বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:২৮ অপরাহ্ন
Uncategorized

ট্রেন ছাড়াই চালু হবে পদ্মা সেতু

  • আপডেট সময় শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

পদ্মা সেতুর অবকাঠামোগত নির্মাণ প্রায় শেষের পথে। বর্তমানে পুরো সেতুর সার্বিক নির্মাণ অগ্রগতি ৯৪.২৫ শতাংশ। আগামী বছরের জুনে সড়ক ও রেলপথ নিয়ে দ্বিতল পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কথা রয়েছে। সেই পরিকল্পনা মাথায় রেখেই চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। পদ্মা সেতুর দুই হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাবের সব কয়টি স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। অক্টোবরের শেষের দিকে শুরু হবে কার্পেটিংয়ের কাজ। সব কিছু ঠিক থাকলে ২০২২ সালের জুনের শুরুতেই যানবাহন চলাচলের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে সেতুর সড়কপথ।

কিন্তু পদ্মা সেতুর রেলপথে ট্রেন চলতে আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। এই মুহূর্তে সেতুর রেল অংশে চলছে গ্যাসলাইন বসানোর কাজ। পুরো সেতুটিই এখনো সেতু কর্তৃপক্ষের হাতে আছে। রেলের অংশ রেলপথ মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করার আগ পর্যন্ত সেতুতে রেললাইন বসানোর কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। সেতুর রেল অংশের চলমান কাজ শেষ হবে আগামী বছরের জুনে। আগামী মার্চের আগে সেতুতে রেললাইন বসানোর অনুমতি দেবে না সেতু কর্তৃপক্ষ। আর সেতুতে  রেললাইন বসাতে সময় লাগবে অন্তত ছয় মাস। তাই আগামী জুনের আগে সেতুতে রেলপথ তৈরির কাজ প্রায় অসম্ভব। এমন পরিস্থিতিতে রেলের জন্য অপেক্ষা করা হবে না। যদি আগামী জুনের মধ্যে রেলপথ প্রস্তুত না হয়, তাহলে ট্রেন ছাড়াই চালু করা হবে পদ্মা সেতু।

অবস্থা বিবেচনায় নতুন করে পরিকল্পনা করছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ চলছে। আর এর কেন্দ্রে থাকবে ফরিদপুরের ভাঙ্গা। এই ভাঙ্গাতেই তৈরি হবে রেলওয়ে জংশন। এই পুরো পথকে তিন ভাগে ভাগ করে কাজ শুরু করা হয়েছে। ঢাকা-মাওয়া, মাওয়া-ভাঙ্গা ও ভাঙ্গা থেকে যশোর। পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচল করার জন্য প্রাথমিকভাবে মাওয়া-ভাঙ্গা অংশকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। পদ্মা সেতুর সড়কের সঙ্গে ট্রেনের এই অংশটুকুই চালু হওয়ার কথা ছিল। বর্তমানে সেখান থেকে সরে এসে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে নতুন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বর। যদিও ঢাকা থেকে মাওয়া অংশের কাজ ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার কথা।

সমপ্রতি পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেছেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি বর্তমান কাজের গতি নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ২০২২ সালের জুনের মধ্যে মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ করার ভাবনা এখনো তাঁর আছে। মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই আগামী বছরের জুনে সড়কপথের সঙ্গে রেলপথ চালু করতে। সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত আলোচনা চলছে। যদি এই বছর ডিসেম্বর বা আগামী বছর জানুয়ারিতেও সেতুর রেলের অংশ বুঝে পাই, তাহলে জুনের আগে কাজ শেষ করতে পারব।’ সময়মতো রেলপথ বুঝে পাওয়া না গেলে বিকল্প পরিকল্পনা কী—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘(২০২২ সালের) জুনে না হলে ডিসেম্বরে বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে ট্রেন চালুর পরিকল্পনা আছে। তখন ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালানো হবে।’

গত ২৯ আগস্ট মেট্রো ট্রেনের পরীক্ষামূলক চলাচল উদ্বোধনের দিন উত্তরার দিয়াবাড়ীতে পদ্মা সেতুর রেল অংশের এই জটিলতা নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কালের কণ্ঠের কথা হয়। তিনি বলেন, ‘জুনে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হবে। এর মধ্যে সেতুতে রেলের কাজ শেষ না হলে আমরা অপেক্ষা করব না।’

যদিও একই দিনে ট্রেন চালুর বিষয়ে এখনো আশাবাদী রেলপথমন্ত্রী। তাই সেতুর উদ্বোধন পিছিয়ে দেওয়া হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে নূরুল ইসলাম সুজন পরিষ্কার করে কোনো জবাব দেননি। তিনি বলেন, ‘সড়কের সঙ্গে একই দিন রেলপথ চালু হোক এটাই চাইব। তা ছাড়া সড়কপথ আগে চালু হলে সেতুর রেলপথে কমপন তৈরি হবে। এতে রেল অংশে কংক্রিটের ঢালাই ও রেললাইন বসাতে অসুবিধা তৈরি হতে পারে। আমরা এখনো জুনেই রেলপথের কাজ শেষ করতে চাই। জুনে চালু না হলে ডিসেম্বরে ট্রেন চালু হবে।’

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, মাওয়া-ভাঙ্গা অংশে রেল চালু হলে যাত্রীদের তেমন আহামরি লাভ হবে না। এতটুকু জায়গায় যাত্রী খুবই কম পাওয়া যাবে। পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলছে এটা দেখার জন্যই এই অংশকে শুরু থেকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এখন যদি সেটাও না হয় তাহলে চোখে দেখে সুখ পাওয়ার লাভটাও থাকছে না। সড়ক ও রেলপথ একসঙ্গে চালু করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।

পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সেতুর জাজিরা ও মাওয়া প্রান্ত থেকে রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে মাওয়া প্রান্তে ১.৭ কিলোমিটার রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। জাজিরার উড়াল পথে (ভায়াডাক্ট) চলছে রেললাইন বসানোর কাজ। পদ্মা সেতু ও সেতুর সঙ্গে যুক্ত উড়াল পথের রেললাইনে কোনো পাথর থাকবে না। এই পথে রেললাইনের স্লিপার ও রেলপাত বসিয়ে আবার কংক্রিটের ঢালাই করা হবে। পরে ‘গ্যাং ট্রেন’ দিয়ে লাইনকে চূড়ান্ত রেলপথে রূপ দেওয়া হবে। প্রকল্পে নিয়োজিত চীনা এক প্রকৌশলী বলেন, ‘দুই মাসের মধ্যে চার কিলোমিটার রেললাইন বসানোর পরিকল্পনা নিয়ে এই মুহূর্তে কাজ চলছে।’

রাজধানীর কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা, কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, লৌহজং, পদ্মা সেতু, শরীয়তপুরের জাজিরা, মাদারীপুরের শিবচর, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, নড়াইল, মাগুরা হয়ে যশোর পর্যন্ত এই রেলপথে ২০টি স্টেশন থাকবে। সর্বশেষ আগস্ট পর্যন্ত পদ্মা সেতু সংযোগ প্রকল্পের মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৬৯ শতাংশ। আর ঢাকা-মাওয়া অংশের কাজের অগ্রগতি ৪০.৫০ শতাংশ। ফলে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত কাজের গড় অগ্রগতি ৫৪.৭৫ শতাংশ। আর ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত পুরো কাজের মোট অগ্রগতি হয়েছে ৪৩.৫০ শতাংশ।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com