বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৫৪ পূর্বাহ্ন

তারুণ্যের ভবিষ্যৎ ভাবনায় স্বদেশ-বিদেশ

  • আপডেট সময় সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৩

বাংলাদেশের শতকরা ৪২ ভাগেরও বেশি তরুণ-তরুণী দেশের বাইরে চলে যেতে চান। আবার ৭০ ভাগের বেশি তরুণ মনে করেন, দেশেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব।

এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন অনেক তথ্য।

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস (সিপিজে)-এর সহযোগিতায় বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি)-এর করা ‘ইয়ুথ ম্যাটার্স সার্ভে ২০২৩’ শীর্ষক জরিপে আরো অনেক তথ্য উঠে এসেছে। তবে এই জরিপের গবেষকরা বলছেন, জরিপে ইতিবাচক চিত্রও পাওয়া গেছে। ৭০ ভাগের বেশি তরুণ মনে করেন এই দেশেই তাদের ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। তরুণদের একটি অংশ দেশের বাইরে চলে যেতে চাইলেও শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ যে দেশেই থাকতে চান সেটাও একটা ইতিবাচক দিক বলে তারা মনে করেন।

দেশের সব বিভাগকে এই জরিপের আওতায় আনা হয়েছে। ১৬-৩৫ বছর বয়সি পাঁচ হাজার ৬০৯ জন অংশগ্রহণকারীর ওপর ফেসবুকের মাধ্যমে তারা এই জরিপ চালায়।

জরিপে অংশ নেয়া ৬৮.৬ শতাংশ তরুণ-তরুণী মনে করেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা কর্মসংস্থান বা ব্যবসায়িক উদ্যোগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে সহায়ক নয়।

উত্তরদাতাদের ৫৫ শতাংশ মনে করেন, বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ দেশ নয়। ৫৭ শতাংশ মনে করেন, গত পাঁচ বছরে দেশে বিচার ব্যবস্থার অবনতি হয়েছে।

৮৮.৮ শতাংশ তরুল-তরুণী দুর্নীতিকে দেশের উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। আর ৬৭.৩ শতাংশ বেকারত্বকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করছেন।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫০.৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক সংকটকে প্রধান এই সময়ের চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

৬১.৮ শতাংশ উত্তরদাতার মতে, তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মূল্যস্ফীতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

৭৩.৪ শতাংশ জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের মুখোমুখি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

জরিপে দেখা যায় ৭১.৫ শতাংশ তরুণ-তরুণী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মতো পাবলিক প্ল্যাটফর্মে মত প্রকাশকে অনিরাপদ মনে করেন।  আর ১৮ বছরের বেশি যাদের বয়স, তাদের ৭২ শতাংশ তরুণ-তরুণী আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

ফলে জরিপে অংশ নেয়া ৪২.৪ শতাংশ তরুণ-তরুণী বিদেশে যেতে চান এবং যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

জরিপের প্রধান গবেষক হোসেন মোহাম্মদ ওমর খাইয়ুম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ” তরুণদের মধ্যে যে বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা, তার কারণ পুরো জরিপেই প্রতিফলিত হয়েছে। তারা নিরাপত্তা, পেশাগত ও আর্থিক উন্নয়নকে বিবেচনায় নিয়েছেন।”

তিনি বলেন, “তারা গণতন্ত্রের যে অবনতি, তা বিবেচনা করেছেন। মত প্রকাশের স্বাধীনতা, অনিশ্চয়তা, বেকারত্ব, দুর্নীতি, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং সার্বিকভাবে কাজ ও প্রফেশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্টের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে দেশের বাইরে যেতে চান তারা।”

তবে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের গবেষণা পরিচালক ড. এম সানজীব হোসেন বলেন, ” তাদের যেমন উদ্বেগ আছে, তেমনি তাদের দেশ নিয়ে অনেক আশাও আছে। প্রায় ৬০ ভাগ তরুণ-তরুণী তো দেশেই থাকতে চান। ৭০ ভাগের  বেশি মনে করে দেশেই তার ব্যক্তিগত উন্নতি হবে। প্রায় ৭০ ভাগ সামনের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। হতাশার জায়গা আছে। তবে আশার জায়গাও আছে।”

তার মতে, “জরিপে যেসব হতাশার জায়গা উঠে এসেছে তা  নিয়ে রাষ্ট্র ও প্রকৃত সুশীলদের কাজ করতে হবে। তরুণদের দেশ প্রেমের কোনো ঘটতি নেই। সেটা আমাদের কাজে লাগাতে হবে।”

আর শিক্ষাবিদ অধ্য্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ মনে করেন, “বাংলাদেশ যেভাবে ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ তাতে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হলেও তরুণদের দেশের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা থাকবে। এটা বন্ধ হবে না। পৃথিবীর গড় জন ঘনত্বে ২৪ গুণ বেশি  ঘনত্ব বাংলাদেশে। পাশের দেশেও এই প্রবণতা ব্য্যপক। তবে তারা দেশের বাইরে গেলেও যেন দেশের জন্য কাজ করেন সেই দেশপ্রেমের শিক্ষা দিতে হবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় তা নেই, উন্নত দেশে তা আছে।”

তিনি বলেন, “মানুষের মথ্যে উন্নত জীবনের আকাঙ্খা আছে। তারা ভালো থাকতে চায়, ভালো পরিবেশ চায়।  বাংলাদেশে এর অভাব আছে। এখন  আবার রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। ফলে বিদেশে যেতে চাওয়ার অনেক কারণও আছে। এটা সব সময় যে খারাপ তাও নয়। আবার এর মাধ্যমে মেধা পাচারও হয়। কিন্তু যেখানেই তারা থাকুক দেশের জন্য কাজ করলে তা দেশের ইতিবাচক।”

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

Like Us On Facebook

Facebook Pagelike Widget
© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com
%d bloggers like this: