ব্যস্ত জীবন থেকে সামান্য ছুটি পেলেই আমাদের মন ছুটে যেতে চায় কোন এক দূর অজানায়। ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল-কলেজের ছুটির সময়টা আর কর্মজীবিদের সপ্তাহের ছুটির দুইদিন ট্যুরের জন্য একবার হলেও মন কাঁদে। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় তখনই যখন নিজের চাহিদা মত ট্যুরের ইভেন্ট পাওয়া যায় না। কোনো ইভেন্টের খরচ অতিরিক্ত, কোনো ইভেন্টের মান নিয়ে সন্দেহ আবার অনেক সময় তো চলে ইভেন্টের নামে ভাঁওতাবাজি। সেই সাথে আপনি হয়তো যেতে চাচ্ছেন সাজেক কিন্তু সেই সময়ে বেশিরভাগ ইভেন্ট কক্সবাজারে। এইসব সমস্যার ভিড়ে মনমত ইভেন্ট পেলে তো ভালো নাহলে নিজেই হয়ে উঠুন আপনার ট্যুরের ম্যানেজার।
ট্যুর ম্যানেজার শব্দটা অনেকের কাছে আতঙ্কের। কেউ ভাবছেন এত প্রেশার কে নিবে আবার কারও চিন্তা ট্যুর ম্যানেজার হলে ট্যুরের মজা পাওয়া যায় না। কিন্তু এসব নিতান্তই ভুল ধারণা। সামান্য কিছু নিয়ম মানলেই আপনিও একজন সফল ট্যুর ম্যানেজার হিসেবে ট্যুর পরিচালনা করে ফেলতে পারবেন। এজন্য কারও ওপর নির্ভর করা লাগবে না আপনার।
আসুন আমরা একে একে ট্যুর ম্যানেজার হওয়ার গুণাবলী নিয়ে আলোচনা করি :
১। প্রথমত ঠিক করে নিন কোথায় যেতে চান। সমুদ্র দেখতে চাইলে কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সেন্টমার্টিন যাবেন নাকি একটু নিরিবিলিতে মহেশখালী বা কুতুবদিয়া চলে যাবেন তা ভেবে নিন। আবার যদি পাহাড়-ঝরনায় যেতে চান সেক্ষেত্রেও ভেবে নিন আমিয়াখুম-নাফাখুমের দিকে যাবেন নাকি সংক্ষেপে চন্দ্রনাথ, নাপিত্তাছড়া ঘুরে আসবেন। আপনাকে আগেই স্পট নির্দিষ্ট করে নিতে হবে।
২। বর্তমান তথ্য-প্রবাহের যুগে প্রায় সব পর্যটন অঞ্চল নিয়েই ইন্টারনেটে প্রচুর লেখালেখি, ভিডিও আছে। কিছুটা সময় নিয়ে কিছু লেখা পড়ুন বা ভিডিও দেখুন।
৩। লেখা পড়া বা ভিডিও দেখার সময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নোট নিয়ে ফেলুন। যেখানে যাবেন সেখানে যাতায়াতের উপায় ও ভাড়া, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা, নিরাপত্তা, ঘুরতে কত সময় লাগে ইত্যাদি বিষয়গুলো নোট নিন ও মাথায় রাখুন।
৪। একা যদি ট্যুর দেন সেক্ষেত্রে এক হিসাব আর যদি কয়েকজন মিলে যান সেক্ষেত্রে হিসাব আলাদা। এই বিষয়টা নিশ্চিত হয়ে নিন কয়জন যাচ্ছেন সেই হিসাবে প্ল্যান করুন। বাজেট, হোটেলে থাকা ইত্যাদি নির্ভর করবে কতজন যাচ্ছে তার ওপর।
৫। ছুটির দিনগুলোতে যেহেতু ভিড় বেশি হয় তাই বাস বা ট্রেন যেভাবেই যান টিকিট কেটে ফেলুন। লঞ্চে কেবিন নিলে বুকিং দিয়ে ফেলুন। যারা আপনার সাথে ট্যুরে যাবে তাদেরকে আগে থেকে বাজেট জানিয়ে দিন ও ট্যুরের আগে বাজেটের টাকা আপনার জিম্মায় বা আপনাকে আরো যে সাহায্য করবে তার জিম্মায় নিয়ে রাখুন কারণ ট্যুর চলাকালীন বারবার টাকা চাওয়া বেশ বিব্রতকর।
৬। টিকিট কাটার সময়টাতেই যেখানে যাবেন সেখানে থাকার পরিকল্পনা থাকলে হোটেল বা কটেজগুলোতে খোঁজ-খবর নিয়ে লোক অনুযায়ী রুম বুকিং দিয়ে দিন।
৭। আপনার ট্যুর কি ব্যাকপ্যাক ট্যুর নাকি রিল্যাক্স ট্যুর সেই ব্যাপারটাও ঠিক করতে হবে। সেইসাথে আপনার সাথে কি আপনার বন্ধু-বান্ধব যাচ্ছে নাকি স্বল্প পরিচিত কেউ যাচ্ছে সেই অনুযায়ী আপনার ট্যুরের খাওয়া-দাওয়া, হোটেলের রুম ঠিক করবেন।
৮। ট্যুরে কোথায় কি খরচ হচ্ছে এবং তা প্ল্যান মোতাবেক হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখুন। যেহেতু আপনি নতুন ট্যুর ম্যানেজার তাই সাথে একটা ছোট নোটপ্যাডে বা মোবাইলে কোথায় কি খরচ হচ্ছে টুকে রাখুন এতে পরে হিসাব মিলাতে আপনারই সুবিধা হবে।
৯। ট্যুরে কোথায়, কখন যাবেন আগে থেকে ঠিক করে রাখুন, অভ্যন্তরীন যাতায়াতের জন্য গাড়ি ঠিক করে রাখুন এবং চেষ্টা করুন কোন স্পটে যাতে অতিরিক্ত সময় ক্ষেপণ না হয় যার ফলে অন্য স্পট মিস হয়ে যায়।
১০। ট্যুর মেম্বারদের চাহিদা, সমস্যার দিকে খেয়াল রাখুন। নতুন কোন পরিকল্পনা করলে তাদের পরামর্শ নিন বা আপনার কোন সমস্যা হলে তাদের জানান। সবাই আপনার সাথে বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করলে আপনার জন্যেও কাজ সহজ হয়ে যাবে। ফেরত আসা পর্যন্ত ট্যুরমেটদের সাথে কোন প্রকার মনোমালিণ্য মনোমালিন্য যাতে না হয় সেই চেষ্টা করুন।
পরিশেষে একটি সফল ট্যুর পরিচালনা করতে আপনার প্রয়োজন বেশ খানিকটা ধৈর্য, একটু সাহস, কিছুটা পরিশ্রমী মানসিকতা ও ট্যুরের প্রতি ভালোবাসা। আপনার সামান্য পরিশ্রমের ফলে যদি আপনি নিজের মনমত একটা ট্যুর দিতে পারেন তবে কি দরকার অন্যের আশায় বসে থাকার। নিজেই নিজের মত ট্যুর দিয়ে আসুন।
আমাদের ‘ট্যুর ম্যানেজমেন্টের আদ্যোপান্ত’ সিরিজের পরবর্তী লেখাগুলোতে বিভিন্ন ধরণের ট্যুর ম্যানেজমেন্টের বিষয়ে আলাদা আলাদা করে আলোচনা করা হবে।
কোথাও বেড়াতে গেলে অবশ্যই ময়লা-আবর্জনা ফেলে নোংরা করবেন না। আমাদের দেশ আমাদেরই পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
মোঃ আল–আমিন রাকিব (তনয়)