই! তার চেয়ে বেটার ১০০ বাত দিয়ে তার পাশেই ‘ওয়াট পো, গোল্ডেন মাউন্টেইন, ওয়াট অরুণ টেম্পল, ওয়াট সুতাত টেম্পল ঘুরে আসতে পারেন। তবুও কারো খরচ করতে ইচ্ছে হলে ঘুরে আসতে পারেন গ্র্যান্ড প্যালেস! ব্যাংকক আড্ডার জায়গা, এনজয়মেন্টের জায়গা! ব্যাংককের যেখানে যাবেন আপনার ভালো লাগবে! তবে, আমি ‘খাও সান রোড়ের’ প্রেমে পড়েছি! হাজার হাজার বাত খরচ করে ডিস্কোতে না গিয়ে এই একটা জায়গায় গেলে সারা রাত অনায়াসে আনন্দে, মজায়, লাফালাফি করে কাটিয়ে দেয়া যায়! তবে, যেতে হবে রাতে, ১১টা কিংবা ১২টার দিকে।

থাইল্যান্ডছবি : সংগৃহীত

৬। অনেকে না বুঝে ফ্লোটিং মার্কেট যান! ফ্লোটিং মার্কেট করে মুখে ফেনা বের করে ফেলে! আসলে ফ্লোটিং মার্কেট আহামরি তেমন কিছুই না! পুরা ব্যাংককে অনেকগুলো ফ্লোটিং মার্কেট আছে, যদি একান্তই দেখতে ইচ্ছে হয় তাহলে আপনার কাছাকাছি যেটা আছে সেটাতে গিয়ে ঘুরে আসুন।

৭।বারের জন্য ব্যাংকক সেরার সেরা! স্পেশালি স্ট্রিট ফুড এবং ফ্রুটস এর জন্য! স্যাপ, ব্যাঙ, বিচ্ছু থেকে শুরু করে কত হাজার রকমের যে খাবার আছে তার নাই পরিসীমা! ও হ্যাঁ ব্যাংককের ডাব টা খেতে ভুলবেন না! আমার কাছে ব্যাংককে ঘুরাঘুরির চেয়ে খাবারগুলো বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়েছে! যত পারেন খাবারের টেস্ট নেয়ার চেষ্টা করবেন তাহলে ট্রিপটা আরো বেশি স্মৃতিময় হয়ে থাকবে!

৮। আগেই বলেছি ঘুরাঘুরির জন্য গ্র্যাব ইউজ করবেন! তবে, ব্যাংককে প্রচুর টুকটুক আছে! যদি একান্তই টুকটুকে উঠতে হয় তাহলে ভালো করে দামাদামি করে উঠবেন আর গুগল ম্যাপ অবশ্যই চালু রাখবেন! টুকটুক ওয়ালারা এক জায়গার কথা বলে আরেক জায়গায় নামিয়ে দেয়! আর ভুলেও তাদের রিকমেন্ড করা কোন ট্যুর প্যাকেজ কিংবা এমিউজমেন্ট প্যাকেজ কিনবেননা, তাহলে সেই লেভেলের ধরা খাবেন।

৯। ব্যাংককের রিভার ক্রুজটা কারোই মিস করা উচিত না! সাথে থাই বিখ্যাত খাবার পাডতাই! এই পাডতাই এর জন্য মানুষ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে! যত পারেন হাঁটার চেষ্টা করবেন তাহলে অনেক কিছুই চোখে পড়বে তখন। ফ্লোটিং মার্কেটের নদী হয়ে ছোট্ট ডিঙি নৌকা করে ঘুরার একটা প্যাকেজ আছে প্রতিজন ১৫০/২০০ বাত নিবে! একদম ছোট্ট নদীর গা ঘেঁষে কোলাহল মুক্ত শহর ছেড়ে গহীন এক জঙ্গলে ঢুকে পড়ছে আপনার নৌকা, ব্যাপারটা আসলেই অন্য রকম অনুভূতির!

১০। শপিং এর জন্য ব্যাংককে শপিং মলের অভাব নেই! এমবিকে, রবিনসন, টার্মিনাল টুয়েন্টি ওয়ান, সিয়াম ডিসকভারি সহ আরো অনেক! তবে যারা কম বাজেটে শপিং করতে চান তাদের জন্য চাতুচাক উইকেন্ড মার্কেট বেস্ট!

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

Like Us On Facebook

Facebook Pagelike Widget
© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com