ঢাকাতে থাই দূতাবাসের হয়ে ভিসা আবেদন জমা নেয় VFS Global । ওদের বর্তমান অফিস গুলশান বিএনপি কার্যালয়ের কাছে। বিস্তারিত তথ্য VFS Global থেকেই জানতে পারবেন।
আমি ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস যোগ করছি যেগুলোর জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি না নেওয়ার কারণে আমার কিছু ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল।
প্রথমত নিচের কাগজপত্র গুলো লাগবে:
১। এপ্লিকেশন ফর্ম পূরণ করে প্রিন্ট করে নিন। ফর্মের ২ জায়গায় স্বাক্ষর দিতে হয় – একটু খেয়াল করলেই খুঁজে পাবেন।
২। অফিস থেকে একটা নো অবজেকশন সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা করে ফেলুন – আপনার নাম, পদবী, পাসপোর্ট নাম্বার এবং কবে থেকে কবে ছুটিতে থাকবেন এই তথ্যগুলি থাকতে হবে।
৩। আপনার একটা পার্সোনাল লেটার – যেখানে আপনি বলবেন যে আপনি ঘুরতে যেতে চান, ঘুরতে যাওয়ার তারিখ সহ। আপনি যদি আপনার পরিবারকে সাথে নিতে চান তাহলে তাদের পাসপোর্ট এর নাম্বার আর নাম সহ বলবেন যে তাদের খরচ আপনি বহন করবেন।
৪। শেষ ছয় মাসের ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট। ব্যাংক এর সিল অথবা স্বাক্ষর ছাড়া ওরা গ্রহণ করে না – ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং থেকে ডাউনলোড করলেও ব্যাঙ্ক থেকে সিল এবং স্বাক্ষর নিয়ে নিন। একা গেলে ৬০,০০০ আর পরিবারসহ গেলে ১,২০,০০০ টাকা ন্যূনতম ব্যাল্যান্স থাকা লাগবে।
৫। ব্যাঙ্ক সলভেন্সি সার্টিফিকেট অবশ্যই লাগবে, শুধু ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টে হবে না – আপনার ব্যাঙ্ক একাউন্টটি কত দিনের পুরনো এটা ওরা দেখে। আমি কোথাও দেখিনি, কিন্তু শুনেছি যে, কমপক্ষে ছয় মাসের পুরনো ব্যাঙ্ক একাউন্ট না থাকলে নাকি ভিসা দেয় না।
৬। উড়োজাহাজের বুকিং, রিটার্ন সহ। ভিসা পাওয়ার আগেই টিকিট কাটার প্রয়োজন নেই।
৭। সাদা অথবা হাল্কা ব্যাকগ্রাউন্ড এ তোলা ছবি। সাইজ ৩.৫ x ৪.৫ সেন্টিমিটার হতে হবে। ছবি লাগবে ২ টি – একটা আঠা দিয়ে লাগাতে হবে আরেকটা স্টাপল করে তার উপরে। দাঁত দেখা গেলে সেই ছবি ওরা নিতে চায় না – সুতরাং গম্ভীর হয়ে ছবি তুলতে হবে (হাস্যকর শোনালেও সত্যি)।
৮। পাসপোর্ট এর ডাটা পেজ এর ফটোকপি।
৯। আগে থাই ভিসা থাকলে তার ফটোকপি (এবং সেই পাসপোর্ট টি)।
১০। আপনার সাথে যারা যাচ্ছেন তাদের কেউ ছাত্র/ছাত্রী হলে (মানে আপনার পুত্র/কন্যা অথবা স্ত্রী), তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে দেয়া আইডি কার্ডের ফটোকপি দিতে হবে।
১১। আপনি যতজন লোকের খরচ বহন করবেন সবার জন্যই সব কাগজের ফটোকপি নিয়ে যেতে হবে। ধরুন আপনার সাথে আপনার এক মাস বয়সের বাচ্চা যাবে। তার জন্যও সব কাগজের একটা করে ফটোকপি জমা দিতে হবে (যেমন – ব্যাঙ্ক সলভেন্সি সার্টিফিকেট, ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট, উড়োজাহাজের রিটার্ন বুকিং টিকেট ইত্যাদি)।
দ্বিতীয়ত:
১। সিঙ্গেল এন্ট্রি টুরিস্ট ভিসার জন্য প্রত্যেককে সর্বমোট ৩৪৪০/- টাকা করে জমা দিতে হয়। আপনি কয়টি এপ্লিকেশন জমা দিচ্ছেন সেটা হিসাব করে ভাংতি টাকা নিয়ে যাবেন – ওখানে একটা কাগজ সেটে দিয়েছে যেখানে লেখা যে ওরা কোন ভাংতি টাকা ফেরত দিবে না!
২। রবি থেকে বৃহস্পতি ৮:৩০ টা থেকে ১২:০০ টার ভেতর ওদের ওখানে ঢুকে পড়তে হবে। অন্যের পাসপোর্ট ও আপনি জমা দিতে পারবেন – শুধু তার কাছ থেকে একটা অথরাইজেশন লেটার নিতে হবে আর আপনার আইডিটা সাথে রাখবেন।
৩। কাগজপত্র নিরীক্ষণের পর, টাকা জমা দিতে হবে(এক তলায়), এরপর সেই টাকার রিসিপ্ট নিয়ে পাসপোর্ট জমা দিতে হবে(দোতলায়)। ওটা পাসপোর্ট ফেরত নেওয়ার সময় দেখাতে হবে। ওখানে সবাই বেশ সাহায্য করে – সব কাগজ ঠিকমত নিয়ে গেলে সহজেই জমা দিতে পারবেন। এরপর সাধারণত তিন কার্যদিবস পরে আপনার পাসপোর্টটি ফেরত পেয়ে যাবেন।
৪। ফর্ম জমা দেওয়ার একদিন পর আমাকে থাই দূতাবাস থেকে ফোন দিয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্ন করেছিল। সুতরাং কদিন ফোনের দিকে চোখ রাখলে ভাল হয়।
থাইল্যান্ড এ যাবার জন্য প্রস্তুতিটা তাহলে এখুনি নিয়ে ফেলুন!
পুনশ্চ:
যদিও ভিসা ফি তিন মাসের কথা বলে নিয়েছে, একদম নিচে লেখে দিয়েছে যে আমি মাত্র ৮ দিন থাকতে পারব। একটা ঘর ছিল “Duration of proposed stay” – আমি সেখানে ৮ দিন লিখেছিলাম। অন্য একজন ১৪ দিন লিখে, ১৪ দিন পেয়েছে, যদিও আমরা একই টিকেট বুকিং জমা দিয়েছিলাম। সুতরাং ২/১ দিন বাড়িয়ে লেখাই মনে হয়ে ভাল।