জমকালো আয়োজনের মধ্যদিয়ে বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানালেন মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা। মালয়েশিয়া প্রবাসী তরুণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘বিডি এলিট ক্লাব’র আয়োজনে ১১ মে রাজধানী কুয়ালালামপুরে ক্রাফট কমপ্লক্সের এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামিম আহসান। বিশেষ বক্তা ছিলেন দেশটির পাহাং প্রদেশের সংসদের স্পিকার আলহাজ মো. সরকার শামসুদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন এলকিউআইডি এশিয়া প্যাসিফিক এসডিএন বিএইচডি’র নির্বাহী পরিচালক মো. ফারমেজুদ্দিন বিন নাজারুদ্দিন।
শনিবার (১১ মে) দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানে নাচ, গান ও আবৃত্তি- কোনোকিছুরই কমতি ছিল না। বৈশাখী উল্লাস নামে এ আয়োজনে ছিল দেশীয় স্বাদের পিঠা-পুলি, পান্তা-ইলিশ, চটপটি, ফুচকাসহ নানান খাবারের সমারোহ। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, পরিবার নিয়ে আসা প্রবাসী ও তাদের সন্তানদের আলপনা আঁকা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়। পুরো অনুষ্ঠানস্থল সাজানো হয় বাংলার রূপ আর বৈচিত্র্যের নানান দিক নিয়ে। ঢোল, তবলা আর বাদ্য-বাজনার তালে তালে এদিন আমন্ত্রিত অতিথিদের বরণ করে নেওয়া হয়।
আয়োজক সংগঠন বিডি এলিট ক্লাবের সভাপতি মনসুর আল বাশার সোহেল বলেন, এলিট ক্লাব প্রবাসে দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে বদ্ধপরিকর। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানেও এ সংগঠন কাজ করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এসময় বিডি এলিট ক্লাব মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠাতা জাহিদুর রহমান খান কাঁকন ও ‘বৈশাখী উল্লাস ১৪৩১ উদযাপন কমিটি’র আহ্বায়ক ফরিদ উদ্দিন গাজী উপস্থিত ছিলেন। আয়োজনে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ঢাকা থেকে যোগ দেন জনপ্রিয় অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু। তবে অভিনয় নয় দর্শকদের অনুরোধে একে একে বেশ কয়েকটি গান পরিবেশন করেন তিনি। ব্যাচেলর পয়েন্ট নাটকের জাকির চরিত্রে অভিনয় করা সাইদুর রহমান পাভেলের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় দর্শকদের মন কাড়ে সময়ের জনপ্রিয় বাউল শিল্পি শফি মন্ডলের একের পর এক পরিবেশনা ছিল অনুষ্ঠানে। তার গাওয়া গান পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে দর্শকদের মুগ্ধতা ছড়ায়।
অনুষ্ঠানে আরও গান পরিবেশন করেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সুলতানা ইয়াসমিন লায়লা ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের শিল্পী জাকিয়া সুলতানা মেরি। এছাড়া সকাল থেকে স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিভিন্ন পরিবেশনায় অংশ নেন। তবে ‘বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন মালয়েশিয়ার’ শিক্ষার্থীদের পবিবেশনাও ছিল চোখে পড়ার মতো।
বৈশাখী মেলার এ আয়োজনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের নাগরিকরাও উপস্থিত ছিলেন। প্রবাসে এ ধরনের আয়োজন বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি, দেশের সংস্কৃতি উজ্জ্বল করে বলে মন্তব্য করেন আগত অতিথিরা। এসময় বিডি এলিট ক্লাবের উপদেষ্টা ও কমিউনিটি নেতা রেজাউল করিম রেজা, মকবুল হোসেন মুকুল, কামরুজ্জামান কামাল, অহিদুর রহমান অহিদ, জালাল উদ্দিন সেলিম, মনিরুজ্জামান মনির, দাতু আক্তার, কাইয়ুম সরকার, জসিম উদ্দিন, রাশেদ বাদল, শাহিন সরদার, ইকবাল হোসেন ও মোয়াজ্জেম হোসেন নিপুসহ বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের স্পন্সরদের সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। স্মারক তুলে দেন হাইকমিশনের প্রথম সচিব (প্রেস) সুফি আব্দুল্লাহিল মারুফ। আয়োজনের শেষাংশে কুপন বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। বেলা ১১টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলা আয়োজনে আবহমান বাংলার নানান রূপ, বৈচিত্র্য তুলে ধরার পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশির আগমনে এদিন কুয়ালালামপুরের ক্র্যাফট কালচারাল কমপ্লেক্স দেখে মনে হচ্ছিল এ যেন এক টুকরো বাংলাদেশ।