শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৩০ অপরাহ্ন
Uncategorized

টেকসই পর্যটনের প্রত্যাশা

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৫ অক্টোবর, ২০২১

আমাদের দেশে যেমন আছে পাহাড়পুর, ময়নামতি, পুঠিয়া, বাগেরহাট আর সোনারগাঁর মতো ইতিহাসের সাক্ষীস্বরূপ সব পর্যটনকেন্দ্র, তেমনি আছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর উৎকর্ষের সব লীলাভূমি। কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ অবিচ্ছিন্ন সমুদ্রসৈকত, প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, পতেঙ্গা ও কুয়াকাটার সমুদ্রসৈকত, সিলেটের মালনীছড়াসহ অন্যান্য স্থানের চা–বাগান, জাফলংয়ের পাথুরে জলাভূমি, বান্দরবান ও রাঙামাটির পার্বত্য এলাকা—এসব স্থানের সব কটিই বহু বছর ধরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে।

বিছানাকান্দি

বিছানাকান্দি

তবে আজকাল সরকারি–বেসরকারি এমনকি ব্যক্তিগত উদ্যোগেও একটু প্রত্যন্ত, দুর্গম আর অন্য রকম পর্যটনস্থলগুলো সবার পছন্দের শীর্ষে উঠে এসেছে। যোগাযোগব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো হওয়ায় আজকাল মানুষ রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, বান্দরবানের নাফাখুম, দেবতাখুম বা অমিয়াখুম জলপ্রপাত, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, কিশোরগঞ্জের নিকলীর হাওর, রাঙামাটির সাজেক ভ্যালি ইত্যাদি জায়গায় অনায়াসেই চলে যাচ্ছে দল বেঁধে। আবার নির্দিষ্ট কিছু উৎসব, যেমন চাকমা জনগোষ্ঠীর বিজু উৎসব, মণিপুরী রাস উৎসব, গারো জনগোষ্ঠীর ওয়ানগালা অনুষ্ঠানের সময়ে পর্যটনকেন্দ্র হয়ে ওঠে সেই স্থানগুলো।

টাঙ্গুয়ার হাওর

টাঙ্গুয়ার হাওর
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

এবারের বিষয় ‘ইনক্লুসিভ গ্রোথ’–এর অর্থ আসলে পর্যটনের মাধ্যমে প্রাপ্ত আর্থসামাজিক উপকারিতা এবং সুযোগ-সুবিধা যেন সবার মধ্যে সমবণ্টন হয়, সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করা। বিশেষত, এমনটা যাতে মোটেই না হয়, পর্যটন স্থলের নিজস্ব জনগোষ্ঠী অর্থকষ্টে ভোগার সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনাহীন পর্যটন তরিকার মাশুল গুনবে দূষণ আর কোণঠাসা জীবনের দিনপঞ্জিতে, অথচ লাভের গুড় খেয়ে যাবে সুযোগসন্ধানী পিঁপড়েরা।

পর্যটনের মাধ্যমে স্থানীয়দের জীবনমানের উন্নয়ন আবশ্যক

পর্যটনের মাধ্যমে স্থানীয়দের জীবনমানের উন্নয়ন আবশ্যক

দুঃখের বিষয় হলো, সাজেক ভ্যালিতে যেমন একদিকে লকডাউন উঠলে রাতে থাকার সব জায়গা বুকড হয়ে যায়, সেই একই জায়গায় স্থানীয় নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা অর্থকষ্টে ভুগে ত্রাণের আশায় পথ চেয়ে থাকে। পর্যটনস্থলের গণমানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিষয়ে আজকের এই পর্যটন দিবসে যদি সর্বতোভাবে অঙ্গীকার না করা হয়, তবে শুধুই পরিবেশদূষণ ও স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহতকরণ ঘটবে ক্রমাগত, আর কিছুই না। কেবল অতিরিক্ত যানবাহনের চলাচলের কারণে টায়ারের ঘর্ষণে যে প্লাটিক কণা মিশে যাচ্ছে পর্যটনকেন্দ্রগুলোর নির্মল নদী–হাওরে, তা অত্যন্ত ভীতিকর বলে গবেষকেরা জানান। জলাভূমির বাস্তুতন্ত্রকে মারাত্মক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে এই প্লাস্টিকের সামগ্রী যত্রতত্র ফেলা থেকে আইন করেই হোক আর যেভাবেই হোক, পর্যটকদের নিরস্ত করতেই হবে।

জাফলং

জাফলং

বিভিন্ন গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয়ভাবে ইকো ট্যুরিজম নীতি গ্রহণ করলেই কেবল প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশে সুনৈতিক এবং টেকসই পর্যটনশিল্প গড়ে উঠতে পারে। ইকো ট্যুরিজমের মূলনীতিতে প্রকৃতি ও মানবগোষ্ঠীকে যথাসম্ভব কম প্রভাবিত বা অনুরণিত করে পর্যটন নিশ্চিত করা হয়। ইকো ট্যুরিজমে আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিষয় খুব জোরালোভাবে থাকায়, এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘ইনক্লুসভ গ্রোথ’ বা সবার অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ব্যাপারটিও প্রতিফলিত হয় ভালোভাবে।

কলাতলী বা ইনানী সৈকত আজ এক আবর্জনার স্তূপ। সেখানে শব্দ দূষণ আর পানি দূষণ করতে থাকা পর্যটকের দল একসময় ঠিকই বুঝতে বাধ্য হবে তাদের কুকর্মের ফল। কিন্তু তার আগেই আমরা সবার কাছে সুনৈতিক ও টেকসই পর্যটনের সুফলের গল্পগুলো পৌঁছে দিতে পারলে আমাদের সবারই মঙ্গল।

কক্সবাজার

কক্সবাজার

আজকের দিনে তাই আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক, যেন আমরা কোনো বর্জ্য ফেলে প্রকৃতিকে দূষিত করব না, স্থানীয় বাসিন্দাকেও বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকব, ক্ষতি করব না জীববৈচিত্র্যের। সুনীতি আর টেকসই নিয়মে এগোলে দেশের পর্যটনশিল্প আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত, হবে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং আর মিলবে অর্থনৈতিক সাফল্য।

প্রথম আলো

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com