একঘেয়েমি পড়াশোনার চাপে যখন আপনি বিরক্ত তখন নিজেকে সতেজ রাখতে প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘোরাঘুরির বিকল্প নেই। তবে রাজধানীর ভেতর এমন জায়গা খুবই কম।
তবে ঢাকার খুব কাছেই এমন সুন্দর কিছু জায়গা আছে যেখানে কম সময়ের মধ্যে ঘুরে আসতে পারেন, কাটিয়ে আসতে পারেন দারুণ মুহূর্ত। এমন একটি জায়গা সাভারের সাদুল্লাপুর গোলাপের গ্রাম।
ভ্রমণটি হওয়ার কথা ছিল জুলাই মাসের শেষ শুক্রবার। তবে টেস্ট পরীক্ষার কারণে দিনটি কয়েক দফা পেছানো হয়। পরীক্ষার চিন্তায় সাকিলা ভুলেই গিয়েছিল গোলাপ গ্রামের কথা।
১৮ আগস্ট ভোরবেলা ভ্রমণের তারিখ ঠিক করা হলো। গোলাপ গ্রাম যাওয়ার বেশ কয়েকটি পথ আছে। তবে আমার মতো যারা ফার্মগেটের আশেপাশে থাকেন তাদের প্রথমে গাবতলী আসতে হবে। ভাড়া ২০-২৫ টাকা। এরপর গাবতলী বাসস্টান্ড থেকে যে কোনো বাসে সাভার বাসস্ট্যান্ডের ওভারব্রিজের নিচে নামতে হবে।
গাড়ি ভাড়া ৩০ টাকা। ওভারব্রিজ পাড় হয়ে পূর্ব দিকের বিরুলিয়া ইউনিয়নের রাস্তায় ব্যাটারিচালিত গাড়িতে ৩০ টাকা ভাড়ায় ৩-৪ কিলোমিটার দূরত্বে গেলেই স্বপ্নের গোলাপ গ্রামের দেখা মিলবে। গোলাপের সৌন্দর্য দেখতে আমরা দশজনের দল এসেছি এখানে।
তুরাগ নদীর তীর ঘেঁষে গোলাপ গ্রাম। গোলাপের সুগন্ধ আর চোখ জুড়ানো দৃশ্য নিয়ে পুরো গ্রাম ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতোই সুন্দর। শুধু সাদুল্লাহপুর নয়, আশপাশের শ্যামপুর, কমলাপুর, বাগ্মীবাড়ি গ্রামের গোলাপের রাজ্যে চোখ আটকে যাবে যে কারও।
ঘুরে দেখতে দেখতে একসময় সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে। নিজের চোখে এতো ফুল আর এর আগে দেখিনি। অনুমতি নিয়ে নিজ হাতে কিছু ফুল তুলতে পেরে বেশ উচ্ছ্বসিত আমরা। ফুলগুলো সত্যিই অসাধারণ। লাল টকটকে গোলাপ মাথা উঁচিয়ে আছে।
এখানে সারা বছরই গোলাপ চাষ হয়। মূলত মিরান্ডা প্রজাতির লাল গোলাপের চাষ হয়। দুপুরের পর থেকেই চাষিরা গাছের সারির একপাশ থেকে ফুল তোলা শুরু করে শেষ পর্যন্ত মুঠো ভরে ফুল তোলেন। চাষিদের ফুল তোলার দৃশ্যও বেশ নয়নাভিরাম।
সাদুল্লাহপুরের আশপাশের গ্রামে তিনটি ফুলের হাট আছে। ফুলচাষিরা ফুল কেটে নিয়ে চলে আসেন এই হাটগুলোতে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারীরা এসে ভিড় জমান।
তারপর ভোর হওয়ার আগেই ফুল পৌঁছে যায় রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা ফুল বিক্রির দোকানে। যারা বিয়ে কিংবা গায়ে হলুদের জন্য কম দামে ফুল নিতে চান তারা সোজা চলে আসেন এই গোলাপ গ্রামে।
পুরো গ্রাম ঘুরে দেখতে গেলে খিদে পাবেই। খাবারের ব্যবস্থা নিজেকে করে নিতে হবে। আমরাও তাই করলাম। আশপাশে মোটামুটি ভালো মানের খাবার হোটেল আছে। সেখানে ভাত, ডাল, সবজি, মাছ সবই পাওয়া যায়। এমনকি মিষ্টি, দই, গরুর দুধের চায়ের ব্যবস্থাও আছে।
খাবার শেষে মনোরম গ্রামটিতে হাঁটতে হাঁটতে ভাবলাম, রাতে কী সুনসান নীরব আর স্নিগ্ধ পরিবেশই না হবে গ্রামটি! থাকতে পারলে দারুণ থ্রিলিং হতো! তবে এখানে আমাদের রাত কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই।
এবার আমাদের ফেরার পালা। বিকেল ৪টার দিকে ক্লান্ত শরীর নিয়ে গোলাপ গ্রাম থেকে বের হলাম। যেই পথে এসেছি সেই পথেই আবার হাঁটা, অটোয় ওঠা, বাসে চড়ে ঢাকায় ফিরে আসা।
যারা প্রকৃতির সান্নিধ্য ভালোবাসেন, যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি দূর করতে ঘুরে আসতে পারেন লাল গোলাপের গ্রামে। এই সৌন্দর্য আপনার যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি অনেকটা দূর করবে।