সেপ্টেম্বর আসছে। চীনে সেপ্টেম্বর মাস শরত্কালের সূচনা এবং শরত্কাল সবচেয়ে সুন্দর মৌসুম হিসেবে গণ্য করেন চীনারা। এ সুন্দর মৌসুমে কোথায় বেড়াতে যাওয়া যায়? সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে আমাদের সঙ্গে চলুন চীনের বেশ কিছু স্থানে।
ছাং পাই পাহাড়
চীনের চিলিন প্রদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ছাং পাই সান বা ছাং পাই পাহাড়ি অঞ্চল। দক্ষিণ-পূর্বে এটি উত্তর কোরিয়ার ভূখণ্ডসংলগ্ন। ছাং পাই পর্বতের উত্তর ঢালে অঞ্চলটির অবস্থান। এটি ছাং পাই পর্বত থেকে ৩৪ কিলোমিটার দূরে এবং শুয়াং মু ফেং নামে চীন-উত্তর কোরিয়া সীমান্ত থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে। অঞ্চলটির আয়তন ৫২.৪২ বর্গকিলোমিটার। ছাং পাই পর্বত দর্শনীয় স্থান হলো চীনের জাতীয় ফাইভ-এ মানের দর্শনীয় স্থান। পাশাপাশি চীনের মান জাতির উত্সভূমি এটি। ছিং রাজবংশ আমলে ‘পবিত্র স্থান’ হিসেবে এর সুনাম ছিল।
ছাং পাই পর্বত আসলে একটি সুপ্ত আগ্নেয়গিরি। ষোড়শ শতাব্দী থেকে মোট ৩ বার এখানে অগ্ন্যুত্পাতের ঘটনা ঘটে। ছাং পাই পর্বতের বৈশিষ্ট্যময় ভৌগোলিক কাঠামোর কারণে এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য খুবই আকর্ষণীয়।
এখানে পর্বতের চূড়া থেকে তলদেশ পর্যন্ত চারটি ঋতুর আবেশ পাওয়া যায়। কোথাও গরম, কোথাও নাতিশীতোষ্ণ, কোথাও ঠাণ্ডা। এমন পরিবেশ বিশ্বে বিরল।
ছাং পাই পর্বত যেন একটি প্রাকৃতিক জাদুঘর। এখানে বিরল প্রাণী আছে অনেক। আদিম মানুষের কম ক্ষতিগ্রস্ত বাসস্থান আছে এখানে। চীনের জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষণ অঞ্চলের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবার পাশাপাশি এটি ইউনেস্কোর প্রাকৃতিক বিশ্বের জীবমণ্ডল সুরক্ষা নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে।
ছাং পাই পর্বতের জলবায়ু আর্দ্র। বসন্ত, গ্রীষ্ম ও শীতকালে বৃষ্টিপাত ও তুষারপাত বেশি। শীতকাল দীর্ঘ ও ঠাণ্ডা। এখানকার শরত সবচেয়ে সুন্দর। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উঁচু অঞ্চলে সুন্দর আলপাইন তুন্দ্রা দৃশ্য দেখা যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উঁচু হওয়ার কারণে এখানে তীব্র অতিবেগুনি রশ্মির বিচ্ছুরণ দেখা যায়। ফলে এখানকার ফুলের রঙ গাঢ়।
কানাস হ্রদ
চীনের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলর কথা উল্লেখ করলে সাধারণত মানুষের মনে পড়ে বিশাল মরুভূমি, মিষ্টি আঙ্গুর এবং সুন্দর ও মার্জিত উইগুর জাতির মেয়েদের কথা। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিনচিয়াংয়ের বিশেষ একটি দর্শনীয়স্থান পর্যটকদের কাছে দারুণ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এটা হলো কানাস। সেখানে লোকেরা নিজেদের ইচ্ছামতো প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার শান্তি অনুভব ও উপভোগ করতে পারেন।
কানাস সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের উত্তর প্রান্তে অবস্থিত। এই অঞ্চল রাশিয়া, কাজাখস্তান এবং মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত। সেখানে পৌঁছাতে হলে সিনচিয়াংয়ের রাজধানী উরুমুছি থেকে বিমানে চড়ে প্রথমে আলেতা যেতে হবে, তারপর আলেতা থেকে গাড়িতে করে প্রায় চার ঘণ্টার দূরত্ব কানাস।
কানাস একটি প্রাকৃতিক সংরক্ষণ এলাকা। পাহাড়ের ভিতরের কাওসেন হ্রদ আর কানাস হ্রদ এই দর্শনীয়স্থানের দুটো প্রধান অংশ রয়েছে। হ্রদের জলসীমা সমুদ্র-সমতলের তুলনায় ১৩৭৪ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। হ্রদের আয়তন ৪৬ বর্গকিলোমিটারের কাছাকাছি। কানাস হ্রদের চার পাশের পাহাড় সারি সারি পাইন-গাছে ঢাকা। এখানকার সুন্দর দৃশ্য বর্ণনা করে শেষ করা যায় না। এখানে নানা ধরনের উদ্ভিদের সমাবেশ রয়েছে। কোনো কোনো উদ্ভিদ খুবই মূল্যবান। তা ছাড়া, ভাগ্য ভালো থাকলে, এখানে কোনো কোনো দুর্লভ বন্য জানোয়ার, পাখি ও উভচর সরীসৃপ প্রাণীও দেখা যায়!
ছিংহাই হ্রদ চীনের ফোর-এ শ্রেণীর দর্শনীয় স্থান। এটি ছিংহাই প্রদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ছিংহাই হ্রদ অববাহিকা এবং রাজধানী সিনিং থেকে ১৫১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১০৯ জাতীয় সড়ক ও ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ উভয়ই এর মধ্য দিয়ে চলে গেছে। পরিবহন ব্যবস্থা দারুণ সুবিধাজনক।
ছিংহাই হ্রদ চীনের বৃহত্তম অভ্যন্তরমুখী হ্রদের পাশাপাশি চীনের বৃহত্তম লবণাক্ত পানির হ্রদ! ‘চীনের সবচেয়ে সুন্দর হ্রদ’-এর সুনাম অর্জনকারী ছিংহাই হ্রদ জাতিসংঘের ‘আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি নির্দেশনামূলক পুস্তকে’ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া ‘ডাহুক পাখির বাসস্থান আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি কনভেনশনে’ স্থান পেয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে তা ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। এটি ছিংহাই প্রদেশের সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যময় দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ছিংহাই হ্রদের তিব্বতি নাম হলো ‘ছুও ওয়েন পো’ এবং মঙ্গোলীয় নাম ‘খখনর’। চীনা ভাষায় এর অর্থ হলো ‘নীল সমুদ্র’। স্থানীয় পথপ্রদর্শক লি ইয়ু ছাই এক ব্যাখ্যায় বলেন, ‘নিকটবর্তী অধিবাসীরা কখনো সমুদ্র দেখেন নি, তারা মনে করেন, ছিংহাই হ্রদ সমুদ্রের মতো এবং সাধারণত তাকে ‘পশ্চিম সমুদ্র’ বলা হয়।
ছিংহাই হ্রদ চীনের সবচেয়ে সুন্দর হ্রদ হিসেবে পরিচিত। তা পাঁচটি বড় হ্রদের মধ্যে প্রথম এবং চীনের বৃহত্তম অভ্যন্তরমুখী লবনাক্ত পানির হ্রদ। এর পানি শুধু ভেতরের দিকে প্রবাহিত হয়েছে এবং কখনও বাইরে প্রবাহিত হয় না। এর আয়তন অনেক বড়, প্রায় ৪ হাজার ৫শ’ বর্গকিলোমিটার। এর আয়তন ছিংহাই প্রদেশের রাজধানী সিনিং শহরের প্রায় অর্ধেক। হ্রদের উপরিভাগ সমুদ্র সমতল থেকে ৩ হাজার ১৯৬ মিটার উঁচু। গোটা ছিংহাই হ্রদ পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিক পর্যন্ত লম্বা এবং দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর দিক পর্যন্ত সংকীর্ণ। পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত ১০৬ কিলোমিটার এবং দক্ষিণ থেকে উত্তর দিক পর্যন্ত ৬৩ কিলোমিটার চওড়া।
ছিংহাই-তিব্বত মালভূমিতে অবস্থিত ছিংহাই হ্রদের চার পাশে রয়েছে বিশাল তৃণভূমি। এখানকার টোপোগ্র্যাফি প্রশস্ত ও সমতল। রয়েছে পানি সম্পদ পর্যাপ্ত এবং আবহাওয়া বেশ উষ্ণ। এটি বেশ সমৃদ্ধ ও সুন্দর প্রাকৃতিক চারণভূমি। ছিংহাই হ্রদের তীরে দাঁড়িয়ে দূরের দিকে তাকালে সবুজ পাহাড়, নীল হ্রদের পানি, সবুজ ঘাস এবং ছাগলের পালকে মেঘের মতো মনে হবে।
হ্রদের বিভিন্ন জায়গার গভীরতা ভিন্ন হওয়ায় হ্রদের পানির বৈজ্ঞানিক বৈশিষ্ট্যও ভিন্ন। বিভিন্ন ঋতুতে আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে একটি দিন সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় ছিংহাই হ্রদের পানির রঙ পরিবর্তিত হয়।
এখনকার আবহাওয়ায় ছিংহাই হ্রদের ভেতর থেকে বাইরে পর্যন্ত মোট ৭ ধরনের রঙ দেখা যায়। সুতরাং, কাছাকাছি তিব্বত জাতির অধিবাসীরা তাকে সাত রঙের হ্রদ বলেন। সবার জন্য এটা একটি পবিত্র হ্রদ। প্রতি বছরের জুলাই মাসে ছিংহাই হ্রদের দৃশ্য সবচেয়ে সুন্দর হয়ে ওঠে। সেসময় ছিংহাই হ্রদের বিশাল এলাকায় সর্ষে ফুল ফোটে। নীল আকাশ, সাদা মেঘ ও সোনালি সর্ষে ফুল ফোটে। যা দেখতে দারুণ সুন্দর!
এচিনা চীনের ইনারমঙ্গোলিয়ার পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত। প্রতি বছরের শরত্কালে এচিনা অঞ্চল অনেক মানুষের স্বর্গে পরিণত হয়।
এচিনায় ৩০ হাজার লোক বসবাস করেন। তবে এখানে থাকে ২৬ হাজার হেক্টর পপুলাস ইউফ্রাটিকার অলিভ ট্রি। শরত্কালের বাতাসে এ বৃক্ষের পাতা সোনালি রঙ ধারণ করে। সোনালি রঙের বন সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
এচিনা বৃক্ষের পাতা পাতলা। সোনালি পাতা বাতাসের তালে নাচতে থাকে। বনের গাছগুলোর নিচে বিশ্রাম নেয় পশুপালকরা। সব মিলিয়ে যেন ছবির মতো সুন্দর দেখায়!
পপুলাস ইউফ্রাটিকার অলিভ “বেঁচে থাকলে এক হাজার বছর ধরে জীবিত থাকে। মারা যাওয়ার পর এক হাজার বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকে এই গাছ। আর পড়ে গেলে এক হাজার বছরেও পচে না। এই গাছ তিন হাজার বছর ধরে অপেক্ষা করে বলে ধারণা করা হয়।
চুইয়ানহাই উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সবচেয়ে বড় হ্রদ। হ্রদের আকার সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়। পাখিরা হ্রদের ওপর উড়তে থাকে এবং নুড়ি পেরিয়ে যায়।
প্রতি বছরে শরত্কালে এচিনার সৌন্দর্য বেশ আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। আপনারা সেখানে যেতে ভুলবেন না কিন্তু।
যখন সূর্যাস্ত হয়, তখন সূর্যাস্তের আলোয় আকাশে ধোঁয়ার মতো আলোকিত হয়। আকাশে লাল ও থিয়েন হ্রদের নীল পরস্পরকে প্রতিবিম্বিত করে। সে সময় বাতাস এমনভাবে উত্থিত হয়, তখন আমি যেন সবচেয়ে সুন্দর সংগীত শুনেছি।
আর পাহাড়ে শরতের আমেজ আবার দেখতে পান বুতোং নদীর তীরে। চীনা ভাষা বুতোং কথাটির অর্থ বরফে পরিণত হয় না। এ নদী কোনো মৌসুমে বরফ হয় না। নদীর জলের হালকা স্রোত এবং তীরে সোনালি রঙিন গাছপালা যেন ব্রাশের মতো আপনার হৃদয়ে ছবি এঁকে যায়।
প্রশ্ন: আপনি রডোডেনড্রন গাছ দেখেছেন? বাংলার মানুষ কি রডোডেন্ড্রন গাছ চেনে বা জানে?
(পথের বাধন: পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি, আমরা দুজন চ’লতি হাওয়ার পন্থী । রঙিন নিমেষ ধূলার দুলাল পরাণে ছড়ায় আবীর গুলাল, ওড়না ওড়ায় বর্ষার মেঘে দিগঙ্গনার নৃত্য, হঠাৎ-আলোর ঝলকানি লেগে ঝলমল করে চিত্ত ॥ নাই আমাদের কনকচাঁপার কুঞ্জ । বন-বীথিকায় কীর্ণ বকুল পুঞ্জ । হঠাৎ কখন সন্ধেবেলায় নামহারা ফুল গন্ধ এলায়, প্রভাতবেলায় হেলাভরে করে অরুণ কিরণে তুচ্ছ উদ্ধত যত শাখার শিখরে 鬱 রডোডেনড্রন গুচ্ছ ।)
হাংচৌ
হাংচৌ চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চ্যচিয়াং প্রদেশের রাজধানী ও সর্বাধিক জনবহুল শহর। এটি উত্তরাংশের শাংহাই নগরের কাছে, ছিয়াং থাং নদীর মোহনার উত্তর তীরে, হাংচৌ উপসাগরের মাথায় অবস্থিত একটি বন্দর শহর। শহরটি নৌপথের মাধ্যমে দক্ষিণ দিকে চ্যচিয়াং প্রদেশের অভ্যন্তর ভাগের সঙ্গে সংযুক্ত। অন্যদিকে শহরটি চীনের প্রাচীন মহাখালের দক্ষিণ প্রান্তসীমার বন্দর, ফলে এটি উত্তরের ইয়াংচি নদীর ব-দ্বীপ অঞ্চলে বিস্তৃত খাল ও জলধারা নেটওয়ার্কের সঙ্গেও সংযুক্ত। মহাখালের হাংচৌ সংলগ্ন অংশটি ৬১০ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করা হয় এবং এটি একটি ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান।
চার দিকে ঘিরে চীনের বৃহত্তম বাণিজ্য ও শিল্পনগরী শাংহাইসহ বেশ কয়েকটি শহর ঘিরে থাকলেও হাংচৌ শহরটি অবসর কাটানোর জন্য শান্তিপূর্ণ একটি শহর। হাংচৌ শহর জাতিসংঘের শ্রেষ্ঠ বসতির পুরস্কার লাভ করেছে এবং বিশ্বের সংশ্লিষ্ট সংস্থা কর্তৃক আন্তর্জাতিক ‘উদ্যানশহর’ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।
শহরটি থিয়েনমু (স্বর্গের চোখ) নামের এক সুদৃশ্য পর্বতমালার পূর্ব পাদদেশে, বিখ্যাত শি হু (“পশ্চিম হ্রদ”) হ্রদের তীরে অবস্থিত। হ্রদটির সৌন্দর্য নবম শতক থেকে চীনের অনেক সাহিত্যকর্ম ও চিত্রকর্মে চিত্রিত হয়েছে। এটি চীনের সম্রাটদের একটি পছন্দের অবকাশযাপনস্থল ছিল। পর্যটকরা সুদৃশ্য শি হু বা পশ্চিম হ্রদের তীরবর্তী বহু প্রাচীন মঠ, মন্দির, উদ্যান, খিলান সেতু ও স্মৃতিবিজড়িত পুণ্যস্থান ঘুরে দেখতে পারেন। হ্রদের ভেতরে অনেক ছোট ছোট দ্বীপে নৌকায় ঘুরে আসা যায়। হ্রদের দক্ষিণ তীরে পাঁচ তলাবিশিষ্ট লেইফেং প্যাগোডাটি অবস্থিত, যার মূল কাঠামোটি ৯৭৫ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল। শি হু হ্রদটি বর্তমানে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা লাভ করেছে।
হাংচৌ চীনের অন্যতম একটি প্রাচীন শহর। চীনের সাতটি প্রাচীন রাজধানীর অন্যতম হাংচৌ শহরের রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। শহরটি প্রাচীনকালে প্রাচীর দিয়ে বেষ্টিত ছিল। ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে শহরটির বর্তমান নামটি দেওয়া হয়। ৯০৭-৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে শহরটি চীনের ইতিহাসের পাঁচ রাজবংশ পর্বের সময় উইউয়ে রাজ্যের রাজধানী শহরের ভূমিকা পালন করে। দক্ষিণ সোং রাজবংশের আমলে (১১২৭-১২৭৯) শহরটি রাজধানী হবার পাশাপাশি একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবেও সুখ্যাতি অর্জন করে। ইতালির ভেনিস থেকে আগত পর্যটক মার্কোপোলো ১৩শ শতকে শহরটি পরিদর্শন করেন। তিনি হাংচৌকে “মর্ত্যের মাঝে স্বর্গ” এবং “বিশ্বের সবচেয়ে সুসজ্জিত শহর” বলে আখ্যা দেন। ১৪শ শতকে পলি সঞ্চয়ের কারণে হাংচৌ বন্দরের নাব্যতা হ্রাস পেলে শহরটির গুরুত্ব কমে যায়।
হাংচৌ চীনের একটি উঠতি প্রযুক্তিকেন্দ্র। এখানেই চীনের সর্ববৃহত্ ইন্টারনেট ব্যবসা বা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবার প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। শহরটি ২০১৬ সালে ১১তম জি২০ সম্মেলনের আয়োজন করে।
লু শান বা লু পাহাড় বর্তমান চীনের জাতীয় উদ্যান। লু শানের কাছাকাছি নদী ও হ্রদ আছে। এখানকার পাহাড় উঁচু ও উপত্যকা বেশ গভীর। এখানকার জলবায়ু পাহাড়ি বৈশিষ্ট্যময়। এখানে বছরের ১৯১ দিনই কুয়াশা থাকে। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১ হাজার ৯১৭ মিলিমিটার। বার্ষিক গড় আর্দ্রতা ৭৮ শতাংশ। প্রতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গড় তাপমাত্রা থাকে ১৬.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গ্রীষ্মকালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখানকার আবহাওয়া হালকা ঠান্ডা ও আরামদায়ক। পাহাড়ের উপর তাপমাত্রা তলদেশের চেয়ে ৭ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম থাকে। এটা আসলেই গরমকাল কাটানোর উপযুক্ত স্থান। এখানে ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ ঋতু অবশ্যই শরত্কাল।
লু শানের প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থানগুলো প্রধানত পাহাড়ের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। কিন্তু দর্শনীয় স্থানগুলো বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এখানকার চলাচলের পথগুলোও কঠিন এবং বিপজ্জনক। পাহাড়ের গুলিং টাউনে কিছু সাংস্কৃতিক সম্পদসমৃদ্ধ স্থান আছে। প্রতিটি স্থাপত্য অথবা প্রতিটি দৃশ্যের পেছনে রয়েছে একেকটি কিংবদন্তি বা ইতিহাস। অফ পিক সিজনে টিকিটের দাম ১৩৫ ইউয়ান। পিক সিজনে ১৮০ ইউয়ান। এক টিকিটে এখানকার সব দর্শনীয় স্থানে যাওয়া যায়। তবে, দু’একটি জায়গায় বিশেষ কয়েকটি স্থান দেখতে নতুন করে টিকিট কাটতে হতে পারে।
শরত্কালে তৃণভূমি খুব সুন্দর অঞ্চল। বিপুল হলুদ রঙ আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে, যেন বিছিয়ে থাকা একটি অসীম চাদর!
হুলুনবেইর
হুলুনবেইর মহা-তৃণভূমি বর্তমানে চীনের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ও সুন্দরতম তৃণভূমি। এখানে আছে সবচেয়ে পরিষ্কার নীল আকাশ, সাদা মেঘ এবং শ্রেষ্ঠ ঘাস। যারা তৃণভূমির সুন্দর ছবি তুলতে চান, তাদের এখানে আসতেই হবে। সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের পাশাপাশি এখানে আছে বিভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থা। ঘোড়া ও উটে চড়ার সুযোগ পাবেন এখানে। এখানে ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতা আপনাকে আকৃষ্ট করবে। প্রতি বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ তৃণভূমি ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময়। এর মধ্যে জুলাই ও অগাস্ট মাসে তৃণভূমির ঘাস দেখতে অসাধারণ সুন্দর লাগে। এ সময় মঙ্গোলীয় জাতির বৈশিষ্ট্যময় নাদামু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিশাল তৃণভূমি ঘুরে দেখতে ভাড়া-করা-গাড়ি বা নিজের গাড়িতে যাওয়া ভালো। গরমকালে এ অঞ্চলে মশার উপদ্রব দেখা দেয়। অতএব আপনাকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ তৃণভূমিটি ঘুরে দেখতে আপনার অন্তত একদিন লেগে যাবে।
এরকুনা জলাভূমি
একুনা জলাভূমিকে বলা হয় এশিয়ার প্রথম জলাভূমি। এ জলাভূমি বর্তমানে চীনের সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত ও বৃহত্তম জলাভূমি। সুন্দর ছবি তোলার জন্য এ জায়গাটি উত্তম। বিশ্বের বহু আলোকচিত্রী এখানে আসেন ছবি তুলতে। এ জলাভূমিতে বিশাল এলাকাজুড়ে আছে ঝোপঝাড় দেখা যায়। এখানে নানা ধরনের পশুপাখির বাস। এখানে আনুমানিক ২ কোটি পাখি রয়েছে। এ ছাড়া, জলাভূমিতে লাল-ঝুঁটি সারসের (রেড-ক্রাউন্ড ক্রেইন) শ্রেষ্ঠ প্রজননকেন্দ্র। বিলুপ্তপ্রায় ‘সোয়ান গুজ’ (এক ধরনের বিরল ও বড় রাজহাঁস)-এর বিচরণস্থলও এই জলাভূমি। এ অঞ্চলে ৭২০ মিটার উঁচু একটি পাহাড়ে আরোহণ করলে পুরো জলাভূমি একসঙ্গে দেখা যায়। তবে, যারা পাহাড়ে চড়তে পারেন না, তারা জলাভূমির বিশেষ যানে চড়ে পুরো এলাকা ঘুরে দেখতে পারেন। জলাভূমিটি ঘুরে দেখতে এক থেকে দু’ঘণ্টা সময় লেগে যাবে।
রুবি/তৌহিদ/শিখা