তাহলে বন্ধুরা চলুন, ডেনমার্ক সম্পর্কে আরো কিছু জানা-অজানা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
১। ডেনমার্কের সরকারী নাম হচ্ছে “কিংডম অফ ডেনমার্ক”। ভাইকিংয়েরা ১,১০০ বছর আগে ডেনীয় রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। এটি ইউরোপের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী রাজত্বগুলির একটি। ডেনমার্কের বর্তমান জাতীয় পতাকা ১২১৯ সাল থেকে প্রচলিত রয়েছে।
যেমনটি আগেই বলেছি, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে ডেনমার্ক স্ক্যান্ডিনেভিয়ার একটি অংশ। বিগত শতাব্দীগুলিতে ডেনমার্কের রাজারা সমগ্র নরওয়ে ও সুইডেন কিংবা এদের কিছু অংশ শাসন করেছেন। তারা দ্বীপরাষ্ট্র আইসল্যান্ডও শাসন করেছেন। ভৌগলিকভাবে ডেনমার্ক উত্তরের স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশগুলির সাথে মহাদেশীয় ইউরোপের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে।
২। ৪২ হাজার ৯৩৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে মোট জনসংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। তবে ডেনমার্কের পুরো রাজত্তের কথা বললে হিসাবটা একটু আলাদা হবে। যেমন, কিংডম অফ ডেনমার্কের মোট আয়তন ২২ লাখ ২০ হাজার ৯৩০ বর্গকিলোমিটার। এবং জনসংখ্যা যথাক্রমে ফারো দ্বীপপুঞ্জে ৫০ হাজার এবং গ্রিনল্যান্ডে প্রায় ৫৬ হাজার।
৩। দেশটির প্রধান ধর্ম হছে খ্রিস্টধর্ম।
৪। ডেনমার্কের সরকারী ভাষা হচ্ছে ডেনিশ। তবে আঞ্চলিক ভাষাগুলোর মধ্যে ফারোস, গ্রিনলান্ডিক এবং জার্মান ভাষা উল্লেখযোগ্য। তবে বর্তমানে ডেনমার্কের প্রচুর মানুষ ইংরেজিতে কথা বলেন।
৫। ডেনমার্কের রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর হচ্ছে কোপেনহেগেন। এটি একইসাথে দেশটির সবচেয়ে জনবহুল শহর। শহরটিতে প্রায় ৮ লাখ মানুষের বসবাস।
৬। অনেক উত্তরে অবস্থিত হলেও উষ্ণ উত্তর আটলান্টিক সমুদ্রস্রোতের কারণে ডেনমার্কের জলবায়ু তুলনামূলকভাবে বেশ মৃদু। ডেনমার্ক একটি নিচু দেশ। এখানে রয়েছে ঢেউ খেলানো পাহাড়ের সারি, সাজানো গোছানো খামার এবং বিস্তৃত গ্রামীণ সবুজ চারণভূমি। ডেনমার্কের কোন অংশ থেকেই সাগরের দূরত্ব ৬৪ কিমি-এর বেশি নয়, ফলে সমগ্র দেশেই উপকূলীয় আবহাওয়া বিরাজমান। বর্ষা, কুয়াশা ও মেঘাচ্ছন্ন আকাশ দেশটিতে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।
দেশটিতে গ্রীষ্মে গড়ে তাপমাত্রা থাকে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শীতকালে তা গিয়ে দ্বারায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
৭। ডেনমার্কে আপনি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা গ্রহন করতে পারবেন।
৮। ডেনমার্কের মানুষেরা কথার মাঝে “প্লিজ” ও “ধন্যবাদ” শব্দটি ব্যবহার করেনা।
৯। দেশটিতে সাইকেল একটি জনপ্রিয় বাহন। রাজধানী কোপেনহেগেনের মানুষেরা কাজে যাওয়া-আসার জন্য সচারাচর সাইকেল ব্যবহার করে থাকেন। এখানে একজন মানুষ গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৩ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে থাকেন। এবং কোপেনহেগেনের মানুষেরা প্রতিদিন সাইকেল দিয়ে যে পরিমান দূরত্ব অতিক্রম করেন, তা দিয়ে অনায়াসে পৃথিবীকে ৩৫ বার আবর্তন করা যাবে।
১০। ১৯৮৯ সালে সর্বপ্রথম এই দেশটিতেই সমকামী বিবাহ বৈধ করে দেওয়া হয়।
১১। ডেনমার্কের অধীনে রয়েছে মোট ৪৪৪টি দ্বীপ কিন্তু এদের মধ্যে মাত্র ৭৬টিতে মানুষের বসবাস রয়েছে।
১২। ডেনমার্কে আপনাকে খাবার পানির জন্য আলাদা কোন ব্যবস্থা করতে হবেনা। কারন দেশটিতে ট্যাপের পানিই খাওয়ার উপযোগী।
১৩। ডেনমার্কেই পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন দুইটি এমিউজমেন্ট পার্ক অবস্থিত। এদের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীনটি হচ্ছে বাক্কেন এবং এর পরেরটি হচ্ছে টিভোলি গার্ডেনস।
১৪। আপনার যদি কোনভাবে নিজেকে অন্যদের চেয়ে বড় ভাবার অভ্যাস থাকে তাহলে ডেনমার্ক সম্ভবত আপনার জন্য নয়। কারন দেশটিতে একটি অলিখিত আইন আছে যে “কেও কারোর থেকে বড় নয়”।
১৫। ডেনমার্কের পাহাড়গুলির উচ্চতা খুবই কম। দেশটির সর্বচ্চ চূড়ার উচ্চতা মাত্র ১৭০ মিটার।
১৬। ডেনমার্কে দেশটির সরকার দ্বারা অনুমোদিত প্রায় ৭০০০ নামের একটি তালিকা আছে। যেখান থেকে পিতা-মাতারা তাদের বাচ্চার জন্য পছন্দসই নাম বেছে নিতে পারেন।
১৭। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ডেনমার্ক বিশ্বের সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের একটি।
১৮। ডেনমার্কে কিন্তু আপনি বিয়ে না করে পার পাবেন না! দেশটিতে ২৫ বছর বয়সের মধ্যে বিয়ে না করলে এর পরের প্রত্যেকটি জন্মদিনে আপনার ওপর দারুচিনি ছুড়ে মারা হবে। আর এরপরেও ৩০ বছর বয়সের মধ্যে বিয়ে না করলে ছুড়ে মারা হবে মরিচ। সাবধান, খুবিইইইইইইই ঝাল
১৯। তবে দেশটিতে বিবাহবিচ্ছেদ এর হারও খুবই বেশি।
২০। কোপেনহেগেনের ওয়ার্ল্ড ক্লকটি তৈরি করতে জেন্স ওলসেনের প্রায় ২৭ বছর সময় লেগেছিল।
২১। ডেনমার্কেই বিশ্বের প্রাচীনতম চলচ্চিত্র নির্মাণকারী সংস্থা “নরডিস্ক” অবস্থিত।
২২। ডেনমার্কের দীর্ঘতম নদী হচ্ছে গুদিনা নদী এবং এটি প্রায় ১৫,০০০ বছর আগে অস্তিত্ব লাভ করে।
২৩। খাদ্য রপ্তানিতে ডেনমার্কের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম। ইংল্যান্ডের সাথে মিলে দেশটি সেই ১৮৬৭ সাল থেকে খাদ্য রপ্তানি করে আসছে।
২৪। ডেনমার্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ফুটবল।
২৫। ডেনমার্কের সরকারী মুদ্রা ড্যানিশ ক্রোনা।
২৬। দেশটির মোট জিডিপি ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং মাথাপিছু আয় প্রায় ৬৩ হাজার ডলার।
২৭। ডেনমার্কের ডায়ালিং কোড হচ্ছে +৪৫।