শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:৫২ অপরাহ্ন

ঢাকার সেরা ১০ স্ট্রিট ফুড

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫

‘স্ট্রিট ফুড’ বা ‘পথে পাওয়া খাবার’ শব্দের সঙ্গে কমবেশি সবাই পরিচিত। স্বাস্থ্যকর কিংবা অস্বাস্থ্যকর, এ কথা না ভেবে সবাই স্ট্রিট ফুড খান। কথায় বলে, যোগ্যতা সবারই কমবেশি থাকে- কিন্তু গ্রহণযোগ্যতা সবার থাকে না।

মানুষের মতোই ঢাকায় স্ট্রিট ফুডের হাজারো পদ থাকলেও এর মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা সবকিছুরই সমান হয় না। ভোক্তার গ্রহণযোগ্যতার বিচারে যদি ঢাকার সেরা ১০টি স্ট্রিট ফুডের সন্ধান করি- তাহলে কোন নামগুলো আসবে?

এমন প্রশ্নে উত্তর খুঁজতে কথা বলা হলো ঢাকার রাস্তার ২০জন খাবার বিক্রেতাদের সঙ্গে। ঢাকার গুলিস্তান, ফার্মগেট, মিরপুর, খিলগাঁও তালতলা, মোহাম্মদপুরসহ আরও কিছু জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুডের আঁকড়ায় খোঁজ নেওয়া হলো।

ঢাকার সেরা ১০ স্ট্রিট ফুড

কথা হলো বেশকিছু ভোক্তার সঙ্গেও। ক্রেতা-বিক্রেতার বিচারে ঢাকার সেরা ১০ স্ট্রিট ফুডের ভোট নেওয়া হলো। সেগুলোর মধ্যেই আছে ১০ স্ট্রিট ফুডের নাম, চলুন জেনে নেওয়া যাক-

চটপটি

বিকেল থেকে রাত ১০-১১টা পর্যন্ত ঢাকার পথেঘাটে চটপটির দোকান হরহামেশাই চোখে পড়ে। ঢাকার স্থানভেদে চটপটির দাম হয় ৩০-৫০টাকা। তবে নানা অনুষঙ্গ যোগ করে স্পেশালিটি এনে ১০০-১৫০ টাকারও চটপটি মিলছে। লোভনীয় স্বাদের স্পেশাল চটপটি উচ্চ থেকে নিম্ন আয়ের সবাই চেখে দেখেন। এতোই চলছে যে, চটপটি ঢাকার স্ট্রিট ফুডের মধ্যে শীর্ষে আছে।

ফুচকা

ফুচকা অতি জনপ্রিয় মুখরোচক খাদ্যবিশেষ। বিশেষ করে, তরুণীদের বেলায় এটি বেশ লোভনীয় একটি খাবার। কেন যেন- পুরুষের থেকে নারীরা ফুচকাকে একটু বেশিই ভালোবাসেন। ঢাকার অলিতে-গলিতে অগণিত ফুচকার দোকানও দেখা যায়। দোকানিদের সঙ্গে কথা বললেই জানা যাবে, মূলত নারী ক্রেতাদের টার্গেট করেই ফুচকা ব্যবসা চলে। যেখানে নারীদের আনাগোণা নেই, সেখানে ফুচকার দোকানও জমবে না। এই ফুচকা ঢাকার বর্তমান জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুটের মধ্যে প্রথম সারিতে আছে।

ঢাকার সেরা ১০ স্ট্রিট ফুড

শিঙাড়া-সমুচা

দেশে সব পণ্যের দাম হুড়মুড় করে বাড়লেও শিঙাড়ার দাম সে তুলনায় বাড়েনি। মূলত শিঙাড়ার দাম ৫ টাকা, তবে সাইজ বড় হলে ১০ টাকা রাখা হয়। এই শিঙাড়ায় আবার গরুর কলিজা ব্যবহার করে তা ২০-৪০ টাকায়ও বিক্রি হয়। সন্ধ্যায় আবার ২-৩ টাকায় ছোট ছোট শিঙাড়া পাওয়া যায়।

শিঙাড়াকে গরিবের বিলাসী খাবার বললে ভুল হবে না। আবার পেট ভরাতেও সহজে হাতের কাছেই পাওয়া যায়। ফলে ঢাকাসহ দেশব্যাপীই শিঙাড়ার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। শিঙাড়ার দোকানেই মূলত সমুচা বিক্রি হয়। তবে শিঙাড়ার চেয়ে সামুচার জনপ্রিয়তা একটু কম।

পিঠা

শীতকালে মাটির চুলায় গ্রামের মা-চাচিরা তৈরি করতেন নানা পিঠা। তবে ব্যস্ত ঢাকায় অধিকাংশ মানুষের কাছেই সেসব যেন স্মৃতি। তাই বলে কি ঢাকার মানুষ পিঠা খাবে না? ঢাকায়ও খুব সহজেই মিলছে ভাপা, চিতইসহ নানা রকমের পিঠা। সঙ্গে থাকে নানা পদের ভর্তা।

ঢাকার সেরা ১০ স্ট্রিট ফুড

ঘ্রাণে ম ম করে চারদিক। এই পিঠা এখন ঢাকার রাস্তায় অন্যতম অনুষঙ্গ। ঢাকার এহেন কোনো এলাকা নেই- যেখানে আপনি ৫-১০ টাকার বিনিময়ে পিঠা পাবেন না। সহজে-সস্তায় এই পিঠা পাওয়া যায় বলে এর গ্রাহকও অনেক। তবে শীতের সময়টায় এই পিঠার কদর একটু বেশিই থাকে।

হালিম-পায়া

হালিম আদি খাবার। ঐতিহ্যবাহী খাবারটির জন্ম রাজ-রাজা কিংবা ধনিক শ্রেণির ভোজন আয়োজনে। তবে কালে কালে এই রেসিপি পৌঁছে গেছে পথে-প্রান্তিকে। ঢাকার রাস্তায় এর প্রাপ্তি এখন হর হামেশাই। মাত্র ৫০-৬০ টাকায় হালিম পাওয়া যায়।

স্বাদেও ভালো, আবার অল্প টাকায় মোটামুটি পেটও ভরে। তাই দরিদ্র শ্রেণির কাছে এর জনপ্রিয়তা বেশি। অধিকাংশ হালিমের সঙ্গে গরু-খাসির পায়াও বিক্রি হয়। সব মিলিয়ে ঢাকার স্ট্রিট ফুডের তালিকায় হালিম বেশ স্বকীয় অবস্থানেই আছে।

চপ-পুরি-বেগুনি-পেঁয়াজু

ডুবো তেলে ভাজা হয় পুরি, আলুর চপ, বেগুনি, পেঁয়াজু ও পাকোড়া। এর সঙ্গে পাড়ার দোকানের ছোলা ভুনাও বেশ যায়। এসব পেটের জন্য ভালো না হলেও খেতে ভীষণ মজা। তাই তো হুড়মুড়িয়ে চলে এসব ভাজাপোড়া খাবারের দোকান। ঢাকায় অন্যতম জনপ্রিয় এই স্ট্রিট ফুড।

ঢাকার সেরা ১০ স্ট্রিট ফুড

চিকেন-ফ্রেঞ্চ ফ্রাই

ফ্রাইপ্যানের গরম তেলে মুরগির পিস আর আলুর টুকরোগুলো বাদামি করে ভেজে পরিবেশন। আহ- দেখলেই জিভে জল। ঘ্রাণটাও লোভনীয়। লোভনীয় এই খাবারের জন্ম সাহেবি রেস্তোরাঁয় হলেও এখন তা রাস্তাঘাটেও মিলছে। এসবের গ্রাহকও অনেক। সসে লাগিয়ে চেটেপুটে খেতে দেখা যাবে রাস্তাঘাটে-পাড়ার মোড়ে। এই ফ্রাই এখন ঢাকার স্ট্রিট ফুটগুলোর মধ্যে সেরা ১০ এ।

ঝালমুড়ি

মুড়ি, চানাচুর আর হরেক মসলা সংযোগে তৈরি হয় ঝালমুড়ি। এই খাবার বাংলাদেশ ও ভারতে বেশ জনপ্রিয়। তবে আধুনিক ঝালমুড়ি আরও মুখরোচক। শুধু মসলা নয়- পাশাপাশি ডিম, মুরগি-হাস-গরু-খাসি-কলিজা দিয়েও বিশেষভাবে গোপন মসলা মিশিয়ে বানানো হয় ঝালমুড়ি। যা বিক্রি হয় ঢাকার পথে পথে। এছাড়া ডিম ঝালমুড়ি কিংবা আলু ঝালমুড়িও মিলবে রাস্তাঘাটের ভাসমান দোকানে। যা এখন শৌখিন ভোজনরসিকদের কাছেও জনপ্রিয়তার শীর্ষে।

ভর্তা মাখা

হাতে মাখা ভিন্ন স্বাদের ভর্তা-বানানো এখন ঢাকার নান্দনিকতার একটি অংশ। কলা, বড়ই, চালতা, তেঁতুল, আমড়া, পেয়ারাসহ নানা ফলের সঙ্গে ধনিয়াপাতা ও মসলার মিশ্রণে ভিন্ন স্বাদের অসম্ভব মজার ভর্তা মিলছে ঢাকার রাস্তাঘাটে। এসব একবার খেলে বারবার খেতে ইচ্ছে হবে। সেই মজার লোভে গ্রাহকরা ফের ফিরে আসে বিক্রেতার কাছে। ফলে ঢাকার রাজপথে আজ জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই ধরনের খাবার।

ঢাকার সেরা ১০ স্ট্রিট ফুড

মালাই কিংবা তন্দুরি চা

তন্দুরি চা, চা-প্রেমীদের জন্য এই রেসিপি নিয়ে এসেছে ভিন্ন স্বাদ। জনবহুল এলাকার রাস্তার মোড়ে মোড়ে পৌঁছে গেছে এই ঐতিহ্যবাহী রেসিপি। মাটির উত্তপ্ত কাপে পুড়ে যাওয়া চায়ের কড়া ঘ্রাণ আকৃষ্ট করবে যে কাউকে। ২০ টাকা থেকে ৪০ টাকায় প্রতি কাপ চা বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া এসব দোকানেই মালাই চা মিলছে ৫০-৬০ টাকার বিনিময়ে। সন্ধ্যা হলেই ঢাকার পাড়া-মহল্লায় চলে এসব চায়ের সঙ্গে আড্ডার আসর। রাস্তায় মিললেও অভিজাত ঘরের মানুষও খুব স্বাচ্ছন্দ্যেই এই চা খেতে আসে।

এছাড়াএলাকাভেদে নানা খাবার ঢাকার স্ট্রিট ফুডকে জনপ্রিয় করে তুলছে। যেমন- পুরোনো ঢাকার লাচ্চি, ঢাবি টিএসসির মমো, গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড ও হাতিরঝিলের দোসা ও চাপ, ৩০০ ফিটের হাঁসের মাংস বা বট ইত্যাদি। তবে নব্য জনপ্রিয়তা পাওয়া এসব খাবার এখনও ঢাকার সর্বত্র সহজসাধ্য হয়ে পৌঁছতে পারেনি। ফলে বিক্রেতাদের মতে, জনতার ভোটে এখনও তা সেরা ১০ এ স্থান নিতে পারেনি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com