শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৩ অপরাহ্ন

চেন্নাইয়ের আনাচে-কানাচে

  • আপডেট সময় বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০২৩

বঙ্গোপসারের করমন্ডল উপকূলে অবস্থিত, ৩৬৮ বছরের পুরনো এই শহর, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও মন্দির স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত। চেন্নাইয়ের সংস্কৃতিতে, শহরটিতে বসবাসকারী বিবিধ জনগোষ্ঠীর প্রতিফলন ঘটেছে। শাস্ত্রীয় নৃত্যের জন্য এ শহর বিখ্যাত। প্রতি বছর ডিসেম্বরে চেন্নাইতে একটি পাঁচ সপ্তাহব্যাপী সঙ্গীতসমারোহ চলে; অনুষ্ঠানটি পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম সাংস্কৃতিক ঘটনা হিসেবে বিদিত। এই সময় শহরে এবং এর ধারেকাছে শতশত শিল্পী ঐতিহ্যবাহী কর্ণাটকী সঙ্গীতানুষ্ঠানও প্রদর্শন করেন।

এখানকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল পোঙ্গল, যা জানুয়ারী মাসে পাঁচ দিন ধরে উদ্‌যাপিত হয়। এ তো গেল উৎসবের কথা। এই উৎসবে সামিল হতে গেলে নির্দিষ্ট মাসেই পৌঁছে যেতে হবে চেন্নাই। আর বছরের বাকি সময়? সেই লিস্টও যথেষ্ট লম্বা। এই শহরে ঘুরে দেখার মতো স্থান এবং রসনাবিলাসের বিন্দুমাত্র অভাব ঘটবে না। আর কেনাকাটা তো রয়েইছে। চেন্নাই সিল্ক শাড়ির খ্যাতি তো বিশ্বজোড়া! পুরো শহরটাকে চিনতে চাইলে, একদিন নেহাতই সামান্য! তবে চেন্নাই এলে কী কী জিনিস মোটেও মিস করা যাবে না, তার একটা রুট প্ল্যানিং করে দিলাম।

শুরু করুন চেন্নাইয়ের সরকারি মিউজ়িয়াম দিয়ে। এগমোরের প্যান্থেয়ন রোডে অবস্থিত এই মিউজ়িয়ামটি ১৮৫৪ সালে তৈরি। ছ’টি বিল্ডিং এবং ৪৬টি গ্যালারি জুড়ে খুঁজে পাবেন উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণীবিদ্যা, নৃতত্ত্ব, প্রত্নতত্ত্ব, ভূগোল, স্থাপত্য ইত্যাদি নানা বিষয়। এছাড়াও রয়েছে আর্ট গ্যালারি। হাতে মোটামুটি ২ ঘণ্টা সময় রাখলেই হবে। শুক্রবার বাদে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ৫টা অবধি খোলা থাকে এই মিউজ়িয়াম। প্রবেশমূল্য মাত্র ১৫ টাকা (বাচ্চাদের জন্য ১০ টাকা)।

সরকারি মিউজ়িয়াম ঘুরে চলে আসুন ফোর্ট সেন্ট জর্জে। মিউজ়িয়াম থেকে মাত্র ৫ কিমি দুরত্বে পড়বে এই চার্চ। ১৬৪৪ সালে তৈরি এই দুর্গে ঢুকলেই, লর্ড কর্নওয়ালিসের বিশালাকার মার্বেল মূর্তি আপনাকে স্বাগত জানাবে। ব্রিটিশদের শাসণকালে এই দুর্গটিকে যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করা হত। বলা হয়, ব্রিটিশদের এদেশে তৈরি প্রথম নিদর্শন এটি। বতর্মানে দুর্গের নিজস্ব মিউজ়িয়াম রয়েছে। সেখানে ব্রিটিশের আমলের নানা অস্ত্র দেখতে পাবেন। এছাড়াও ব্রিটিশদের লেখা নানা চিঠি, মেডেল, তৈলচিত্র ইত্যাদিও নজর কাড়বে। শুক্রবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা অবধি খোলা থাকে এই দুর্গ। প্রবেশমূল্য ৫টাকা।

এই ফোর্টের লাগোয়াই রয়েছে সেন্ট মেরিজ় চার্চ। এই চার্চের সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ভারতের ইতিহাস। ১৬৮০ সালে তৈরি এই চার্চের বিশেষত্ব হল এর ৪ফুট পুরু ছাদ। তৎকালীন সময়ে, যুদ্ধের গোলা-বারুদ থেকে বাঁচাতে এর ছাদ বিশেষভাবে তৈরি করা হয়। এই চার্চটি ‘ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে অফ দ্য ইস্ট ’ নামেও পরিচিত। এখানে এলে চার্চের সমাধিস্থলে ঢুঁ মারতে ভুলবেন না।

শহরের পূর্ব উপকূলে রয়েছে ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিনা সমুদ্র সৈকত। পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম বিচ এটি। মারিনার বৈশিষ্ট্য এর প্রাকৃতিক শোভা। চারদিকে তাল-তমাল-নারকেল গাছের ছড়াছড়ি, রূপোলী বেলাভূমি, গভীর নীল সমুদ্র আর ওপরে খোলা আকাশের হাতছানি। নিছকই খেলার ছলে বালির বাড়ি বানাতে পারেন। ঢেউয়ের ভাঙাগড়ার খেলা দেখতে দেখতে অনায়াসেই সময় কেটে যাবে।

পরবর্তী গন্তব্য স্যানথম ক্যাথেড্রাল ব্যাসিলিকা। তবে ইতিমধ্যে যদি খিদে পেয়ে যায়, তাহলে বিচের ধারের স্টল থেকে মুখরোচক খাবার চেখে দেখতে পারেন। এছাড়া রাস্তায় পাবেন হোটেল সারাভানা ভবন। চেন্নাইয়ের জনপ্রিয় রেস্তরাঁ এটি। দু’জনের পেটপুজো করতে লাগবে মোটামুটি ৩৫০-৪৫০ টাকা। যে কোনও দক্ষিণী খাবার চেখে দেখতে পারেন। তবে ফিল্টার কফি পান করতে ভুলবেন না। কফি বিনস গুড়ো করে কফি বানানো হয়। সারি সারি স্টিলের গ্লাসে বাদামি রঙের পানীয়টি যেন আপনারই জন্যে অপেক্ষা করছে। চুমুক দিতেই তৃপ্তির আভাস ছড়িয়ে পড়বে শরীর এবং মনে।

পেটপুজো সেরে চলে যান মারিনা বিচের দক্ষিণ প্রান্তে। দুধ সাদা চার্চ দেখে মন ভরে যাবে। স্যানথম ক্যাথেড্রাল ব্যাসিলিকার বয়েস ১০০ বছরেরও বেশি। নিও-গোথিক স্টাইলের এই গির্জা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। যীশু খ্রীষ্টের শিষ্য সেন্ট থমাসের সমাধি আছে এখানে। গির্জার ভেতরে রাখা আছে মাদার মেরির বহুমুল্য ছবি। চার্চের সঙ্গে আছে মিউজ়িয়াম কাম থিয়েটার। সেন্ট থমাস এবং গির্জা সংক্রান্ত নানারকম তথ্য সংরক্ষিত করা আছে। থিয়েটারে যীশুর শিষ্যদের জীবনের ওপর শর্ট ফিল্ম দেখারও ব্যবস্থা আছে। গির্জার ভেতরের স্থাপত্যশিল্প দেখার মতো। উঁচু উঁচু কারুকার্য করা কাঁচের জানলা, প্রাথর্না নিবেদনের আলাদা জায়গা, শান্ত স্নিগ্ধ যীশু মূর্তি— সব মিলিয়ে মন ভাল হয়ে যাবে। অন্যরকম ভাললাগায় ভরে উঠবে মন।

স্যানথম ক্যাথেড্রাল ব্যাসিলিকার পশ্চিমে, মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরত্বে পড়বে কপালিশ্বরর মন্দির। চেন্নাইয়ের অন্যতম পবিত্র পীঠস্থান এটি। পল্লব রাজারা সপ্তম শতাব্দীতে এই মন্দির স্থাপনা করেন। ভাস্কর্য সত্যিই দেখার মতো। মন্দিরের প্রধান প্রবেশদ্বার গোপূরম প্রায় ১২০ ফুট উঁচু একটি স্থাপত্য এবং মোট ১৯০৬টি অবয়ব এই স্থাপত্যটিকে বেষ্টন করে রয়েছে। মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করলেই এক অপার শান্তি অনুভব করবেন। এখানে নির্দিষ্ট পুজো দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। ভোর ৫টা থেকে রাত ৯টা অবধি বিভিন্ন সময়ে পুজো দিতে পারেন। তবে জনসাধারণের জন্য মন্দির খোলা থাকে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা, আবার বিকেল ৪টে থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।

এত ঘোরাঘুরির পর খিদেও তো জমিয়ে পাবে! চেন্নাইতে রসনাতৃপ্তিরও প্রচুর অপশন। লাঞ্চে কত্থু পরোট্টা, কুজ়ি পনিয়ারাম, পুলিওগার রাইস এবং থালাপাকাট্টি বিরিয়ানি ট্রাই করুন। এগুলো চেখে না দেখলে পরে সত্যিই আফশোস করবেন!

এরপর সোজা চলে আসুন থ্যাগারায়া নগর বা টি নগরে। শপিং করার আদর্শ ডেস্টিনেশন। সোনার গয়না, স্টিলের জিনিসপত্র এবং শাড়ির জন্য এই মার্কেট বিখ্যাত। চেন্নাইয়ের বিখ্যাত নল্লী সিল্ক শাড়ি কিনতে হলে টি নগরে আসতেই হবে।

টি নগরে কেনাকাটা শেষ করে চলে আসুন ‘থাইজ়্যান্ড লাইটস মস্ক’-এ। বলা হয়, এই মসজিদের অ্যাসেম্বলি হল উজ্জ্বল করতে হাজার আলো জ্বালাতে হত। সেই থেকে এই নাম রাখা হয়। তবে প্রতিদিন সন্ধ্যেবেলা আলো দিয়ে সাজানো হয় এই মসজিদ। টি নগর থেকে সাড়ে চার কিলোমিটার দূরত্বে পড়বে এই মস্ক। রাতের নীল-হলুদ আলো মস্কে মায়াবী এক আবহের সৃষ্টি করবে। মনের সব চিন্তা-ভাবনা দেখবেন নিমেশে দূর হয়ে যাবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com