একসময় রেস্টুরেন্ট মানে কেবল খাবারের জায়গা হিসেবে মনে করা হত। কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে, কেবল খাবারের জায়গাই নয়, বরং পরিবেশ, ডেকর ও অন্যান্য আরো বেশ কিছু বিষয় চিন্তা করে ফুডপ্রেমীরা রেস্টুরেন্ট বাছাই করেন। গতানুগতিক স্টাইলের বাইরে একটু ভিন্নধর্মী রেস্টুরেন্টগুলোর গল্প নিয়ে তৈরি এই প্রতিবেদনটি।
লোকসঙ্গীত ও লাইভ মিউজিক উপভোগ করতে করতে যান্ত্রিক এই শহরে একটুখানি অবসর পাবার এক অতুলনীয় জায়গার নাম “যাত্রা বিরতি” । রাজধানীর বনানীতে যাত্রা শোরুমের ওপরে গড়ে উঠেছে এ রেস্টুরেন্টি । মূলত গতানুগতিক রেস্টুরেন্ট না বলে এটি কে বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার এক অসাধারণ উদাহরণ বলা যায়।
এখানে বসার চেয়ার টেবিল, পরিবেশনের পাত্র, দেয়ালে আকা ছবি, ভেতরের গাছগাছালি, লাইটিং, সবখানে রয়েছে বাঙালিয়ানার ছাপ। বেশ সুসজ্জিতএ রেস্টুরেন্টি যাত্রা শোরুমের একদম উপরের ফ্লোরে ও ছাদ নিয়ে তৈরি। ব্যস্ত এ শহরের মাঝে একটুখানি বাঙালির স্বস্তির জায়গা হিসেবে যাত্রা বিরতির সত্যিই কোন তুলনা নেই।
এছাড়া এখানকার খাবারে ভেজিটেরিয়ান খাবারের প্রাধান্য বেশি। সব খাবারই এখানে একদম দেশীয়। চা, ফুচকা খেতে খেতে এখানে উপভোগ করা যাবে লাইভ মিউজিক শো এর। রঙিন এ রেস্টুরেন্টটিতে সব সময়েই লোকসঙ্গীত উপভোগ করা যাবে। বন্ধু বান্ধব, পরিবার পরিজন নিয়ে সময় কাটানোর জন্যে অসাধারণ একটি জায়গা এটি।
বাংলায় অজো শব্দটার সঙ্গে আমরা কম বা বেশি সবাই পরিচিত। অজো যা এসেছে অজোপাড়া গাঁ থেকে। ধানমন্ডির অজোর বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অজো কে নতুন করে গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে উত্তরার বুকে গড়ে উঠেছে নতুন করে অজো আইডিয়া স্পেস।
এখানকার ইন্টেরিয়র অন্যান্য রেস্টুরেন্টগুলোর থেকে সত্যিই একটু ভিন্নধরনের। গতানুগতিক রেস্টুরেন্টগুলোর মত নয়, বরং এ রেস্টুরেন্টি আধুনিক আর্কিটেকচারের এক অনন্য উদাহরণ। পুরো জায়গাটি তৈরি করা হয়েছে একটি ছাদের ওপর ভিত্তি করে। ডিজাইন অনেকটাই প্যাভিলিয়নের মত।
বাইরের প্রকৃত আলো, বাতাস ও গাছের এক অসাধারণ মিশেলে তৈরি রেস্টুরেন্টি। এখানকার বসার জায়গা, ডেকোরেশন, জানালা — সব কিছুতেই পাবে নতুনত্বের ছোঁয়া।
খাবারের মধ্যে এখানে রয়েছে সালাদ, চিকেন, বিফ, রাইস, স্যুপ, স্নাকস, চা, কফি — বলতে গেলে সব কিছুই। ব্যস্ত শহর থেকে একটু অবসর পাবার ও মনকে চাঙ্গা করার জন্যে এক চমৎকার জায়গা অজো আইডিয়া স্পেস।
ভেলোসিটি
কেমন হবে যদি কোথাও খেতে গেলে এবং দেখলে খাবারের মেন্যুতে খাবারের নাম এল ক্লাসিকো কিংবা রেসল মেনিয়া দেয়া ? খেলাপ্রেমী সব মানুষদের জন্যে সাজানো এ রেস্টুরেন্ট টি আলোচিত হয়েছে এদের অসাধারণ খেলা কেন্দ্রিক ইন্টেরিয়র এর জন্যে। এখানে রয়েছে ফ্রেম দিয়ে সাজানো স্যার এলেক্স ফার্গুসন, রায়ান গিগস ও ক্যান্টোনা
এখানে রয়েছে একটি বড় টিভি স্ক্রিন যেখানে সব সময় লাইভ খেলা চলতে থাকে। এ রেস্টুরেন্টটিকে দেশের প্রথম স্পোর্টস বার বা লাউঞ্জ বলা হয়ে থাকে। চমৎকার ডেকোরেশনের পাশাপাশি এখানে কাস্টমারদের খেলার জন্যে রয়েছে ফুসবল টেবিল যা এখানকার থিমের সৌন্দর্য কে আরও বহুল অংশে বাড়িয়ে দেয়।
এখানে খাবারের মধ্যে আছে টাকো, বুরিতো, ফাহিতাস, পিজ্জা ও মকটেলস। এছাড়া বিভিন্ন সেট মেন্যু তো আছেই। তো তুমি যদি একজন খেলাপ্রেমী হয়ে থাকো তাহলে অবশ্যই ভেলোসিটি রেস্টুরেন্টটি একবার হলেও ঘুরে আসবে। বন্ধু বান্ধব ও পরিবার পরিজন নিয়ে এখানকার সুস্বাদু ও সুলভ মূল্যের পিজ্জা ও মেক্সিকান খেতে খেতে উপভোগ করতে পারো লাইভ সব ম্যাচ।
ঢালিউডের সিনেমা, ঢাকার রিক্সা আর্ট এবং পুরান ঢাকার খাবারের সংমিশ্রনে গড়ে উঠেছে অসাধারণ এ রেস্টুরেন্ট যার নাম চাপ সামলাও।
চাপ সামলাও এর ভিতরে প্রথমেই যা চোখে পড়বে তা হল এখানকার ঢালিউডের সিনেমার পোস্টার । মোটামুটি সব পোস্টার গুলোই ঢাকার বিখ্যাত রিক্সা আর্ট দিয়ে করা। পোস্টার ও ছবি গুলো যেন তোমাকে পুরোনো ঢালিউডের সিনেমার জগতে নিয়ে যাবে । এখানে বাংলা সিনেমার বেশ কিছু বিখ্যাত ডায়লোগের ও দেখা মিলবে (ছেড়ে দে শয়তান, তোর ঘরে কি মা বোন নেই” টাইপের) । এছাড়া এখানকার খাবারে তুমি পাবে পুরান ঢাকার আমেজ। এখানে চেয়ার টেবিলেও দেখা পাবে রিক্সা আর্টের।
চমৎকার চা এর পাশাপাশি এখানে পাবে বিভিন্ন ধরনের চাপ, লুচি, কাবাব ও বাংলা সিনেমার বিখ্যাত নায়কের নামকরণে জসিম স্যুপ । এখানে খাবারের দামও বেশ নাগালের মধ্যে । মোটামুটি ছোট পরিসরের এ রেস্টুরেন্ট টি পরিবার পরিজন ও বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার জন্যে বেশ ভাল একটি জায়গা। বর্তমানে ঢাকায় চাপ সামলাও এর ৪ টি আউটলেট রয়েছে আর তা হলঃ বনানী, উত্তরা সেক্টর ১৩, খিলগাঁও ও ধানমন্ডি।
শহরের কোলাহল থেকে একটু অবসর ও গ্রামের নিরিবিলি স্নিগ্ধ পরিবেশের অনুভব পেতে রাজধানীর উত্তরার সেক্টর ৭ এ গড়ে উঠেছে ট্রুভাইল নামের শান্ত পরিবেশের রেস্টুরেন্ট টি।
ভেতরে ঢুকার সাথে সাথেই যা প্রথমেই তোমার নজর কাড়বে তা হল এখানকার ডেকর। পুরো রেস্টুরেন্টের জানালা, দরজা, চেয়ার, টেবিল, পরিবেশনের পাত্র,লাইটিং — সব খানেই রয়েছে ভিন্টেজ স্টাইলের নজরকাড়া আমেজ।
এছাড়া দেখা মিলবে ছোট বড় গাছগাছালির যা পুরো পরিবেশটিকে আরো বেশি স্নিগ্ধ করেছে। সাথে উপভোগ করবে এখানকার চমৎকার গানের প্লেলিস্ট।
রেস্টুরেন্টিতে আসার সাথে সাথেই তোমার মনে হবে তুমি হয়ত ফ্রান্সের কোন গ্রামে ঘুরতে এসেছ। বৃষ্টির দিনগুলোতে ট্রুভাইলের সত্যিই কোন তুলনা নেই। মনোরম এ জায়গাটি তোমার মনকে স্নিগ্ধ করবেই। সাথে পাবে এখানকার চমৎকার খাবার।
খাবারের দাম এখানে ৩৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। এখানে মূলত বিভিন্ন ধরনের সি ফুডের দেখা পাবে। চিকেন গোজা, সি ফুড স্যুপ ক্র্যাব সালাদ ও ডেসার্ট এখানে বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া মনকে আরো একটু চাঙ্গা করতে এখানে পাবে বিভিন্ন স্বাদের জুস। প্রিয়জনের সাথে চমৎকার সময় কাটানোর জন্য ঘুরে আসতে পারো মনোরম এ রেস্টুরেন্টিতে।