1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
জেমস বন্ড দ্বীপে একদিন
বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৬:১৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
সস্তায় বিদেশ ভ্রমণ: স্বপ্নকে সত্যি করার বিজ্ঞানসম্মত গাইড ব্রিটেনে ভিসা বদল, বাংলাদেশিদের জন্য কী পরিবর্তন ক্রিপটিক গর্ভাবস্থা – যখন নিজেই জানেন না আপনি গর্ভবতী পর্যটন ভিসায় বিদেশ গিয়ে কাজ করলে কী কী শাস্তি হতে পারে স্পা থেকে সিনেপ্লেক্স , যা যা আছে বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল বিমানবন্দরে তিন বছরে পাঁচ লাখ কর্মী নেবে ইটালি, সুযোগ পেতে পারেন বাংলাদেশিরাও চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ইইউতে অভিবাসী কমেছে ২০ ভাগ, শীর্ষে বাংলাদেশিরা মালয়েশিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর সমুদ্রপথে অবৈধভাবে ইউরোপ প্রবেশে শীর্ষে বাংলাদেশ ভারতের এই গ্রামে মেয়েদেরকে কাপড় ছাড়াই থাকতে হয়

জেমস বন্ড দ্বীপে একদিন

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৩

ফাং নাগা নামের ছোট্ট ভিন্ন একটা দ্বীপ। দ্বীপটি থাইল্যান্ডের পর্যটন শহর ফুকেট থেকে প্রায় দুই ঘণ্টার দূরত্বে। সরাসরি ফুকেট থেকে নৌকায় কিংবা গাড়িতে করে পাতং জাহাজ ঘাট এবং সেখান থেকে সমুদ্রগামী জাহাজে চমৎকার একটি ভ্রমণ করতে পারেন ফাং নাগা দ্বীপে।

২৩ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৭টায় ফুকেট দি রয়্যাল পাম ইন্টারন্যাশনাল হোটেল থেকে খুলনা প্রেস ক্লাব সভাপতি এস এম হাবিবের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের টিম মাইক্রোবাসে রওনা হলাম। অ্যাডভেঞ্চার সহায়ক পোশাক পরে প্রায় ঘণ্টাখানেক পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে পৌঁছলাম পাতং জাহাজ ঘাটে। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষমাণ বিভিন্ন দেশের পর্যটক। গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে আমাদের সবার গায়ে ইংরেজি পি অক্ষরের স্টিকার লাগিয়ে দেয়া হলো। অপেক্ষায় থাকলাম। এ সুযোগ অনেকেই সাগরভ্রমণ উপযোগী কেনাকাটা সারলেন।

৯টা থেকে ফুকেট পাতং জাহাজ ঘাট থেকে রওনা দিয়ে বিকাল ৫টা নাগাদ আবার ঘাটে ফিরে আসা পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষণেই ছিল কঠোর শৃঙ্খলা আর প্রকৃতিপ্রেম। অজানাকে জানার অদম্য কৌতূহল এবং আগ্রহের পাশাপাশি আনন্দ-উল্লাস এবং মজা করার সব উপকরণ। বাহারি খাবারে ঠাসা ছিল প্রমোদতরীটি। ভারতীয়, জাপানি, আমেরিকান, অস্ট্রেলীয় ও ইউরোপীয় পর্যটকেরা সবাই মিলেমিশে খাওয়া-দাওয়া, গল্পগুজব, হৈ হুল্লোর, ছবি এবং সেলফি উৎসবে যাত্রাকে আরো রোমাঞ্চিত করে তুলল।

শুরুতে নির্দেশ মোতাবেক সবাই লাইফ জ্যাকেট পরে নিলাম। মাঝে মধ্যে প্রমোদতরী জাহাজ থেকে দ্বীপটির বর্ণনা এবং করণীয় সম্পর্কে লম্বা-চওড়া বয়ান থাই এবং ইংরেজি ভাষায়। আন্দামানের বুকচিরে আকাশছোঁয়া পাথরের পাহাড়গুলোর বাঁক ছাড়িয়ে চলতে থাকে জাহাজটি। চোখ দিয়ে যতটা সৌন্দর্য গেলা যায় আর ক্যামেরাবন্দী করা যায়, সেদিকে ডুবে থাকেন সবাই। দুধের মতো ফেনিল জলরাশি ছড়িয়ে নীল সমুদ্রের বুকচিরে ২ ঘণ্টা উত্তাল আন্দামান সাগরের নীল জলরাশি কেটে জাহাজটি যখন স্বপ্নের সেই জেমস বন্ড আইল্যান্ডে পৌঁছল, তখন দুপুর। আরো বেশ কয়েকটি জাহাজ তখন জেমস বন্ডে। ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে আমরা নেমে পড়লাম সেই জেমস বন্ড আইল্যান্ডে। অন্য রকম এক অনুভূতি। সাদা, কালো, শ্যামলা, তামাটে, নানা বর্ণ ভাষা ও জাতির পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত জেমস বন্ড আইল্যান্ড যেন কানায় কানায় পরিপূর্ণ।

চার দিকে মোহ জড়ানো এক দ্বীপ। আশপাশের ছোট পাথরের পাহাড়গুলোর মাঝখানে রহস্যময় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক টুকরো প্রস্তর। গাছের সবুজ জঙ্গলে ঢাকা পড়েছে লালচে আকৃতির পাথরগুলো। সত্যি আশ্চর্য রহস্যময় সুন্দর। বেলনাকৃতির পাথরের চূড়ার সরু অংশটিই পানিতে। ধীরে ধীরে ওপরে প্রস্থে চওড়া হয়েছে। তবে বেশ গোছানো। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এক পর্বতচূড়া। এখানকার পাথরগুলো পিচ্ছিল। তাই সাবধানে পা ফেলতে হবে। সামান্য ভুল হলেই ধারালো পাথরে পা কেটে ঝরতে পারে রক্ত। স্মৃতি ধরে রাখার জন্য মেতে উঠল সবাই সেলফি আর ছবি তোলার উৎসবে।

দ্বীপের এই প্রান্তেই এসেছিলেন ব্রিটিশ অভিনেতা রজার মুর। ১৯৭৪ সালে জেমস বন্ড সিরিজের নবম ছবি ‘দ্য ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন গান’-এর দৃশ্যধারণ হয়েছিল এ দ্বীপে। এর পর থেকেই এর নাম জেমস বন্ড দ্বীপ। দুনিয়া কাঁপানো গোয়েন্দা চরিত্র জেমস বন্ড। পৃথিবীর সব বাঘা বাঘা গডফাদারকে কাবু করেন। এম সিক্সটিনের গুপ্তচর জেমস বন্ড সিরিজের তিন নম্বর এবং সাত থেকে নয় নম্বর ছবিগুলো পরিচালনা করেন গাই হ্যামিল্টন। এর মধ্যে নবম কিস্তি ‘দ্য ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন গান’-এর জন্য তিনি এসেছিলেন থাইল্যান্ডে। জেমস বন্ডের ভূমিকায় এটি ছিল রজার মুরের দ্বিতীয় ছবি। এর দৃশ্যধারণের পর থেকেই থাইল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের ফান এনজিএ দ্বীপের নাম হয়ে যায় জেমস বন্ড আইল্যান্ড।

দ্বীপটিতে জেমস বন্ডের রেপ্লিকা পাওয়া যায়। আছে ঝিনুক-শামুকের বিভিন্ন শোপিস। আছে মুক্তোর মালা। এই দ্বীপের একটি পাহাড় বেশ মসৃণ। কয়েক শ’ ফুট উঁচু পাহাড় যেন হেলে পড়েছে আরেকটির গায়ে। জেমস বন্ডের পরের আইল্যান্ড ফিকি আইল্যান্ড। আন্দামানের নীলজলে পাহাড় ও জঙ্গলভরা একটি দ্বীপ। নির্জনতার চাদরে এর আনাচে-কানাচে অনেক গা ছমছম করা গুহা। জাহাজ থামতেই রাবারের ছোট ডিঙ্গি নিয়ে নেমে পড়লাম এখানে। আন্দামানের অন্ধকার গুহায় ডিঙি চালানো আর ঘুটঘুটে গুহাগুলোয় বাদুরের কিচিরমিচির শব্দ এক বিরল অভিজ্ঞতা।

বড় পর্দায় এই পাহাড়ের সরু পথ ধরেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন এম সিক্সটিনের প্রতিনিধিরা। ১৯৭৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘দ্য ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন গান’ ছবির বাজেট ছিল ৭০ লাখ ডলার। এটি আয় করে ৯ কোটি ৭৬ লাখ মার্কিন ডলারেরও বেশি। বাংলাদেশী মুদ্রায় ৭৬৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকারও বেশি! এদিকে দ্বীপটি জেমস বন্ড নামকরণের সুবাদে থাইল্যান্ডের পর্যটন শিল্প প্রতি সপ্তাহে কত টাকা আয় করে, তা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের মিছিল দেখেই অনুমান করা যায়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com