শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:০৯ অপরাহ্ন
Uncategorized

তাজমহল: কালজয়ী প্রেমের এক অপূর্ব নিদর্শন

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই, ২০২১

তাজমহলের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে। প্রায় ২১ বছর ২০,০০০ শ্রমিকের নিরলস প্রচেষ্টায় ১৬৫৩ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছিল। যদিও মূল  কাঠামো নির্মাণ করতে মাত্র ১০ বছর সময় লেগেছিল। বাকি এক যুগ ব্যয় হয়েছিল মার্বেল পাথরের কাজ এবং তাজমহল কমপ্লেক্সের অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করতে।সৌধটির নকশা কে করেছিলেন এ প্রশ্নে অনেক বিতর্ক থাকলেও, একটি কথা পরিষ্কার যে শিল্প-নৈপুণ্যসম্পন্ন একদল নকশাকার ও কারিগর সৌধটি নির্মাণ করেছিলেন। অনেকে ওস্তাদ ঈসা সিরাজিকে তাজমহলের প্রধান স্থপতি হিসেবে দাবি করেছেন। বলা হয় ঈসা সিরাজি তার স্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য একটি ভাস্কর্য বানিয়েছিলেন। সেটি দেখে সম্রাট শাহজাহানের পছন্দ হয় এবং তার আদলেই তৈরি করেন তাজমহল। তবে ইতিহাস গবেষকদের দেয়া মতামতের ভিত্তিতে নকশাকার হিসেবে উস্তাদ আহমেদ লাহুরী এগিয়ে আছেন। তাজমহলের বিশাল গম্বুজটির স্থপতি ছিলেন অটোম্যান গম্বুজ বিশেষজ্ঞ ইসমাইল ইফেন্দি

তাজমহলের ভিতরের দিক
তাজমহলের ভিতরের দিক

তাজমহল তৈরি হয়েছে এশিয়ার বিভিন্ন স্থান থেকে আনা বিভিন্ন দামী রত্ন ও পাথর দিয়ে। এসব নির্মাণ সামগ্রী বহন করে আনার জন্য ১,০০০ এরও বেশি হাতি ব্যবহার করা হয়েছিল। তাজমহলের দেয়ালে আটাশ মতান্তরে উনত্রিশ ধরনের মহামূল্যবান পাথর সাদা মার্বেল পাথরের উপর বসানো রয়েছে। তাজমহলের ভেতর ও বাহিরের চমৎকার কাজ আছে। মমতাজ মহলের সমাধি ক্ষেত্রেও তাঁর পরিচিতি ও প্রশংসার শিলালিপি দেখা যায়। মমতাজ মহলের সমাধিক্ষেত্রের একপাশে আল্লাহর ৯৯ নাম ক্যালিগ্রাফিক শিলালিপিতে অঙ্কিত আছে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে সূক্ষ্ম কারুকাজের মাধ্যমে মহলটিকে করা হয়েছে সৌন্দর্য মণ্ডিত। মহলের সামনেই রয়েছে দৃষ্টি নন্দন উদ্যান। অনেকে মনে করেন এই উদ্যানের নকশা করা হয়েছিল কুরআনে বর্ণিত জান্নাতের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে।

তাজমহল সম্পর্কে একটি প্রচলিত মিথ হচ্ছে- নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে সম্রাট শাহজাহান প্রতিটা শ্রমিকের হাতের কব্জি কেটে ফেলার নির্দেশ দেন যাতে কেউ দ্বিতীয় তাজমহল তৈরি করতে না পারে। তবে এর কোন বাস্তব ভিত্তি পাওয়া যায়নি। পৃথিবীর অনেক স্থাপত্যকে ঘিরে এমন মিথ প্রচলিত রয়েছে। আরেকটি মিথ হচ্ছে- সম্রাট শাহজাহান কালো মার্বেল দিয়ে তাজমহলের মতোই আরেকটি সমাধি এর বিপরীতে অর্থাৎ নদীর অন্য প্রান্তে নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন । কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় সেটি আর সম্ভব হয়নি।

পড়ন্ত বিকালে সোনালী আলোয় তাজমহল
পড়ন্ত বিকালে সোনালী আলোয় তাজমহল

ঢোকার সময় মূল আঙিনায় তাজমহলকে বিশাল মনে হয়। এই বিশালতা মুগ্ধ করার মতো। এছাড়া তাজমহলের চারটি মিনার বাইরের দিকে একটু হেলানো হওয়ার পরও দেখলে মনে হয় যেন একদম সোজা। তাজমহল থেকে বের হওয়ার সময় প্রধান ফটক দিয়ে তাকালে মনে হয় এটি যেন ক্রমে ক্রমে বড় হচ্ছে। তাজমহলের মূল সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় বাইরে থেকে। সাদা মার্বেল পাথরের দ্বারা নির্মিত হওয়ায় সূর্যের গতি পরিবর্তনের সাথে সাথে এর রংও বদলায়। একেক সময় ধারণ করে একেক রূপ। এই পরিবর্তনই যেন এর ধর্ম। তাজমহলের পূর্ণিমা রাতের দৃশ্য সব থেকে আকর্ষণীয়। চাঁদের আলোয় যেন ঝলমল করে ওঠে এই নান্দনিক স্থাপত্য।

তাজমহলকে মুঘল স্থাপত্যশৈলীর একটি আকর্ষণীয় নিদর্শন হিসেবে মনে করা হয়, যার নির্মাণশৈলীতে পারস্য, তুরস্ক, ভারতীয় এবং ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। এটি ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম একটি হল এই তাজমহল। তালিকাভূক্তিত সময় একে বলা হয়েছিল “Universally admired masterpiece of the world’s heritage”।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com