রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:৪৩ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

ড্রাগনের দেশের মহাপ্রাচীরের গল্প

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৬ মার্চ, ২০২১

ড্রাগনের দেশ চীনের ঐতিহ্যবাহী একটি স্থানের নাম মহাপ্রাচীর। ইংরেজিতে যা ‘গ্রেট ওয়াল’ নামে পরিচিত। মূলত বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে সুরক্ষার মানসে গড়ে তোলা হয় এই প্রাচীর। বিশেষ করে খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী থেকে খ্রিস্টাব্দের ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রাচীরটি নির্মাণ করা হয়। প্রাচীরটি চীনের উত্তর সীমান্তে অবস্থিত ছোট কয়েকটি রাজ্যে যাযাবর শ্রেণির আক্রমণ থেকে প্রতিরক্ষার জন্য নির্মাণ করা হয়। তাদের আক্রমণ থেকে রেহাই পেতে মহাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়। চীনের প্রাচীর নির্মাণের সময় প্রায় ১০ লক্ষাধিক শ্রমিক নিহত হয়েছিলো বলে একে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কবরস্থানও বলা হয়।

প্রাচীরটির যেসব স্থানে যাবেন

মরুভূমি, পাহাড়-পর্বত ও বনাঞ্চলের ভেতরে অবস্থিত প্রাচীরটি ২১ হাজার ১৯৬ কিলোমিটার লম্বা। জনশ্রুতি রয়েছে, এর প্রস্থ এত চওড়া যে এর ওপর অনায়াসে ১২ জোড়া ঘোড়া দৌঁড়াতে পারবে। দূর থেকে একে সাপ বা ড্রাগনের মতো মনে হয় বলে চীনকে অনেকে ড্রাগনের দেশ হিসেবে অভিহিত করেন। অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষকে এখানে বেশি ভ্রমণ করতে দেখা যায়। প্রাচীরটিকে ১০টি ভাগে বিন্যস্ত করা হয়েছে- মুতিয়ান্যু, বাদালিং, হুয়াংহুচেং, জুয়োংগুয়ান, সিমাতাই, হুয়ানগ্যাগুয়ান, সাংহাই পাস, জিনশানলিং, গুবেইকো ও জিয়ানকো। গুবেইকো ও জিয়ানকো বাদ দিয়ে পর্যটকরা যাতায়াতের সুবিধা অনুযায়ী প্রাচীরটি ঘুরে দেখতে পারেন। এসব অংশ সম্পর্কে সংক্ষেপে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি-

মুতিয়ান্যু: রাজধানী বেইজিং থেকে ৭৩ কিলোমিটার দূরে গ্রেট ওয়ালের মুতিয়ান্যু অংশে পৌঁছাতে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। শিশুদের নিয়ে এই অংশে নিরাপদে ভ্রমণ করা যায়।

বাদালিং: বেইজিং থেকে বাদালিংয়ে যাতায়াত করায় অনেক সুবিধা রয়েছে। এখানে গ্রেট ওয়াল মিউজিয়াম রয়েছে। এর উত্তর দিক থেকে ওয়াচ টাওয়ার পর্যন্ত হাইকিং করার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বেশিরভাগ পর্যটক নির্বিঘ্নে মুতিয়ান্যু থেকে এখানে যাতায়াত করে।

হুয়াংহুচেং: হুয়াংহুচেং অংশে পর্যটকরা খুব কম ভ্রমণ করেন এবং যাতায়াত কিছুটা কষ্টসাধ্য। তবে এখানে হাইকিং করার সুযোগ রয়েছে। হাইকিংপ্রিয় মানুষকে এখানে ভ্রমণ করতে দেখা যায়।

জুয়োংগুয়ান: বেইজিং থেকে জুয়োংগুয়ান অংশে যাতায়াত করা সুবিধাজনক। এখানে রয়েছে একাধিক সুরক্ষিত দুর্গ। এছাড়া হাইকিং করার ব্যবস্থাও রয়েছে এই অংশে।

সিমাতাই: জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে এটি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। ক্যাবল কার, ব্যাটারি কার্টস ও বোটিংয়ের সুবিধা রয়েছে। এছাড়া রাতে এই অংশ অনেক নান্দনিক হয়ে ওঠে।

হুয়ানগ্যাগুয়ান: প্রতি বছর মে মাসে ‘দ্য গ্রেট ম্যারাথন’ অনুষ্ঠিত হয়। এই অংশে ট্যুরিস্ট বাসে করে পাহাড়ের ওপর ঘুরে বেড়াতে অনেক ভালো লাগে।

সাংহাই পাস: সমুদ্রের সঙ্গে সাংহাই পাস অংশ মিলিত হয়েছে। প্রাচীরের এ অংশ সীমান্ত রক্ষার কাজে ব্যবহৃত হতো। পুরো একদিন সময় নিয়ে ভ্রমণ করলে এখানকার সবকিছু ঘুরে দেখা যাবে।

জিনশানলিং: বেইজিং থেকে জিনশানলিংয়ে পৌঁছাতে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা লাগে। এই অংশের অর্ধেক জঙ্গলে পরিপূর্ণ। বেশিরভাগ পর্যটক জিনশানলিং থেকে সিমাতাই পর্যন্ত হাইকিং করতে পছন্দ করেন।

গুবেইকো ও জিয়ানকো: এই দুই অংশ বেশ বিপজ্জনক। পুরো অংশ জঙ্গলে ঘেরা। অংশ দুটিতে পর্যটকদের যাওয়ার অনুমতি নেই।

ব্যয় কেমন হবে?

মিনি বাসে ঘুরে দেখতে জন প্রতি ৩০ ডলার ব্যয় হবে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় হয় ২৫০০ টাকা। ভাষা বোঝানোর জন্য পর্যটকদের সঙ্গে চীনা ও ইংরেজি বোঝে এমন দোভাষীও রাখা হয়।

কীভাবে যাবেন?

চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে অবতরণ করে গণপরিবহন বা ভাড়াচালিত ট্যাক্সিতে সরাসরি গ্রেট ওয়ালে যাওয়া সম্ভব। গণপরিবহনে ব্যয় অপেক্ষাকৃত কম হয়। প্রাচীরটির সব অংশ এক স্থানে না থাকার কারণে বিভিন্ন অংশে বিভিন্নভাবে যাতায়াত করা যায়। বাদালিংয়ে রেলযোগে যেতে হলে হুয়াংতুডিয়ান রেলওয়ে স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করতে হবে। আর বাসে যাওয়ার ক্ষেত্রে বেইজিংয়ের দেশেংমেন বাসস্টেশন থেকে ৮৭৭ নং বাসে করে যেতে হবে। মুতিয়ান্যু যাওয়ার জন্য বেইজিংয়ের ডংজহিমেন বাস স্টেশন থেকে বাস লাইন ৯১৬ এক্সপ্রেসে হুয়াইরোউ বেইদাজি এ স্টেশনে যেতে হবে। বাস পাওয়ার জন্য এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতে পারে। তারপর বাস লাইন বদল করে এইচ-টোয়েন্টিথ্রি, এইচ-টোয়েন্টিফোর, এইচ-থার্টিফাইভ বা এইচ-থার্টিসিক্স বাসে উঠেতে হবে। এছাড়া জিনশানলিংয়ে যাওয়ার জন্য বাস নং ৯৮০-তে উঠতে হবে। মিয়ুন সিটিতে সেই বাস থামলে মিনি বাসে করে সেখানে যেতে হবে।

থাকার ব্যবস্থা

প্রাচীরের আশেপাশে থাকার জন্য ভালো মানের কিছু হোটেল রয়েছে। অনেকে দিনের বেলায় প্রাচীর ঘুরে এসে রাতে বেইজিং শহরের হোটেলগুলোতে রাত কাটাতে স্বচ্ছন্দ। তবে প্রাচীরের আশেপাশের হোটেলগুলোতে থাকলে নিরিবিলি পরিবেশে প্রাচীর দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে। প্রাচীরের এলাকায় এসব হোটেলে স্বল্প ব্যয়ে নির্বিঘ্নে থাকা যায়। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হোটেল হলো-

১. বাদালিং লিও গ্রেট ওয়াল,

২. দ্য গ্রেট ওয়াল কোর্ট ইয়ার্ড হোস্টেল,

৩. ডিলাইট ইন,

৪. ইয়ুএলি জাওয়ে ভ্যালি গুস হাউজ।

টিপস

১. হাইকিং করার জন্য বসন্ত ও শরৎ কালকে বেছে নিন।

২. অতিরিক্ত গরম ও অতিরিক্ত শীতে মহাপ্রাচীর এলাকায় ভ্রমণ করা অনূচিত।

৩. ছুটির দিনে পর্যটকরা বেশি ভ্রমণ করে থাকে। তাই ভীড় এড়াতে সরকারি ও সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদ দিয়ে ভ্রমণ করা উত্তম।

৪. হাইকিং করতে ১ থেকে ২ দিন সময় নিন।

৫. মহাপ্রাচীর ঘোরার সময়ে অবশ্যই একজন গাইড সঙ্গে রাখবেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

Like Us On Facebook

Facebook Pagelike Widget
© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com
%d bloggers like this: