কক্সবাজারে সমুদ্রসৈকত দেখা, সুন্দরবন অথবা সিলেটের চা-বাগানে ভ্রমণ– আগে শুধু এতটুকু ভ্রমণে সন্তুষ্ট থাকত ভ্রমণপ্রেমীরা। তবে বর্তমান প্রজন্মের তরুণরা এখন আর এতটুকুতে সন্তুষ্ট নন, তারা এখন রোমাঞ্চ পেতে চান। তাই দিন দিন দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে রোমাঞ্চকর ভ্রমণ।
এই ধরনের ভ্রমণকে বলা হয় অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম। ভ্রমণপিপাসু কিছু তরুণের হাত ধরে কয়েক দশক আগে দেশে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের যাত্রা শুরু। তবে এখন সরকারিভাবেই এ ধরনের পর্যটন প্রসারে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড কাজ করছে। এ অবস্থায় বিশ্বের মতো আজ বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব পর্যটন দিবস।
পর্যটন ব্যবসায়ীদের সংগঠন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) হিসাব অনুযায়ী, স্বাভাবিক সময়ে দেশে প্রতিবছর ৫৫ থেকে ৬০ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে যায়। দিন দিন পর্যটন ব্যবসার প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।
অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের একাধিক ধারণা রয়েছে। এর মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি ধারণা হলো পাহাড়ে হাইকিং, ট্রেকিং, ক্লাইম্বিং, মাউন্টেনিয়ারিং, জঙ্গলে হলকেভিং, হান্টিং, আর্চারি ও ব্যাকপ্যাকিং। এ ছাড়া সমুদ্রসৈকতকে কেন্দ্র করে সারফিং, হট এয়ার বেলুন, প্যারাগ্লাইডিং, হ্যান্ড গ্লাইডিং, প্যারাশুটিং, স্কাই ডাইভিং, বানজি জাম্প, মাইক্রো লাইট প্লেন ইত্যাদি।
অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের ট্যুর আয়োজন করে ফেসবুক গ্রুপগুলো। এ রকম একটি প্রতিষ্ঠান ট্রাভেল বাংলার কর্ণধার অনিক আহমেদ বলেন, ‘তরুণরা অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম ছাড়া কিছুই বোঝে না। তারা আর আগের মতো সৈকতে গিয়ে গোসল এবং হোটেলে সময় কাটানো পছন্দ করে না। কায়াকিং (নদী বা হ্রদে বোট চালানো), জিপলাইনিং (উঁচু পাহাড় বা গাছে দড়ি বেঁধে চলাচল), র্যাপলিং-জুমারিংয়ের (দড়ির সাহায্যে পাহাড়ি পথে ওঠানামা) মতো অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করে তারা।’
সম্প্রতি বান্দরবান ঘুরে এসেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাকিব বিন আদনান। তিনি বলেন, ‘আমরা মাচান ঘরে ছিলাম। খুব ভোরে দেখতে পাই বুনো হাতির দল। সেই সঙ্গে পাহাড়ি পথে ট্রেকিং। তাঁবুতে রাতে শুয়েই শুনেছি বন্যপ্রাণীর ডাক। সবমিলিয়ে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।’
ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের পর্যটন খাতে সরাসরি কর্মরত আছেন ১৫ লাখ মানুষ। আর পরোক্ষভাবে আরও ২৩ লাখ লোক এ খাতের সঙ্গে যুক্ত আছেন। আর্থিক মূল্যে দেশীয় পর্যটন খাতের আকার দাঁড়িয়েছে অন্তত ৪ হাজার কোটি টাকা।
রাঙামাটির পর্যটন ব্যবসায়ী নেছার আহমদ বলেন, ‘বাংলাদেশে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। দেশের ভেতরে তরুণরা এখন পাহাড়ে উঠছে। পার্বত্যাঞ্চলে বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে। নাইট ক্যাম্প, সাইক্লিং, হাইকিং, ট্রেকিং, ক্লাইম্বিং, মাউন্টেনিয়ারিং করছে। তবে দেশের বাইরে থেকে কম মানুষ আসে। এ জন্য আমাদের ব্র্যান্ডিং দরকার, বড় আয়োজন প্রয়োজন। নানাভাবে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমকে তুলে ধরা সম্ভব।’
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) চট্টগ্রাম অঞ্চলের কো-চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন বলেন, ‘করোনার কারণে লকডাউন ছিল সারা দেশে। এ জন্য পর্যটন ব্যবসায় মন্দা। তবে এর মধ্যে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম আশার আলো দেখাচ্ছে। কারণ তরুণরা প্রতিনিয়ত ছুটছে বিভিন্ন প্রান্তে। এতে করে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের পরিধি দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশের আগামীর পর্যটন ব্যবসা হবে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম।’
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালক আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, বাংলাদেশে পাহাড়, পর্বত ও বন সবই আছে। এ ছাড়া অ্যাডভেঞ্চারের জন্য কিছু কৃত্রিম আয়োজন হয় বিশ্বজুড়ে। সেটা বাংলাদেশেও সম্ভব। এ জন্য অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড।