শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩০ অপরাহ্ন

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে ইসরাত এখন মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

  • আপডেট সময় রবিবার, ১১ জুন, ২০২৩

ইসরাত জাহান যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেমফিসে অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি হিসেবে যোগদান করেছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ময়মনসিংহের মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজে ইংরেজি বিভাগে পড়েছেন তিনি।

ইসরাত জাহান এ বছর জানুয়ারি থেকে ইউনিভার্সিটি অব মেমফিসে সোশিওলজি বিভাগে অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, হয়তো দেশে সুযোগের অভাবে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাইনি, কিন্তু পড়ার আগ্রহ থেকে সরে যাইনি কখনো। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি বলে যে নিজেকে দুর্বল ভাবি, বিষয়টা এমন নয়। আমি বলব, নিজের প্রয়োজনেই নিজের দক্ষতার উন্নয়ন করতে হয়।

ইসরাত জাহান বলেন আর দশজনের মতো আমিও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে বেশ অনেকগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম। কয়েক জায়গায় ‘অপেক্ষমাণ তালিকা’য় নাম এসেছিলো। দিনের পর দিন অপেক্ষায় থাকার পর বুঝলাম, সুযোগ হবে না। তখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ময়মনসিংহের মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হই।

অন্যদের যখন প্রথম বর্ষের ক্লাস শেষ, আমাদের তখনো অনেক বইয়ের প্রথম অধ্যায়ই শেষ হয়নি। ২০১০ সালে ক্লাস শুরু করে আমরা ২০১৬ সালে স্নাতকের ফাইনাল পরীক্ষা দিই। কলেজে ইংরেজি নিয়ে পড়লেও আমার ইংরেজি বলা বা বোঝার মধ্যে অনেক ঘাটতি ছিল। ভালো ইংরেজি লিখতে পারতাম, কিন্তু ব্যবহারিক জ্ঞান ছিল কম। তবু কলেজের পাঠ্যক্রম খুব মন দিয়ে অনুসরণ করতাম বলে বিভাগের ফলাফলে সব সময় প্রথম হয়েছি। স্নাতকের শেষে এসে আর সবার মতো আমিও যখন সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নেব ভাবছি, তখন এক বন্ধুর সঙ্গে কথা হয়। সে তখন ভিনদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তাকে বললাম, ‘আমি কি পারব?’ সে বলল, চেষ্টা থাকলে যে কেউ পারবে। শুধু ভর্তির চাহিদাগুলো পূরণ করতে হবে।

নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শেষে ২০১৮ সাল থেকে বিদেশে পড়তে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। ভালো করে একটা ই–মেইল লিখতে পারতাম না, ইংরেজি বলতে ভীষণ ভয় পেতাম। এত সংকটের মধ্যে জিআরই পরীক্ষায় অংশ নিই। প্রথমবার খুব একটা ভালো স্কোর করতে পারিনি। দ্বিতীয়বার প্রস্তুতি নিতে নিতেই এমন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজে বের করি, যেখানে ভর্তির জন্য জিআরই স্কোর প্রয়োজন হয় না (করোনার জন্য এই সুযোগ দেওয়া হয়েছিল)। সব বিশ্লেষণ শেষে আবেদন পাঠালাম।

যেদিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেমফিস থেকে ই–মেইল পেলাম, আমি সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পূর্ণ তহবিলসহ (ফুল ফান্ডেড) পড়ার সুযোগ পেয়েছি, সেদিনের অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না। আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ সেই সব বন্ধুদের প্রতি, যাঁরা আমার সঙ্গে কথা বলে কিংবা ফেসবুকে লিখে সাহায্য করেছেন, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গিয়ে শুরুতে বেশ হিমশিম খেয়েছি। দেশে যেখানে অনেক সময় নিয়ে পড়ার সুযোগ পেতাম, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রে সবকিছুরই মনে হচ্ছিল সময়সীমা খুব কম। তবে ভালো দিক হলো, শিক্ষকেরা ভীষণ আন্তরিক। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করি। স্নাতকোত্তরে বাংলাদেশে নারী স্বাস্থ্য ও বৈষম্য নিয়ে গবেষণা করেছি। তিনি বলেন, এ বছর পিএইচডি গবেষণা শুরু করব। বাংলাদেশের নারীদের স্বাস্থ্য উন্নয়নে কীভাবে আরও কার্যকর উপায় বের করা যায়—সেটিই হবে আমার গবেষণার বিষয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com