শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৮ অপরাহ্ন

ডেনমার্কে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন ভিসা

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৯ জুন, ২০২৩
Three friends meetup in Copenhagen downtown during a beautiful spring day.

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া কিংবা নিউজিল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা শেষে স্থায়ীভাবে কাজের সুযোগের পাশাপাশি অভিবাসনেরও রয়েছে বিরাট সুযোগ। এ ক্ষেত্রে ইউরোপ হচ্ছে এর বিপরীত। ইউরোপে উচ্চশিক্ষা শেষে নিজের শিক্ষা যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ যোগার করা অনেকটা সোনার হরিণ। এ ছাড়া এখানে উচ্চশিক্ষিত গ্র্যাজুয়েটদের স্থায়ীভাবে অভিবাসনের সুযোগ নেই বললেই চলে। কিন্তু তারপরও যারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লেখাপড়া করতে আসেন তাদের একটা অংশ কোনো না কোনোভাবে লেখাপড়া শেষে অনেক ত্যাগ স্বীকার করে এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে থাকার একটা ব্যবস্থা করে থাকেন। বস্তুত ইউরোপ কখনোই উচ্চশিক্ষিত অভিবাসীদের জন্য একটা ভালো আবাসস্থল হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি এবং ভবিষ্যতেও এর কোনো সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না।

এদিকে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি দেখা দেওয়ায় বিভিন্ন দেশের নানা উদ্যোগের পাশাপাশি ডেনমার্কও স্টাব্লিশমেন্ট ভিসা নামে একটা নতুন ভিসা ক্যাটাগরির ঘোষণা দিয়েছে। ভবিষ্যতে ডেনমার্কের শ্রমবাজারে দক্ষ শ্রমের জোগান নিশ্চিত ও নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টির লক্ষ্যে এখানে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য দুই বছরের স্টাব্লিশমেন্ট ভিসা প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর আওতায় শিক্ষার্থীরা মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি শেষ করার পর নিজ যোগ্যতানুযায়ী এখানে ব্যবসাও করতে পারবেন। নতুন উদ্যোক্তা শ্রেণিকে উৎসাহকরণের লক্ষ্যে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এটা এ বছরের জানুয়ারির প্রথম দিন থেকে কার্যকর করা হয়েছে।

ইতিপূর্বে ডেনমার্কে অধ্যয়নরত সকল বিদেশি শিক্ষার্থীরাই তাদের স্টাডি প্রোগ্রামের সঙ্গে অতিরিক্ত ছয় মাসের ভিসা পেতেন। উদ্দেশ্য ছিল, পড়াশোনা শেষে ছয় মাসের মধ্যে তারা একটা কাজ যোগাড় করে এ দেশের অর্থনীতিতে দক্ষ জনবল হিসেবে যোগদান করতে পারেন। এর মাধ্যমে তারা এ দেশের শ্রমবাজারকে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক স্থানে পৌঁছাতে সাহায্য করবেন।

আগের পরিসংখ্যান বলছে, শিক্ষার্থীদের বাড়তি ছয় মাসের ভিসা দেওয়া হলেও শিক্ষা শেষে ডেনমার্কের খুবই ছোট্ট চাকরির বাজারে নিজেদের পেশা অনুযায়ী তাদের একটা কাজ জোগাড় করা একেবারেই অসম্ভব ছিল। এখন আশা করা হচ্ছে দুই বছরের স্টাব্লিশমেন্ট ভিসার ফলে ডেনমার্ক থেকে উচ্চ শিক্ষাগ্রহণকারীর একটা অংশ ভবিষ্যতে ডেনমার্কের পড়াশোনা শেষে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত এবং এ দেশ থেকে অর্জন করা শিক্ষা ডেনিশ অর্থনীতিতে কাজে লাগাতে সক্ষম হবেন। এটা এ দেশের ছোট চাকরির বাজারে নতুন নতুন চাকরি সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকেরা। বলা হচ্ছে, ডেনিশ স্টাব্লিশমেন্ট ভিসার আওতায় কাউকে নতুন করে কাজের অনুমতি নিতে হবে না এবং এ ভিসা সকলকেই সরাসরি কাজের অধিকার দেবে। এ ছাড়া স্টাব্লিশমেন্ট ভিসার পাওয়া সকলকে ডেনমার্কে নিজস্ব ব্যবসা-বাণিজ্য করার সরাসরি সুযোগ দোয়া হবে।

ডেনমার্কে স্টাব্লিশমেন্ট ভিসার পাওয়ার শর্ত

অবশ্যই ডেনমার্ক থেকে মাস্টার্স অথবা পিএইচডি ডিগ্রি থাকতে হবে। ডেনমার্কের মাস্টার্স ডিগ্রি ৬০ সিবিএস (ECTS) ক্রেডিট। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি ডেনমার্কের কোনো প্রাইভেট কলেজে থেকে (বিশেষত ব্রিটিশ ডিগ্রি) মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করে থাকেন সে ক্ষেত্রে তাদের দেখা দরকার উক্ত ডিগ্রি ডেনিম মাস্টার্স ডিগ্রির সমপর্যায়ের (candidatus) কিংবা ৬০ ইসিটিএস (ECTS) ক্রেডিট রয়েছে কি না।

এ ছাড়া প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে স্টাব্লিশমেন্ট ভিসার আবেদনে এক বছরের নিজেদের খরচ বহন করতে পারবে এমন নিশ্চয়তা হিসেবে ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট দেখাতে হবে।

উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে ২০০৮ সালের শেষের দিকে ডেনমার্কে চালু করা গ্রিনকার্ড স্কিমকে দেখা হচ্ছে একটা ব্যর্থ স্কিম হিসেবে। বিভিন্ন গবেষণা রিপোর্ট অনুযায়ী উল্লেখ্যযোগ্য গ্রিন কার্ডধারী উচ্চ শিক্ষিতরা ডেনমার্কে প্রফেশন অনুযায়ী কাজ পাননি। এ কারণেই ডেনিম নীতিনির্ধারকেরা স্টাব্লিশমেন্ট ভিসার ব্যাপারে অধিক গুরুত্ব প্রদান করছে।

যা হোক, এটা নিশ্চিত ডেনিশ স্টাব্লিশমেন্ট ভিসার আওতায় ডেনমার্কে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে আসা অনেকেই স্টাব্লিশমেন্ট ভিসা নিয়ে এ দেশে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করবেন এ কথা জোর দিয়েই বলা যায়। কিন্তু ডেনমার্কের মতো ছোট্ট দেশে যেখানে ডেনিশ ভাষা ছাড়া অন্য কোন ভাষার তেমন ব্যবহার নেই (সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া) সে ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষাভাষীদের জন্য এ দেশের চাকরির বাজারে প্রবেশ করা বেশ দুরূহ। উপসংহারে বলা যায়, ডেনমার্কসহ ইউরোপকে উচ্চ শিক্ষিত দক্ষ অভিবাসীদের উপযুক্ত স্থান হিসাবমতে নেবার আগে অনেকবার ভেবে দেখা প্রয়োজন। ইউরোপ কখনোই আমেরিকা, কানাডার কিংবা অস্ট্রেলিয়ার মতো অভিবাসীদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করেনি এবং এখানে অভিবাসীদের সেভাবে স্বীকৃতি দেবার কথা এরা ভাবতেও পারে না। তারপরও যাদের পক্ষে অভিবাসীদের অভয়ারণ্য আমেরিকা, কানাডা কিংবা অস্ট্রেলিয়ার যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না তাদের জন্য ডেনমার্ক হতে পারে সেকেন্ড বেস্ট। বিস্তারিত জানতে পারেন এই ওয়েভ লিঙ্কের মাধ্যমে nyidanmark.dk/en-us/coming_to_dk/work/Establishment-card/

(লেখকের ই-মেইলঃ [email protected], Skype: faisalsweden)

মোহাম্মদ ফয়সল

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com