ছুটিতে অনেকেই বিদেশ ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন। অনেকে হয়তো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না কোথায় যাবেন? এখানে পাশের দেশ ভারতের কয়েকটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যের কথা তুলে ধরা হলো।
দার্জিলিং
বাংলাদেশের মানুষের কাছে সম্ভবত এককভাবে কোনো শৈলশহর ভ্রমণের কথা আসলে প্রথমেই আসবে দার্জিলিং-এর নাম। ভীষণ জনপ্রিয় একটি শৈলনিবাস। দেখার আছে বেশ কিছু বৈচিত্রপূর্ণ নিদর্শন। দার্জিলিং-এর প্রধান আকর্ষণ নিঃসন্দেহে টাইগার হিল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘায় সূর্যোদয় দেখার বিরল অভিজ্ঞতা। দার্জিলিং ভ্রমণে পরিষ্কার আকাশে পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ তুষারশুভ্র পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা আপনার পাশেই থাকবে। রক গার্ডেন, হিমালয়ান মাউন্টেরিং ইনস্টিটিউট, হিমালয়ের বিভিন্ন প্রাণী নিয়ে চিড়িয়াখানা ছাড়াও শহরে বেশ কিছু পর্যটন গন্তব্য মুগ্ধ করার মতো।
দার্জিলিং-এর টয়ট্রেন বিশ্বঐতিহ্যের অংশ। সংক্ষিপ্ত যাত্রায় দার্জিলিং স্টেশন থেকে ঘুম পর্যন্ত টয়ট্রেনে চড়তে পারেন। এছাড়া কালিম্পং, লাভা, লোলেগাঁও, মিরিক, কার্সিয়াং অনন্য সুন্দর স্থান। দার্জিলিং এক সময় সিকিমের অধীনে থাকলেও ব্রিটিশরা প্রথমে লিজ নেয়, তারপর এর দখল নিয়েছিলো। ফলে এখানে নেপালী, গোর্খা এবং তিব্বীতের বহু নিদর্শন যেমন আছে, তেমনি ভবনসহ বহু ব্রিটিশ ঐতিহ্য চোখে পড়ে। টয়ট্রেন ছাড়াও স্কুলগুলো এর মধ্যে অন্যতম। দার্জিলিং-এ কেনাকাটা এবং আধুনিক সিনেমা হলসহ বিনোদনের নানা ব্যবস্থা রয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে যাওয়টাও এখন অনেক সহজ। ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি নিয়মিত বাস যাচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকা থেকে সরাসরি জলপাইগুড়ি ‘মিতালী এক্সপ্রেস’ নামে একটি ট্রেন চালু হয়েছে। এটি সাপ্তাহে ২দিন ঢাকা ও ২ দিন জলপাইগুড়ি থেকে আসা যাওয়া করে। এছাড়া কলকাতা থেকে ট্রেন বা বিমানে জলপাইগুড়ি নেমেও যাওয়া যায়।
সিকিম
আরেকটি অপরূপ সুন্দর শৈলনিবাস দার্জিলিং-এর সীমান্তসংলগ্ন সিকিম রাজ্য। দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ ছিলো বাংলাদেশীদের জন্য। এখন অবশ্য সহজেই যাওয়া যায়। যদিও কিছুটা বাড়তি আনুষ্ঠানিকতা আছে। শিলিগুড়ি অথবা সিকিম ঢোকার সীমান্তে চেকপোস্টে ইমিগ্রেশনে একটি ছোট্ট ফর্ম পূরণ করতে হয়। এজন্য ভ্যালিড পাসপোর্ট ও ভারতীয় ভিসার কয়েক সেট ফটোকপি সাথে রাখতে হবে। সেইসাথে ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি। সিকিম যেতে ইনার লাইন পারমিটের (আইএলপি) আওতায় পাসপোর্টে এন্ট্রি ও এক্সিট সীল নিতে হয়।
হিমালয়বেষ্টিত সিকিমের অন্যতম আকর্ষণ তুষারের রাজ্যে আপনি ঘুরে বেড়ানোর দারুণ আনন্দ লাভ করবেন। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে তুষারপাতও পেয়ে যাবেন। এজন্য অবশ্য আপনাকে শীতকালের শুরুতে অথবা শেষের দিকে ভ্রমণ করতে হবে।
গ্যাংটকের হোটেলগুলোর মধ্যে গ্যালাক্সী লাক্সারিয়া, আমবা রিজেন্সী, মানাসলু, ট্রিবো ট্রেন্ড, হোটেল অর্কিডসহ বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। উত্তর সিকিম ও দক্ষিণ সিকিমের পর্যটন গন্তব্যগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন মানের হোটেল।
ঢাকা থেকে প্রথমে বাসে বা ট্রেনে শিলিগুড়ি বা জলপাইগুড়ি যেতে হবে। সেখান থেকে জীপ বা কারযোগে সিকিম যাওয়া যায়। কলকাতা থেকে ফ্লাইট বা ট্রেনযোগে জলপাইগুড়ি হয়ে সিকিম যাওয়া যায়। সিকিম ভ্রমণে কিছুটা বাড়তি ঝামেলার জন্য আপনি ভ্রমণ আয়োজনের দায়িত্ব যেকোনো ভালো ট্যুর অপারেটরকে দিতে পারেন।
শিলং-চেরাপুঞ্জী
সম্ভবত বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে সহজে ভারতের যে শৈলনিবাসে যাওয়া যায় সেটি হচ্ছে মেঘালয়ের রাজধানী শিলং। ঢাকা থেকে সিলেট। সিলেট থেকে ১ থেকে দেড় ঘণ্টার যাত্রায় পৌঁছে যাওয়া যায় তামাবিল ও ডাউকি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে। এখান থেকে ৩ ঘণ্টার মধ্যে মেঘালয়ের রাজধানী, রবিঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসের স্থান প্রেম ও প্রকৃতির অপরূপ শিলং পৌঁছে যাওয়া যায়। শিলং একবার এলে বারবার এর আকর্ষণ আপনাকে কাছে ডাকবে। ঠিক প্রেমে পড়ার মতই।
ডাউকি থেকে শিলং পর্যন্ত পাহাড়ি পথেই শুরু হয়ে যায় অপরূপ প্রকৃতি উপভোগ পর্ব। যাওয়ার পথেই আবিষ্কার করা যায় উমকট নদীর স্বচ্ছ জলে নৌকা নিয়ে শূণ্যে ভেসে থাকার রহস্য। শিলং অভিমুখে আরো খানিকটা পথ গিয়ে অন্য পথ ধরে যেতে হয় এশিয়ার পরিচ্ছন্ন গ্রামের স্বীকৃতি পাওয়া মউলিনং-এ। খাসিয়া এই গ্রামটির পাশেই রয়েছে লিভিং রুট ব্রিজ এবং ঝরনাধারা। শিলং শহর ও তার আশেপাশে জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর, ডন ভসকো এনথোলজিক্যাল মিউজিয়াম, বাটারফ্লাই মিউজিয়াম, অপরূপ সুন্দর এলিফ্যান্ট ফলস, বিশাল উমিয়ম লেকসহ নানা আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে। একদিনের ভ্রমণে চেরাপুঞ্জিতে বহু বিচিত্র জলপ্রপাত আপনাকে মুগ্ধ করবে। এরমধ্যে সেভেন সিস্টারস ফলস, নোকালিকাই ফলসের সৌন্দর্য অতুলনীয়। রয়েছে অসংখ্য লাইমস্টোন কেভ (চুনাপাথরের গুহা)। এর মধ্যে মউসমাই কেভ অন্যতম।
শিলং-এ থাকার জন্য সেন্টার পয়েন্ট, পলো টাওয়ার, পাইনউড হোটেল, হোটেল ব্রডওয়ে, হোটেল রেইনবো, লেকভিউ রিসোর্টসহ বিভিন্ন মানের বহু হোটেল রয়েছে। শহরের মূল কেন্দ্র হচ্ছে পুলিশবাজারের সেন্টারপয়েন্ট এলাকা। খাসিয়াদের আদিকেন্দ্র দেখতে হলে যেতে হবে বড়বাজার। চেরাপুঞ্জিতেও বিভিন্ন বাজেটের হোটেলে থাকার চমৎকার ব্যবস্থা রয়েছে।
দিল্লী-জয়পুর-আগ্রা
তাজমহল দেখা আর না-দেখা দুটি ভাগে নাকি পৃথিবীর মানুষ বিভক্ত। পৃথিবীতে মানুষ আরো বহু কারণে বিভক্ত হলেও তাজমহল নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে গিয়ে কোনো এক মুগ্ধ পর্যটক কথাটি বলেছিলেন! তাই অনেক ভ্রমণকারীদের মধ্যে তাজমহল দেখার পরিকল্পনা মাথায় থাকেই। তাজমহল যেতে হলে যত দূরই হোক প্রথমে দিল্লী যেতে হবে। দিল্লীতে রয়েছে মোঘল আমলে বহু কীর্তি। দিল্লী ও তাজমহলের পরিকল্পনার সঙ্গে পিংক সিটি রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর যুক্ত করে একটি ত্রিভুজ ট্যুরের প্লান করাই সঙ্গত। অনেকে এর সাথে আজমীরও যুক্ত করে থাকেন।
ঢাকা থেকে কলকাতা। কলকাতা থেকে ট্রেনে চলে যান দিল্লী। অথবা কলকাতা থেকে বা ঢাকা থেকে সরাসরি ফ্লাইটে দিল্লী যেতে পারেন। দিল্লী থেকে পর্যটকবাহী বাস বা কারযোগে আপনি দ্রষ্টব্য স্থানগুলো ভ্রমণ করবেন।
সিমলা-কুলু-মানালী
ভারতের অন্যতম সুন্দর একটি শৈলনিবাস। ভীষণ জনপ্রিয়ও বটে। বলিউডের জনপ্রিয় বহু সিনেমার শুটিং স্পট সিমলা-কুলু-মানালী। ফলে অনেক পর্যটকের কাছে স্বপ্নের গন্তব্য হিমাচলের রাজধানী সিমলা এবং তার সাথে যুক্ত কুলু ও মানালী। এই ভ্রমণটিও আপনাকে দিল্লী কেন্দ্র করে করতে হবে। যথারীতি আমি পরামর্শ দেবো, এই ভ্রমণেও ভালো কোনো ট্যুর অপারেটরের সাহায্য নিন।
জম্মু-কাশ্মীর
পৃথিবীর ভূ-স্বর্গ হিসাবে পরিচিত। এভাবে নামকরণ করে ব্রান্ডিং যখন করা হয় তখন জীবিত অবস্থায় কে না একবার ভূ-স্বর্গে যেতে চাইবে? যদিও রাজনৈতিক কারণে কাশ্মীর প্রায়শই তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলে।
কাশ্মীরের তুষারপাত, তুষার সংশ্লিষ্ট নানা এ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় এক্টিভিটি রয়েছে। কাশ্মীর ভ্রমণে ডাল লেকে দিনের বেলা নৌভ্রমণ ছাড়াও অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন হাউজবোটে রাত্রিযাপন করেও। কাশ্মীর ভ্রমণে অনেকে লাদাখও যুক্ত করেন। তবে যথেষ্ট সময় ও পাহাড়ে বেড়ানোর মতো শারীরিক সুস্থতা বিবেচনা করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভ্রমণ পরিকল্পনা করা উচিত। এখানেও কেন্দ্র দিল্লী। দিল্লী থেকে ট্রেন বা ফ্লাইটে শ্রীনগর যেতে হবে। সেখান থেকে বাদবাকি ভ্রমণ আয়োজন।