বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১১ অপরাহ্ন
Uncategorized

জেমস বন্ড আইল্যান্ড’

  • আপডেট সময় রবিবার, ২১ মার্চ, ২০২১

‘ফুকেট’ থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। রাজধানী শহর ব্যাংকক থেকে ৮৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপনগরী থাইল্যান্ডের সব থেকে বড় দ্বীপ ও বটে। মালয় ভাষায় ‘তালাং’ অথবা ‘তানজুং সালাং’ নামে পরিচিত এই প্রদেশ ‘ফুকেট’ দ্বীপ বাদেও ছোট ছোট ৩২টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। থাইল্যান্ডের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত এই দ্বীপটি মূলত আন্দামান সাগরের মধ্যে পড়েছে, যা ‘সারাসিন’ নামক একটি ব্রিজের মাধ্যমে উত্তরে ‘ফাং নং’ প্রদেশের সাথে যুক্ত।

৫৭৬ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট এই দ্বীপ থাইল্যান্ডের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ রাজ্য, যা কিনা আয়তনে সিঙ্গাপুরের থেকে সামান্য ছোট। এই দ্বীপ এক আমলে ভারত এবং চীনের মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক রুট হিসেবে বহুদিন ব্যবহৃত হয়েছে। মধ্যযুগীয় পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, ব্রিটিশ এবং ফরাসী নাবিক গণের ডায়েরিতে বহুবার এই ফুকেট দ্বীপের কথা উল্লেখ থাকলেও এই দ্বীপ কখনওই কোন ইউরোপিয়ান শক্তির দ্বারা শাসিত হয়নি। পূর্বে এখানকার অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি ছিল টিন এবং রাবারজাত দ্রব্য যা পরবর্তীতে পর্যটন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়।

ফুকেটের বিখ্যাত পাতং বিচ, ছবিঃ ট্রিপ সাইলো ডট কম 
ফুকেটের বিখ্যাত পাতং বিচ, ছবি : ট্রিপ সাইলো ডট কম 

ফুকেটের দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে বলতে গেলে শেষ হবে না, কারণ এত এত স্থান রয়েছে প্রাণবন্ত এই দ্বীপটিতে। তারপরও দর্শনীয় স্থানের মধ্যে প্রথমেই বলতে হয় ফুকেট বিচের কথা যা স্থানীয়ভাবে পাতং বিচ নামেও পরিচিত। বিশাল স্বচ্ছ সমুদ্রের পাশের এই বালুকাবেলা আলোতে ঝিকিমিকি করে উঠে এক মায়াবী পরিবেশের সৃষ্টি করে। এই সৈকতে ব্যবস্থা রয়েছে বিভিন্ন ধরণের অ্যাডভেঞ্চার রাইডের এবং গেমসের, যেগুলোর মধ্যে সান বাথিং, স্নরকেলিং, সুইমিং, জেট স্কিইং, প্যারা সেইলিং, ব্যানানা রাইডিং ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

‘নই হারন’ এবং ‘কাটা নই’ বিচের মধ্যে অবস্থিত আর একটি পর্যটনপ্রিয় স্থান হচ্ছে ‘কাড়ন ভিউ পয়েন্ট’। এই পয়েন্টটি পর্যটকগণের নিকট খুবই জনপ্রিয় কারন এখান থেকে ‘কাটা নই’, ‘কাটা ইয়াই’ এবং ‘কাড়ন’-এই তিনটি বীচের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় এবং একইসাথে এই পয়েন্ট থকে আন্দামান সাগরের ভিউ এককথায় অতুলনীয়। থাই গ্রামীণ জীবনের আমেজ পেতে হলে যেতে হবে ‘কোহ পানইয়ী’ নামক সাজানো সুন্দর ছোট একটি গ্রামে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই ছিমছাম গ্রামে থাকলে এখান থেকে বের হয়ে আসতে মন চাইবে না কারোরই।

ফুকেট থেকে সারাদিন সময় নিয়ে ভ্রমণ করে আসা যায় ফি ফি আইল্যান্ড সমূহে। ফি ফি ডন এবং ফি ফি লে নামক এই দ্বীপপুঞ্জের সবথেকে বড় আকর্ষণ এখানকার অ্যাডভেঞ্চারাস ওয়াটার এক্টিভিটিজ এবং নীলচে সবুজ পানির সমুদ্র। ফুকেট শহর থেকে প্রতিদিনই এই আইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে ক্রুজ ছেড়ে যায়। স্নরকেলিং, সুইমিং, সারফিং, ডাইভিং ইন শারক পয়েন্ট, এনেমনে রিফ এবং কিং ক্রুজার রিফের মত বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চারাস এক্টিভিটিজ এবং রাইড উপভোগের জন্য ফি ফি আইল্যান্ডের জুড়ি মেলা ভার।

ফুকেটের ‘ফাং এনগা’ নামক পার্কের সন্নিকটেই অবস্থিত ‘জেমস বন্ড আইল্যান্ড’। জেমস বন্ড সিরিজের চলচ্চিত্রের কিছু অংশের শ্যুটিং এখানে হওয়ায় এই আইল্যান্ডের এমন নামকরণ। জেমস বন্ড আইল্যান্ডে সুইমিং এর পাশাপাশি কায়াকিং এবং সেইলিং এরও ব্যবস্থা রয়েছে। ফুকেট শহরের উত্তর দিকে রয়েছে ‘রাং হিল’ নামক একটি পাহাড় যেখান থেকে পুরো আইল্যান্ডের সৌন্দর্য মন ভরে উপভোগ করা যায়। রাং হিলে বাচ্চাদের খেলার জন্যে পার্ক, রেস্টুরেন্ট, বার এবং চত্ত্বর রয়েছে।

উতসবে ঐতিহ্যে ঘেরা ফুকেট প্রোভিন্স, থাইল্যান্ড, ছবিঃ থাই এয়ারওয়েজ 
উৎসবে-ঐতিহ্যে ঘেরা ফুকেট প্রোভিন্স, থাইল্যান্ড, ছবি : থাই এয়ারওয়েজ

ফুকেটে শুধুমাত্র দেখার মত স্থানই রয়েছে এমন নয়, ফুকেট তার বুকে ধারণ করে চলেছে হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী থাই সংস্কৃতিকে, নিজের সংস্কৃতি, কৃষ্টি, কালচার, ইত্যাদিকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে বিশ্ববাসীর নিকট। এখানে নানা ধরণের কালচারাল শো-এর মধ্যে ‘ফ্যান্টাসিয়া’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মূলত একটি বিশাল সাংস্কৃতিক প্রাঙ্গণে অনেক ধরণের শো হয়ে থাকে, যেগুলোকে একসাথে ‘কিংডম ফ্যান্টাসিয়া’ বলা হয়।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি নানা ধরণের মজার দুঃসাহসিক খেলা, মজার রাইড এবং থিম নির্ভর গ্রামগুলোতে ঘুরে বেড়ানো এবং বুফে ডিনারের সুযোগ রয়েছে এই কিংডম ফ্যান্টাসিয়াতে। ফুকেটের অন্যতম একটি উজ্জ্বল মাইলফলক হচ্ছে ‘বিগ বুদ্ধা’ নামক সাদা মার্বেল পাথর নির্মিত একটি বিশাল বৌদ্ধমূর্তি, যেখান থেকে ফুকেট শহর এবং তার আশেপাশের উপসাগর দেখার সাথে সাথে বিগ বুদ্ধর ইতিহাস সম্বলিত জাদুঘরেও ভ্রমণ করে আসা যায়।

এছাড়াও ফুকেটে দর্শনীয় স্থানের মধ্যে ওয়াট চালন, ফাং নং বে, বাংলা রোড, ফুকেট তরিকাই জাদুঘর, ফুকেট এক্যুরিয়াম, জুই তুই উপাসনালয়, লা মোয়েট ডে ক্রুজ, ফুকেট ওল্ড টাউন, কাটা নই বিচ, কোহ মাই তোন/হানিমুন আইল্যান্ড, রায়া আইল্যান্ড, নাই হরন বিচ, সুরিন বিচ, খাও রাং ভিউ পয়েন্ট, চালন বে রাম ডিস্টিলারি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

শপিং এবং খাবার-দাবারের জন্যেও ফুকেট জগতজোড়া বিখ্যাত। ফুকেটের কোহ পানইয় নামক গ্রামে গেলে পাওয়া যাবে জিভে জল আনা বেশ কিছু মুখরোচক খাবারের সমাহার। রাং হিলে অবস্থিত তুংকা ক্যাফে কিংবা ফুকেট ভিউ রেস্টুরেন্টের খাবারও বেশ ভালো। ফ্যান্টাসিয়া শো এর ভিতরের ‘গোল্ডেন কেনমারে’ বুফে এবং সুরিয়ামাস সি ফুড রেস্টুরেন্টের খাবারের স্বাদ বেশ প্রশংসনীয়।

ব্যতিক্রমধর্মী খাবারের মধ্যে টম ইয়াম গুং, মিস্টার হক্কি নুডলস, মাসামান কারি, ডিম সাম, গ্রিন কারি চিকেন, কানন জেন ফুকেট, খাও মুন গাই ইত্যাদির স্বাদ মুখে লেগে থাক্র মত। শপিংয়ের জন্যে ফুকেটে রয়েছে এক বিচিত্র ধরণের পণ্যের এক বিশাল সমাহার। পর্যটন স্থান হওয়ায় জিনিসের দাম একটু বাড়তি হলেও দামাদামি করে কেনাকাটার অভিজ্ঞতা থাকলে এখান থেকে জিনিস কিনেও বেশ লাভবান হতে পারা যায়। বিচের সাথেই কেনাকাটার জন্যে দোকান আছে, আর শহরের মধ্যে রয়েছে জাংসিলন, সেন্ট্রাল ফেস্টিভ্যাল ফুকেট, বোট এভিনিউ, ব্যানানা ওয়াক, জিম থম্পসন, ফুকেট ওল্ড টাউন হ্যান্ডিক্রাফটস শপ, কাড়ন বাজার এবং ফুকেট ওয়াকিং স্ট্রিট ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য শপিং মল এবং কেনাকাটার স্থান যেখান থেকে বিভিন্ন সব জিনিস ক্রয় করতে পারা যাবে।

কীভাবে যাবেন :

ঢাকা থেকে ব্যাংকক যাওয়ার বেশ কিছু এয়ারলাইন্স রয়েছে, যার মধ্যে এয়ার এশিয়া, লায়ন থাই এয়ার, নক এয়ার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়াও চট্রগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকেও থাইল্যান্ডগামী বিমান ছেড়ে যায়। থাইল্যান্ডগামী বিমানগুলো ব্যাংককের ‘ডন মুয়ান’ অথবা ‘সুবর্ণভূমি’ বিমানবন্দরে ল্যান্ড করে।

ব্যাংকক থেকে বিমানে, আসে কিংবা ট্রেনে ফুকেট যেতে পারবেন। ট্রেনে ফুকেট যেতে সময় লাগবে সবথেকে বেশি, আর বিমানে সময় লাগবে সবথেকে কম কিন্তু খরচ সবথেকে বেশি। সুবর্ণভুমি বিমানবন্দর থেকে ফুকেট পৌঁছতে সময় লাগবে দেড় ঘণ্টার মত। আর বাসে যাইতে চাইলে ব্যাংককের সাউদারণ বাস স্টেশন থেকে ভিআইপি ডিলাক্স বাসে ফুকেট যেতে পারবেন, সময় লাগবে ১১ থেকে ১২ ঘণ্টা।

 

সিফাত শরীফ

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

Like Us On Facebook

Facebook Pagelike Widget
© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com
%d bloggers like this: