বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন

ছুটিতে কুয়াকাটায় গিয়ে যা যা দেখবেন

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫

সপ্তাহ শেষে চাকরিজীবীরা পেতে যাচ্ছেন পরপর দুই থেকে তিন দিন ছুটি। এ ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন সাগর কন্যা কুয়াকাটা থেকে। তবে দেরি কেন! ব্যাগপত্র ঘুছিয়ে, ক্যামেরা আর একরাশ উন্মুখ ভালোবাসা নিয়ে এখনি বেরিয়ে পড়ুন বাংলাদেশের দক্ষিণের এ অপার মোহময়তা উপভোগ করতে। কুয়াকাটা, বাংলাদেশের এ সমুদ্র সৈকতে দেখা মিলবে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের।

দুদিনের ছুটিতে কুয়াকাটায় গিয়ে যা যা দেখবেনছবি/সাজেদুর আবেদীন শান্ত

• সূর্যের প্রথম ছোঁয়া
সূর্যোদয় দেখতে চাইলে খুব ভোরে অর্থাৎ আলো ফোটার আগেই আপনাকে দাঁড়াতে হবে কুয়াকাটার বিশাল প্রান্তরের সামনে। চোখের সামনে বিস্তৃত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত – কিলোমিটারের পর কিলোমিটার বালুকাবেলা, ঢেউয়ের গর্জন, আর টাটকা নোনা হাওয়ার গন্ধ।

সূর্য তখন ধীরে ধীরে জেগে উঠছে, সমুদ্রের বুকের ওপর দিয়ে যেন এক স্বর্ণালী কার্পেট বিছিয়ে দিচ্ছে। পায়ের নিচে নরম বালি, দূর আকাশের রেখায় মাছ ধরার নৌকা, আর তাদের আলতো ভেসে থাকা।

এমন সূর্যোদয় আপনি হয়তো ছবিতে দেখেছেন, কিন্তু এখানে দাঁড়িয়ে অনুভব করলে তবেই বুঝবেন, প্রকৃতি কতটা ভরিয়ে দিতে পারে আমাদের মনের ক্যানভাস।

• গঙ্গামতির বন
কুয়াকাটার সৈকত ধরে একেবারে পূর্ব দিকে হাঁটুন। একটু এগোলেই পা রাখবেন এক রহস্যময় জগতে – গঙ্গামতির বন।

এখানে সবুজ গাছেরা নিজেদের হাত ছড়িয়ে রেখেছে যেন আপনাকে আলিঙ্গন করতে। ঝাউ, কেওড়া, গোলপাতার সারি মিলে তৈরি হয়েছে এক নীরব, প্রাণভরা পথ। পায়ে হেঁটে হেঁটে, কাঁকড়ার ছুটোছুটি দেখতে দেখতে আপনার মনে হবে, আপনি যেন ঢুকে পড়েছেন এক রহস্য উপন্যাসের পাতায়।

কুয়াকাটা যে অংশ থেকে সূর্যোদয় সবচেয়ে ভালো দেখা যায়, তা হল এই গঙ্গামতির বাঁক। নানান রকম বৃক্ষরাজি ছাড়াও এ জঙ্গলে রয়েছে বিভিন্ন রকম পাখি, বন মোরগ-মুরগি, বানর ইত্যাদি।

দুদিনের ছুটিতে কুয়াকাটায় গিয়ে যা যা দেখবেনছবি/সাজেদুর আবেদীন শান্ত

• ফাতরার বন
পশ্চিম দিকে ট্রলারে করে এগোলে দেখা মিলবে আরেক বিস্ময়ের – ফাতরার বন। সমুদ্রের বুক চিরে এগিয়ে চলা ট্রলার আর পানির ওপর ভাসমান ঝাউবনের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই। নিঃশব্দ পরিবেশ, মাঝে মাঝে পাখির ডাক, আর নৌকার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ – এ যেন প্রকৃতির নিজস্ব এক সিম্ফনি।

ফাতরার বন মূলত সুন্দরবনের অংশ। এখানে আপনি দেখতে পারবেন সুন্দরী, কেওড়া, বাইন, গোলপাতাসহ আরো বিভিন্ন প্রজাতির ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ। তবে শুধু নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সময়েই আপনি ঢুকতে পারবেন ফাতরার চরে।

jagonews24ছবি/সাজেদুর আবেদীন শান্ত

• মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ বিহার
প্রকৃতির সৌন্দর্যের পাশাপাশি কুয়াকাটা তার ভেতর লুকিয়ে রেখেছে ধর্মীয় বৈচিত্র্য। মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ বিহার – যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন বিশাল বুদ্ধমূর্তি। রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষজন এখানে প্রার্থনায় নিমগ্ন থাকেন। এরপাশে রয়েছে একটি বিশাল কুয়া।

বৌদ্ধ বিহারটি সৈকত থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। রিকশা, মোটরসাইকেল বা ছোট ভ্যান সহজেই নিয়ে যাবে আপনাকে।

• রাখাইন পল্লী
কুয়াকাটার আরেক দর্শনীয়স্থান হলো রাখাইন পল্লী। এখানে রাখাইন মেয়েরা হাতে তৈরি করে তাঁতের কাপড়। এছাড়াও এখানে পাবেন রাখাইনদের হাতে তৈরি নানান জিনিসপত্র। বার্মিজ আচারসহ নানান স্থানীয় পণ্য।

চাইলে রাখাইন বাজারে হাতের তৈরি ব্যাগ, তাঁতের কাপড়, কাঠের শিল্পকর্ম কিনতে পারেন। বৌদ্ধ বিহারের পাশেই এর অবস্থান।

দুদিনের ছুটিতে কুয়াকাটায় গিয়ে যা যা দেখবেনছবি/সাজেদুর আবেদীন শান্ত

• শুঁটকি পল্লী
শীতে গেলে এক অনন্য অভিজ্ঞতা পাবেন শুঁটকি পল্লীতে। সমুদ্রের নোনাজল শুকিয়ে, খোলা আকাশের নিচে সারি সারি মাছের স্তূপ – যেখানে বাতাসে ভেসে আসে শুঁটকির ঘ্রাণ।

মাছ শুকানোর পদ্ধতি, গ্রামীণ জীবনযাত্রা, আর শ্রমিকদের হাসিমুখ দেখতে চাইলে আপনাকে এখানে আসতেই হবে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের ৭ কিলোমিটার পশ্চিম প্রান্তে শুঁটকি পল্লীর অবস্থান। এখানে রিকশা বা মোটরসাইকেলে সহজেই পৌঁছানো যায়।

• চর বিজয়
কুয়াকাটা ভ্রমণের সব শেষে রওনা দিন চর বিজয়ের দিকে। ট্রলার বা স্পিডবোটে উত্তাল ঢেউ পেরিয়ে পৌঁছাবেন বিশাল এই চরভূমিতে।

নতুন জন্ম নেওয়া জমি, কাদামাটির গন্ধ, লাল কাকড়া, হাজারো পাখির মেলা আর সমুদ্রের অসীম নীল – চর বিজয়ে দাঁড়িয়ে আপনি নিজের ভেতর হারিয়ে যাবেন। চাইলে এখানে ক্যাম্পিং করে নিতে পারেন অনন্য এক অভিজ্ঞতা। স্থানীয় ট্রলারে মাত্র এক ঘণ্টার ভ্রমণেই এখানে পৌছাবেন।

দুদিনের ছুটিতে কুয়াকাটায় গিয়ে যা যা দেখবেনছবি/তানভীর ইসলাম

• দরকারী কিছু টিপস
কুয়াকাটায় সূর্যোদয় দেখতে চাইলে আগের রাতেই পৌঁছে সৈকতের কাছাকাছি কোনো হোটেলে অবস্থান করুন, যাতে সকালে ঘুম থেকে উঠে হাঁটতে হাঁটতেই সমুদ্রের দিকে যেতে পারেন। চর বিজয় বা গঙ্গামতির বনের মতো জায়গায় যেতে চাইলে গাইডের সহায়তা নেওয়াই ভালো, বিশেষ করে যেসব এলাকা কম পরিচিত বা প্রাকৃতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। আর ট্রলারে ভ্রমণের সময় অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট পরে নিবেন।

এছাড়া ভ্রমণের সময় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক অনেক সময় দুর্বল হতে পারে, তাই প্রয়োজনীয় যোগাযোগ আগেই করে নিন। সূর্যের তাপে বা সমুদ্রের লবণাক্ত হাওয়ায় ত্বক ও শরীরের ক্ষতি এড়াতে হালকা পোশাক, সানগ্লাস ও টুপি সঙ্গে রাখুন।

রাখাইন পল্লীতে ঘোরার সময় তাদের জীবনধারা, ধর্মীয় স্থান বা স্থানীয় পণ্য কেনাকাটার প্রতি সম্মান দেখানো উচিত। সৈকতে সাঁতার কাটার সময় সতর্ক থাকুন এবং সবসময় লাইফগার্ডের নির্দেশনা অনুসরণ করুন।

কুয়াকাটার সৈকতে সূর্যাস্তের সময় সোনালী আলোয় পুরো সমুদ্র ঝলমল করে ওঠে, সেই মুহূর্তের ছবি তুলতে চাইলে ক্যামেরা বা ভালো মানের ফোন ক্যামেরা প্রস্তুত রাখুন। সবশেষে, পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব আপনারও – কোথাও কোনো ময়লা ফেলে আসবেন না।

• যেভাবে যাবেন
পদ্মাসেতু হওয়ার পর বাসে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা আসা সহজ হয়েছে। বাসে এসি ও নন-এসি ৭৫০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা ভাড়ায় সরাসরি আসা যায় কুয়াকাটায়।

তবে লঞ্চে আসতে চাইলে ঢাকার সদরঘাট থেকে পটুয়াখালীর লঞ্চে আসতে হবে। লঞ্চের কেবিন ভাড়া ১ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা। লঞ্চে পটুয়াখালী এসে সেখান থেকে বাসে চড়ে আবার কুয়াকাটা যেতে হবে। পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটা বাস ভাড়া ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা।

• যেখানে থাকবেন
কুয়াকাটায় ভালো মানের হোটেলের মধ্যে রয়েছে সিকদার রিসোর্ট। এ ছাড়াও ইয়ুথ ইন, হোটেল সি গার্ল, সি ভিউ, গ্রেভার ইন, হলিডে হোমসসহ বেশ কিছু হোটেল রয়েছে, যেগুলোতে ৫০০ থেকে ৩২ হাজার টাকায় থাকা যায়। তবে ছুটির দিনগুলোতে হোটেল পাওয়া কঠিন হয়। পরিবার নিয়ে আসতে চাইলে আগেই হোটেল বুকিং দেওয়া ভালো।

• যা খাবেন
কুয়াকাটায় এলে সামুদ্রিক মাছের বিভিন্ন আইটেম খেতে পারেন। সমুদ্র সৈকতের পাশেই রয়েছে বারবিকিউর ব্যবস্থা। অবশ্যই তাজা মাছ দেখে পছন্দ করে কিনবেন। কেনার আগে দরদাম করে নেবেন। আর অপরিচিত না বা রুচিতে যায় না, এমন খাবার না খাওয়াই ভালো।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com