শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৮ অপরাহ্ন

জাপানে চাকুরির সুযোগ: বাংলাদেশীরা বিনা খরচে যেভাবে যাবেন, যা করতে হবে

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৩

কোন ধরণের খরচ ছাড়াই দক্ষ শ্রমিক হিসেবে জাপানে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশীদের জন্য।

সম্প্রতি জাপানের সাথে জনশক্তি রপ্তানি বিষয়ক একটি চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ।

২০১৫ সালে জাপানে শ্রমের চাহিদা পূরণে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের কঠোর অভিবাসন নীতি শিথিল করে পার্লামেন্টে নতুন আইন পাস করা হয়। যেখানে বলা হয় যে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ৩ লাখ ৪৫ হাজার শ্রমিক নেয়া হবে।

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকেও শ্রমিক নেয়ার চুক্তি সই হয় দু’দেশের সরকারের মধ্যে।

তবে এই চুক্তি অনুযায়ী কি পরিমাণ জনশক্তি বাংলাদেশ থেকে নেয়া হবে সে বিষয়ে কোন নির্দিষ্ট তথ্য জানানো হয়নি।

প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রৌনক জাহান বলেন, “কি পরিমাণ শ্রমিক নেবে সেটা নির্ভর করবে আমাদের প্রস্তুতির উপরে। খুব বেশি পরিমাণ এক সাথে নেবে না। আস্তে আস্তে নেবে।”

বাংলাদেশ ছাড়াও থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, চীন, নেপাল, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার ও ফিলিপিন্স থেকে জনশক্তি নেবে জাপান।

প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জাহাঙ্গীর আলম জানান, নতুন এই চুক্তির আওতায় দক্ষ শ্রমিক হিসেবে জাপানে যেতে হলে কোন ধরণের অর্থ খরচ করতে হবে না।

তবে অনুমোদিত সংস্থাগুলো থেকে জাপানি ভাষায় দক্ষতা অর্জনে কিছু পরিমাণ ফি দিতে হবে।

তবে পেশার দক্ষতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত কাউকে ভাষা শেখার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে না।

পেশাগত দক্ষতা এবং ভাষা শিক্ষা শেষে চূড়ান্ত বাছাই অনুষ্ঠিত হবে জাপান দূতাবাসে। সেখানে তাদের অনুমোদিত সংস্থার মাধ্যমে সব ধরণের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

যেসব খাতে জনশক্তি নেয়া হবে

মোট ১৪টি খাতে লোক নেবে জাপান। এরমধ্যে কেয়ার গিভার অর্থাৎ যারা হাসপাতালে নার্স বা প্রবীণ নিবাসে সেবা দান করবেন এমন দক্ষ জনশক্তি প্রাধান্য পাবে।

রৌনক জাহান বলেন, জাপানে কনস্ট্রাকশন বা নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য বড় খাত উন্মোচিত হচ্ছে। কারণ এ খাতে বিভিন্ন ধরণের উপখাত রয়েছে যেখানে বাংলাদেশি শ্রমিকরা নিয়োগ পেতে পারে।

এ দুটি খাত ছাড়াও কৃষি শ্রমিক, পরিচ্ছন্ন কর্মী, যন্ত্রাংশ তৈরির কারাখানা, ইলেকট্রিক, ইলেক্ট্রনিক্স, জাহাজ শিল্প এবং গাড়ি নির্মান খাতসহ মোট ১৪টি খাতে জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ রয়েছে।

ভাষা শিক্ষা

জাপানে যেতে হলে জাপানি ভাষা জানতে হবে। এজন্য জাপানি ভাষার এন ফোর লেভেল পর্যন্ত জানতে হবে। জাপানি ভাষায় এন ফাইভ হচ্ছে প্রাথমিক পর্যায়। এর পরের ধাপ হচ্ছে এন ফোর লেভেল। অর্থাৎ জাপানি ভাষায় বলতে, লিখতে ও পড়তে জানতে হবে।

জাপানে যেতে হলে জাপানি ভাষা জানার সর্বনিম্ন স্ট্যান্ডার্ড এটি। এর পরে এন থ্রি বা এন টু জানলে সেটাকে অতিরিক্ত যোগ্যতা বলে ধরা হবে। এছাড়া জাপানে যাওয়ার পরও নিয়মিত ভাষার বিষয়ে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ থাকবে।

জাপানি ভাষা শেখার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে সারা দেশে ২৭টি ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে বলে জানাচ্ছেন কর্মকর্তারা।

ভাষা শিক্ষার সার্টিফিকেট পেতে বাংলাদেশে অবস্থিত জাপানের দূতাবাসে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে।

পেশাগত দক্ষতা

উল্লেখিত খাতে দক্ষ শ্রমিকরাই কেবল জাপানে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। জাপানে যেতে হলে প্রথমেই দক্ষতার পরীক্ষা দিতে হবে। দক্ষতায় টিকে গেলে শুরু হবে ভাষা শেখা।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যারা এরইমধ্যে বিভিন্ন পেশায় রয়েছেন এবং যাদের পেশাগত কাজের সার্টিফিকেট রয়েছে তারা দক্ষ শ্রমিক হিসেবে গণ্য হবেন।

তবে যাদের দক্ষতা রয়েছে কিন্তু সার্টিফিকেট নেই তারা পরীক্ষা দিয়ে সার্টিফিকেট নিতে পারবেন।

এছাড়া সরকার অনুমোদিত প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষতার সার্টিফিকেট সংগ্রহ করা যাবে।

এছাড়া নার্সিং ইন্সটিটিউটগুলোতে সেবা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

কৃষিকাজের ক্ষেত্রে যারা বিভিন্ন ডিপ্লোমা কোর্স করেছেন এবং সার্টিফিকেট রয়েছে তারা যেতে পারবেন। এছাড়া বিভিন্ন ইন্সটিটিউটে কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ নিয়েও সার্টিফিকেট সংগ্রহ করা যাবে।

জাপানে কর্মী সংকট চলছে বহু বছর ধরে

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,
জাপানে কর্মী সংকট চলছে বহু বছর ধরে

শারীরিক যোগ্যতা

দক্ষ শ্রমিক হিসেবে জাপানে যেতে হলে বয়স কোনভাবেই ৩২ বছরের বেশি হওয়া যাবে না।

স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে কোন ধরণের রোগ রয়েছে কিনা সেটিও নিশ্চিত করা হবে।

এছাড়া চারিত্রিক সনদ অর্থাৎ কোন আবেদনকারীর বিরুদ্ধে কোন ধরণের অভিযোগ রয়েছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।

আবেদনের পদ্ধতি

প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকলে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।

প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাপানে শ্রমিক পাঠিয়ে থাকে বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বা বিএমইটি।

এছাড়া জাপান সরকারের সাথে হওয়া নতুন জনশক্তি রপ্তানি চুক্তির আওতায় এরইমধ্যে ১১টি সংস্থাকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন মি.আলম।

এসব সংস্থার যোগ্যতা হলো বাংলাদেশ ছাড়াও জাপানে তাদের অফিস রয়েছে। এদের অনেকেই এরই মধ্যে ভাষা শেখানোর কার্যক্রম শুরু করেছে বলেও জানান মি. আলম।

মন্ত্রণালয়ের সচিব রৌনক জাহান বলেন, “রিক্রুটিং এজেন্সি হিসেবে যেসব সংস্থাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের জন্য নির্দিষ্ট গাউডলাইন আছে। আমরা সেগুলো কঠোরভাবে অনুসরণ করবো।”

সম্ভাব্য আয়

সব প্রক্রিয়া শেষ করে জাপানে যাওয়ার পর ভালো বেতনে কাজের সুযোগ রয়েছে বলে জানান মি. আলম।

তিনি বলেন, শ্রমিকদের বেতন নির্ভর করবে কোন শ্রমিক কোন ধরণের কাজে নিয়োগ পাচ্ছে তার উপর।

তবে এক জন দক্ষ শ্রমিক হিসেবে জাপানে যাওয়ার পর কাজের ধরণ ভেদে প্রতি মাসে বাংলাদেশী মুদ্রায় দেড় থেকে শুরু করে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের সুযোগ রয়েছে বলে জানান জাহাঙ্গীর আলম।

বিবিসি বাংলা

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com