যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতিমান টাইম সাময়িকীর করা ২০২৫ সালের বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় আছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও সামাজিক উদ্যোক্তা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ‘টাইম–১০০’ শীর্ষক এই তালিকায় অধ্যাপক ইউনূসকে ‘লিডার বা নেতা’ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। তালিকায় বিশ্বনেতা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, উদ্ভাবক ও সাংস্কৃতিক আইকনদেরও নাম রয়েছে।
৬টি ক্যাটাগরিতে মোট ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম প্রকাশ করে মার্কিন এই সাময়িকী। নেতাদের তালিকায় অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেইনবাউম, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, ‘লৌহমানবী’ খ্যাত ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো, মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কসহ ২১ জন।
অর্থনৈতিক খাতসহ ড. ইউনূস এ স্বীকৃতি পেয়েছেন সামাজিক পরিবর্তন ও মানবিক নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন। ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের পর একটি স্বচ্ছ ও মানবিক নেতৃত্বের প্রত্যাশায় বাংলাদেশি জাতি যখন আশাবাদী, তখন ড. ইউনূস হয়েছেন গণতন্ত্রের পথপ্রদর্শক।
টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের ভূমিকা, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তার ক্ষুদ্রঋণ মডেলের বিস্তার ও নারীর ক্ষমতায়নে তার অনন্য অবদান বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
টাইমে প্রকাশিত তালিকায় স্থান পাওয়া প্রত্যেক ব্যক্তি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত একটি লেখা প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। তিনি লিখেছেন, গত বছর ছাত্রদের নেতৃত্বে এক অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের কর্তৃত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর দেশটিকে গণতন্ত্রের পথে পরিচালিত করতে এগিয়ে আসেন পরিচিত নেতা শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস।
হিলারি ক্লিনটন লিখেছেন, ‘কয়েক দশক আগে ইউনূস বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীগুলোর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে। এর মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষকে, যাঁদের ৯৭ শতাংশ নারী, তাঁদের ব্যবসা গড়ে তুলতে, পরিবার টিকিয়ে রাখতে ও মর্যাদা ফিরে পেতে সাহায্য করেন তিনি। ইউনূসের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল যখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে একই ধরনের কর্মসূচি চালু করার লক্ষ্যে তৎকালীন গভর্নর বিল ক্লিনটন ও আমাকে সাহায্য করার জন্য আরকানসাস সফর করেছিলেন। এর পর থেকে আমি বিশ্বের যেখানেই গেছি, সেখানেই তাঁর কাজের অসাধারণ প্রভাব দেখেছি। তাঁর এই কাজ মানুষের জীবন বদলে দেয়, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর উন্নতি ঘটায় এবং ঘুরে দাঁড়ানোর আশা জাগায়।’
হিলারি ক্লিনটন লিখেছেন, ‘এখন ইউনূস আরও একবার তাঁর দেশের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশকে নিপীড়নের ছায়া থেকে বের করে আনার পাশাপাশি মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করছেন, জবাবদিহির ব্যবস্থা করছেন এবং একটি ন্যায্য ও মুক্ত সমাজের ভিত্তি স্থাপন করছেন।’