শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ন

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৪

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যাত্রীদের সেবা দিয়ে থাকে। বিমানবন্দরে যাত্রীদের জন্য বিভিন্ন পরিবহন ব্যবস্থা, রেস্তোরাঁ, এবং অন্যান্য সুবিধা রয়েছে যা ভ্রমণকে আরামদায়ক করে তোলে। এ ব্লগে আমরা বিমানবন্দরের পরিবহন, রেস্তোরাঁ, অন্যান্য সুবিধা এবং ফ্লাইট ক্যাটারিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

বিমানবন্দর থেকে পরিবহন ব্যবস্থা

বিমানবন্দর থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানোর জন্য নানা ধরনের পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে। যাত্রীরা তাদের সুবিধা অনুযায়ী যে কোন ব্যবস্থা বেছে নিতে পারেন:

  1. ট্যাক্সি ও রাইড-শেয়ারিং সার্ভিস
    বিমানবন্দর থেকে সহজেই ট্যাক্সি পাওয়া যায়। উবার, পাঠাও, ও শেয়ারিং রাইড সার্ভিসগুলোও যাত্রীদের জন্য উপলব্ধ। যাত্রীরা অনলাইন অ্যাপের মাধ্যমে তাদের রাইড বুক করে নিতে পারেন।
  2. বিমানবন্দর বাস সার্ভিস
    বিমানবন্দর থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বাস সার্ভিসও চালু রয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি) এর বাসগুলো যাত্রীদের জন্য একটি সাশ্রয়ী বিকল্প।
  3. রেন্টাল কার
    যাত্রীরা বিমানবন্দরে বিভিন্ন রেন্টাল কার কোম্পানি থেকে গাড়ি ভাড়া নিতে পারেন। বিশেষ করে যাদের নিজেদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে হয় এবং কমফোর্টের জন্য ব্যক্তিগত যান ব্যবহার করতে চান, তাদের জন্য এটি একটি সুবিধাজনক অপশন।
  4. শাটল সার্ভিস
    বেশ কিছু হোটেল শাটল সার্ভিস প্রদান করে থাকে। হোটেলগুলো তাদের অতিথিদের জন্য বিমানবন্দরে পিক আপ এবং ড্রপ অফ সুবিধা প্রদান করে থাকে।

রেস্তোরাঁ এবং খাবারের দোকান

বিমানবন্দরের ভেতরে এবং আশেপাশে বেশ কিছু খাবারের দোকান ও রেস্তোরাঁ রয়েছে, যেখানে যাত্রীরা স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক খাবারের স্বাদ উপভোগ করতে পারেন।

  1. কফি শপ এবং ফাস্টফুড আউটলেট
    বিমানবন্দরে বেশ কয়েকটি কফি শপ যেমন ক্যাফে নিলা, ব্লু লাউঞ্জ ক্যাফে ইত্যাদি রয়েছে। এছাড়াও ফাস্টফুড চেইন যেমন কেএফসি, বার্গার কিং ইত্যাদি এখানে পাওয়া যায়।
  2. বাংলাদেশি খাবারের রেস্তোরাঁ
    যারা স্থানীয় স্বাদ পছন্দ করেন, তারা বিমানবন্দরে বাংলাদেশি রেস্তোরাঁয় ভর্তা, ভাজি, এবং স্থানীয় খাবার উপভোগ করতে পারেন। অনেক রেস্তোরাঁ বাংলাদেশি মিষ্টি এবং দেশীয় খাবারের আয়োজন করে থাকে।
  3. ডিউটি-ফ্রি ও রেস্তোরাঁ
    বিমানবন্দরের ভেতরে ডিউটি-ফ্রি শপে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের খাবার, পানীয় এবং স্ন্যাক্স পাওয়া যায়। যাত্রীরা এখান থেকে পছন্দসই জিনিস কিনে নিতে পারেন।

অন্যান্য সুবিধা

বিমানবন্দরটিতে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক সুবিধা রয়েছে, যা যাত্রীদের ভ্রমণকে আরামদায়ক করে তোলে।

  1. লাউঞ্জ সুবিধা
    হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি এবং ব্যবসায়িক লাউঞ্জ রয়েছে, যেখানে যাত্রীরা বিশ্রাম নিতে এবং বিনামূল্যে ওয়াই-ফাই সহ বিভিন্ন সুবিধা উপভোগ করতে পারেন। বিভিন্ন লাউঞ্জে খাবার ও পানীয়ের ব্যবস্থা রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন।
  2. ওয়াই-ফাই ও চার্জিং স্টেশন
    যাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে ওয়াই-ফাই সুবিধা প্রদান করা হয়। এছাড়াও, চার্জিং স্টেশন রয়েছে, যেখানে যাত্রীরা তাদের ডিভাইস চার্জ করতে পারেন।
  3. ব্যাংকিং এবং এক্সচেঞ্জ সুবিধা
    বিমানবন্দরে বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা ও এটিএম বুথ রয়েছে। যাত্রীরা সহজেই মুদ্রা বিনিময় করতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন।
  4. মেডিকেল সেন্টার
    বিমানবন্দরে একটি মেডিকেল সেন্টার রয়েছে, যেখানে যাত্রীরা প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন। জরুরি অবস্থায়ও এই সেন্টারটি খুব কার্যকর।
  5. প্রার্থনা কক্ষ
    ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের জন্য বিমানবন্দরে আলাদা প্রার্থনা কক্ষ রয়েছে, যেখানে যাত্রীরা প্রার্থনা করতে পারেন।

ফ্লাইট ক্যাটারিং

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বেশ কয়েকটি কোম্পানি ফ্লাইট ক্যাটারিং পরিষেবা প্রদান করে। তারা যাত্রীদের জন্য খাবার প্রস্তুত করে যা বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়।

  1. বৈচিত্র্যময় মেনু
    ফ্লাইট ক্যাটারিংয়ে বিভিন্ন ধরণের খাবার সরবরাহ করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশি খাবার, ইন্টারন্যাশনাল কুইজিন, এবং হালাল খাবার। মেনুতে থাকে নাস্তা, দুপুরের খাবার, রাতের খাবার এবং ডেজার্ট।
  2. গুণমান ও স্বাস্থ্যকর খাবার
    ক্যাটারিং কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক মানের গুণমান বজায় রেখে খাবার প্রস্তুত করে। প্রতিটি খাবার তৈরি করা হয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং যাত্রীদের রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী।
  3. বিশেষ খাবারের অর্ডার
    কিছু এয়ারলাইন্সে বিশেষ ডায়েটরি প্রয়োজন (যেমন ডায়াবেটিক বা ল্যাকটোজ-ফ্রি খাবার) হলে ক্যাটারিং কোম্পানি সেগুলোও সরবরাহ করে। বিশেষ চাহিদার উপর ভিত্তি করে অর্ডার দেওয়ার সুযোগও রয়েছে।

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যাত্রীদের জন্য নানা ধরনের সুবিধা নিয়ে তৈরি হয়েছে। পরিবহন থেকে শুরু করে খাবার, লাউঞ্জ, ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বিমানবন্দরটিকে আরামদায়ক এবং আধুনিক করে তুলেছে। নতুন টার্মিনাল নির্মাণের পর বিমানবন্দরটি আরও উন্নত এবং আরামদায়ক সেবা প্রদান করতে পারবে, যা বাংলাদেশের বিমান সেবার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ঢাকা বিমানবন্দর) বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এখানে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ যাত্রী আসা-যাওয়া করেন। বিমানবন্দরের যানবাহনের চাপ, যাত্রী পরিষেবা এবং বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করা হলো:

ট্রাফিক ও যাত্রী পরিবহন

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী ও কার্গো ট্রাফিক উভয়ই ক্রমাগত বাড়ছে। যাত্রী পরিবহন ও বিমান ট্রাফিক পরিচালনায় বিমানবন্দরটি নিয়মিত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়।

  1. বছরে যাত্রী সংখ্যা
    বিমানবন্দরটি বছরে প্রায় ৮-১০ মিলিয়ন যাত্রীকে সেবা প্রদান করে থাকে। এটি বাংলাদেশের সবথেকে ব্যস্ত বিমানবন্দর এবং দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব বড় ফ্লাইট এখান থেকেই পরিচালিত হয়।
  2. বিমান ওঠানামা
    প্রতিদিন গড়ে ২০০-২৫০টি ফ্লাইট এই বিমানবন্দর থেকে পরিচালিত হয়। ফ্লাইট চলাচলের চাপ এবং যাত্রী সংখ্যার ভিত্তিতে বিমানবন্দরের নির্ধারিত রুটগুলো সময়মতো পরিচালিত হয়, যদিও কখনো কখনো অতিরিক্ত চাপের কারণে কিছু দেরি ঘটে।
  3. পিক আওয়ার ট্রাফিক
    সকাল এবং সন্ধ্যার দিকে বিমানবন্দরে অতিরিক্ত ট্রাফিক দেখা যায়। পিক আওয়ারে ইমিগ্রেশন এবং সিকিউরিটিতে লম্বা লাইন দেখা যেতে পারে, যা যাত্রীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

যাত্রী হ্যান্ডলিং

যাত্রীদের সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিমানবন্দরে বেশ কিছু আধুনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে যাত্রীর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায়, আরও উন্নত সিস্টেম এবং নতুন টার্মিনাল ৩-এর উন্নয়ন কাজে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে।

  1. ইমিগ্রেশন ও সিকিউরিটি
    বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন এবং সিকিউরিটি চেকপয়েন্ট রয়েছে, তবে যাত্রী সংখ্যা বাড়ায় এখানে লম্বা লাইন ও সময়ক্ষেপণ দেখা যায়। নতুন টার্মিনালে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়করণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা যাত্রা সহজ করবে।
  2. যাত্রী লাউঞ্জ ও অপেক্ষার সুবিধা
    বিমানবন্দরে ভিআইপি ও ব্যবসায়িক লাউঞ্জসহ বেশ কিছু সাধারণ অপেক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে, তবে বর্তমান লাউঞ্জগুলোর পরিসর তুলনামূলক ছোট। টার্মিনাল ৩ চালু হলে এখানে নতুন ও বৃহত্তর লাউঞ্জ সুবিধা পাওয়া যাবে।
  3. ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং
    পুরনো টার্মিনালে ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং অনেক সময়েই দেরিতে সম্পন্ন হয়। নতুন টার্মিনালে আধুনিক ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম সংযোজন করা হচ্ছে, যা দ্রুত ব্যাগেজ সরবরাহ নিশ্চিত করবে।

বিমানবন্দরে পরিচালিত এয়ারলাইন্সসমূহ

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ মিলিয়ে প্রায় ৩৫টিরও বেশি এয়ারলাইন্স কার্যক্রম পরিচালনা করে। প্রধান এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য হলো:

  1. আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স
    • এমিরেটস
    • কাতার এয়ারওয়েজ
    • এয়ার ইন্ডিয়া
    • সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স
    • থাই এয়ারওয়েজ
    • মালিন্দো এয়ার
    • টার্কিশ এয়ারলাইন্স
    • শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্স
    • সৌদিয়া
    • এয়ার এরাবিয়া
    • মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স
    • ওমান এয়ার
  2. বাংলাদেশি এয়ারলাইন্স
    • বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স: দেশের জাতীয় বিমান সংস্থা, যা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে পরিচালিত হয়।
    • ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স: বাংলাদেশি একটি বেসরকারি এয়ারলাইন, যা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে।
    • নভোএয়ার: বাংলাদেশের আরেকটি অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনাকারী বেসরকারি বিমান সংস্থা।

উপসংহার

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাংলাদেশের বৃহত্তম বিমানবন্দর হিসেবে অত্যন্ত ব্যস্ত এবং যাত্রী চাপ সামলানোর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপ্রাপ্ত। যাত্রী পরিবহন, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, এবং বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের কার্যক্রম কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য উন্নত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি টার্মিনাল ৩ এর কাজ সম্পন্ন হলে যাত্রীদের জন্য একটি আধুনিক ও আরামদায়ক অভিজ্ঞতা নিশ্চিত হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com