শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪৮ অপরাহ্ন
Uncategorized

জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি

  • আপডেট সময় সোমবার, ৩০ আগস্ট, ২০২১
বাঙালি তথা সাহিত্যপ্রেমী মানুষের কাছে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি একটি তীর্থস্থানের মতো । কলকাতার ৬নং দ্বারকানাথ সড়কের এ গলিটির নাম ছিল মেছো কলোনি । কালের বিবর্তনে এটি এখন বিখ্যাত জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি নামে পরিচিত । এ বাড়িতেই ১৮৬১ সালের ৭ মে এবং বাংলা ১২৬৮সালের ২৫ বৈশাখ জম্ম হয়েছিল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের । মূল ফটক দিয়ে ভেতরে ঢোকার রাস্তার ঠিক বাম দিকে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় । রবীন্দ্রভারতীর সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটি বড় চালতা গাছ । তার ছায়ায় আশ্রিত কামিনীসহ নাম না জানা অনেক ফুলের সমারোহ । সবুজ গাছের ঝোপের আড়ালে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে লাল দালান । এ বাড়িতে সংসার পেতেছিলেন রবীন্দ্রনাথ । ডানপাশে বাগান পেরিয়ে সারি সারি ঘর । এখানে রবীন্দ্র ভারতীর ক্লাস বসে ।
প্রিন্স দ্বারকানাথের বিলাসবহুল বাড়ির গেটের দুই পাশে দাঁড়িয়ে আছে দুটি মুর্তি । এক পাশে রবীন্দ্রনাথের, অন্য পাশে প্রিন্স মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের । সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠতে কানে ভেসে আসবে ক্ষীন শব্দের রবীন্দ্রসংগীত । এ বাড়িতে ঢোকার পর কেবলই মনে হতে থাকে এ বাড়ির মাটিতে একসময় রবীন্দ্রনাথ হেঁটেছেন-খেলেছেন । ডান পাশের লাল বাড়িটির দোতালার চৌকাঠ পেরিয়ে ঢুকতেই রবীন্দ্রনাথের বসার ঘর । একটি টি-টেবিল ঘিরে তিনটি আরাম কেদারা বিছানো রয়েছে। এ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলে বিরাট এক ঘর । এখানেই আলমারি দিয়ে পার্টিশন করে তিনটি ঘর করা হয়েছিল । মৃনালিনী দেবীর শেষ শয্যা এখানেই পাতা হয়েছিল । এ ঘরটির পেছনের সাদামাটা কক্ষটির উওর পাশজুড়ে খোলা জানালা । পশ্চিমে একটি বেলজিয়াম, আয়নার ড্রেসিং টেবিল । একটি সেলফে একনো সাজানো আছে রূপার বাক্স। রবীন্দ্রনাথ রূপার গ্লাস এবং কয়েকটি বিলেতি শো-পিচ । যা রবীন্দ্রনাথ বিলেথ থেকে আসার সময় সঙ্গে এনেছিলেন । রুমটির একটি দেয়াল মৃনালিনীর একটি বড় ছবি বাঁধানো । তার নিচে মৃনালিনীর নিজের হাতে রবীন্দ্রনাকে লেখা একটি পত্র রয়েছে । অন্য দেয়ালে রয়েছে কবির নিজ হাতে লেখা বিয়ের নিমন্ত্রন পত্র ।
সামনে বড় বারান্দা। এ বারান্দাতেই মৃনালিনী দেবী ভাসুরপো বলেন্দ্রনাথের কাছে সাহিত্য পড়া শুনতেন। সিড়িঁ দিয়ে নেমে একটু ঘুরে অপর পাশ দিয়ে অন্য সিঁড়ি বেয়ে যেতে হয় অন্য দালাণে । এখানে প্রথম ঘরটিতে রয়েছে কবির ব্যবহৃত পোশাক । একটি বড় আয়না । বারান্দা ঘুরে অন্য ঘরে গেলে স্তব্ধ হয়ে যেতে হয় । এখানেই কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন । দেয়ালে টাঙানো রয়েছে কয়েকটি ছবি । যা তার রোগশয্যায় চিহৃমাত্র । এর পেছনের ঘরটিতে পর্দা টেনে কবির শেষ অপারেশন করানো হয়েছিল । আরও সামনের ঘরটি কবির লেখার ঘর ।
প্রতিটি ঘরে রয়েছে ঠাকুরবাড়ির ব্যবহৃর সে সময়কার অনেক স্মৃতি । কলকাতা মিউনিসিপ্যালিটির দেওয়া একটি বিরাটাকার ব্রাভিয়া টেলিভিশন রাখা আছে । এখানে দেখানো হয় ঠাকুর পরিবারের ঐতিহ্য ও কয়েক পুরুষের তোলা ছবি । এছাড়া একটি ঘরের দেয়ালজুড়ে বড় বড় ছবি বাধাঁনো রয়েছে । এখানে পর্যায়ক্রমে প্রিন্স দ্বাকানাথ থেকে রবীন্দ্রনাথের নানা বয়সের ছবি রয়েছে । সামনের বারান্দায় একটি টেবিলে কাচে ঘেরা রয়েছে একটি ট্টেন ।
শান্তিনিকেতন থেকে শেষ যে ট্টেন জোড়াসাঁকো এসেছিলেন । সে ট্টেনটির একটি রেল্লিকা তৈরী করে ইন্ডিয়ান রেলওয়ে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িকে উপহার দিয়েছেন। ছোট্ট সিড়ি ডিঙিয়ে যেতে হয় অন্য বাড়িতে । সেখানে হিজি অবস্থা । কোন কোন ঘরে চাকর –বাকর থাকতেন । কোন কোন ঘরে গল্পের মজলিস বসত । কোথাও রয়েছে বুদ্ধদেবের মুর্তি । তিব্বত থেকে কবিকে দেওয়া বিভিন্ন উপহার-সামগ্রী । চায়নার বন্ধুদের সঙ্গে তোলা কবির অনেক ছবি । কখনও লাঠিয়াল বেসে, কখনও হাতির পিঠে, রবীন্দ্রনাথ এবং শিকাগোর কবিদের সঙ্গে তোলা বিভিন্ন পোজের ছবি । সিড়ি বেয়ে তিন তলায় উঠলে চোখে পড়বে একটি কক্ষ এখানে প্রিন্স দ্বারকানাথের ছবি বাধানো আছে ।
এছাড়া আছে কিছু বই পত্র ও শাস্ত্রীয় বই । এ ঘরটিতে কবিমাতা সারদা দেবী তাসের আসর জমাতেন সখীদেও সঙ্গে । দেবেন্দ্রনাথের কক্ষে এখনো রয়েছে কুচ -কুচে কালো একটি মজবুত খাট । পাশের সেলফে রাখা আছে জমিদারীর কিছু নথিপত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র । এছাড়া শাস্ত্রী বইও রাখা আছে । তিন তলা থেকে সোজা নেমে জুতা সংগ্রহ করে আবার যেতে হবে অভ্যর্থনা কক্ষে । এখানে কোন রকম সংরক্ষন নেই । সোজা পথ ধরে হাঁটতে থাকলে হাতের বাম দিকে চোখে পড়বে একটি গ্যারেজ । এখানে একটি গাড়ি রাখা আছে কালো রংয়ের । এটি মূলত রবীন্দ্রনাথের ব্যবহার করা গাড়ি ।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com