শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ ও চারিদিকে ব্যস্ত শহরের উচু উচু বিল্ডিং অভিশ্রান্ত বাড়তে থাকা গাড়ির হর্ন থেকে একটু মুক্তি পেতে ইচ্ছা থাকলে অবশ্যই একটা জায়গার কথা মনে পড়ে যায় সেটি হলো তিব্বত। এটি মূলত বৌদ্ধ এবং বন ধর্মের মানুষের অঞ্চল। বর্তমানে পৃথিবীর সবথেকে উঁচু স্থানে অবস্থিত প্রাসাদে টা তিব্বতের রাজধানী লাসার মধ্যে অবস্থিত। বৌদ্ধ ধর্মগুরু দলাই লামার একসময়ের এই প্রাসাদটি তার শীতকালের বাসস্থান ছিল। এখন প্রাসাদ টির নাম পোটলা পেলেস।
চায়নার একটা স্বশাসিত অঞ্চল এখনই তিব্বত। দেশের চারিদিকে যদি নজর রাখেন তবে দেখতে পারবেন আশেপাশের সব জায়গাতেই ঢেউ খেলানো উঁচু-নিচু পাহাড় পর্বত। তাইতো হিমালয়ের কিছুটা পার্ট তিব্বতে থাকায় এবং এর উঁচু উঁচু শৃঙ্গ গুলোর জন্য অনেকেই এর ছদ্মনাম দিয়েছেন পৃথিবীর ছাদ। সেই প্রাচীন কালের বৌদ্ধ ধর্মের একেবারে উৎস স্থল ছিলো তিব্বত। সেখানকার বৌদ্ধ ধর্মগুরু, স্তূপ এবং শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ অনেক আধ্যাত্মিক এবং শান্তিপ্রিয় মানুষকে টেনে নিয়ে যায় এই জায়গায়। তো চলুন জেনে নিই তিব্বত সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য যা হয়তো আপনি জানেন না।
চীনের একটা অংশ বা বলতে পারেন একটা অঞ্চল এই তিব্বত। এর চারিদিকে ভারত, নেপাল, ভুটান এবং উত্তর-পূর্ব দিকে সেন্ট্রাল চায়না রয়েছে। তিব্বত সাধারণত দুই ভাগে বিভক্ত। যার দুটো অঞ্চল ছিল, হ্রদ অঞ্চলএবং নদী অঞ্চল। পৃথিবীর সবথেকে উঁচু শৃঙ্গ টা নেপাল এবং তিব্বতের সীমানাতেই রয়েছে। যার নাম মাউন্ট এভারেস্ট। যার উচ্চতা 8848 মিটার। যার ফলে পাহাড় পর্বত অঞ্চল বেশি থাকায় আবহাওয়া মনোরম।
বৌদ্ধ ধর্ম তিব্বতের প্রধান ধর্ম, তবে খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মের মানুষও তিব্বতে আছে। তিব্বতে তিব্বতীয় বৌদ্ধধর্ম এবং বন এটা দুই প্রধান ধর্ম। তিব্বতীয় বৌদ্ধ ধর্ম মতে পূর্ব ভারত থেকে আসা সংস্কৃত, বৌদ্ধ সংস্কৃতির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে মহাযান এবং বজ্রযান নামের বৌদ্ধ ধর্মের দুটি শাখা থেকে। 1959 সালের তিব্বতের 14 তম দলাই লামার সাথে চীন সরকারের মতের পার্থক্য দেখা দিলে তাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। পরে চীনের সরকার নিজেদের থেকেই সেখানে পাঞ্চেন লামা নামে দালাইলামার উত্তরাধিকারী হিসেবে একজনকে আসনে বসিয়ে দেয়।
তিব্বতের এলে ইয়াকের নাম আসবে না এমনটা হয় না। ইয়াকের দুধ, ইরাকের মাংস এমনকি ইরাকের পশম থেকে তৈরি গরম কাপড় তিব্বতে নিয়মিত ভাবে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া তিব্বতের মন্দিরগুলোতে ইরাকের দুধের তৈরি মাখনের গন্ধ সব সময় পাওয়া যায়। তাই বলতে পারেন ইয়াক তিব্বতের মানুষের জীবন যাত্রার বিশেষ মাধ্যম।
পৃথিবীর 46 শতাংশ জনসংখ্যা কোন না কোনভাবে তিব্বতের থেকে উৎপন্ন অথবা তিব্বতের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর উপরে নির্ভর। তাই তিব্বতের ইংরেজিতে আরও একটা ছদ্ম নাম আছে, তার নাম থার্ড পোল। কারণ তিব্বতে প্রচুর পরিমাণ বরফ এবং জল দেখা যায়।
পর্বতারোহীদের কাছে স্বর্গরাজ্যে এই পাহাড় পর্বত গুলোকে দেখতে সুন্দর লাগে বটে তবে জানেন কি সেই পাহাড় পর্বতের উঁচুতে উঠতে গেলে অক্সিজেন কমে যায়। এমনটা অনুভব হয় প্রত্যেকেরই। স্বাভাবিকের থেকে 40 শতাংশ অক্সিজেন কম থাকে তিব্বতের এইসব অঞ্চলে। তাই ঘুরতে গেলে শরীর সুস্থ রাখাটা দরকার।
এই একবিংশ শতাব্দীতেও তিব্বতের মানুষ অদ্ভূত রীতিনীতির উপরে নির্ভর করে। তিব্বতে মানুষের মৃতদেহ কে কবর বা নষ্ট না করে সে দেহটাকে কোনো উঁচু পাহাড়ের উপর রেখে দেওয়া হয়। সেখানে শকুন বা কোন মাংস খাদক প্রাণী সেগুলো কি খেয়ে নেয়। এখানকার বৌদ্ধ ধর্মের মানুষের মধ্যে পুনর্জন্মের একটা বিশ্বাস আছে। তাছাড়া এমনিতে দেখতে গেলে পাহাড় পর্বতে ভরা অঞ্চলের কবর দেওয়ার জায়গা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তাই এখানকার মানুষ এই পদ্ধতি কে মেনে নিতে কোন অসুবিধা হয় নি।
তিব্বতে পর্যটক গাড়ি গুলোর উপরে সরকার নজর রাখে। সেখানে ক্যামেরা লাগানো থাকে। তাই গাড়ি উল্লিখিত স্পিডের থেকে বেশি চললে অথবা সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কাজে কোন ভাবে লিপ্ত হলে রেডিওর মাধ্যমে সেখানে সাবধানতা দেওয়া হয়। এমনকি রাস্তায় কোথায় কেমন ভাবে চলতে হবে তারও নির্দেশ এই রেডিওর মাধ্যমে দেওয়া হয়ে থাকে। তাই সরকারের চোখে পর্যটকেরা সবসময় থাকে।
আর তিব্বতে গেলে ঘোরার জায়গার অভাব তো হবেই না বরং বারেবারে আসার ইচ্ছেটা প্রত্যেকেই থাকবে।
Like this:
Like Loading...