এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন দেশের নাম চীন। এখানে যেমন রয়েছে ঐতিহাসিক স্থাপত্য, তেমনই রয়েছে আকাশচুম্বি দালান। আয়তনের দিক থেকে রাশিয়া আর কানাডার পরপরই চীনের অবস্থান।পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য দেশটির দরজা সবসময় খোলা। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ চায়না যাচ্ছেন টুরিস্ট অথবা বিজনেস ভিসা নিয়ে।
আপনি চাইলে নিজে অথবা কোন ট্রাভেল এজেন্টের সাহায্য নিয়ে বাংলাদেশ থেকে চায়না টুরিস্ট ভিসা করতে খুব সহজেই করে ফেলতে পারেন। তবে বলে রাখা ভালো যে আপনি নিজে গিয়ে ভিসা এপ্লিকেশন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে পোহাতে পারেন বেশ ঝামেলা ।
যেভাবেই আপনি আবেদন করতে চান না কেন সবার আগে আপনাকে জানতে হবে চায়না ভিসা আবেদন করতে হলে কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন, ভিসা ফি কেমন? প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো ঠিকভাবে তৈরি করে ভিসা আবেদনের সাথে জমা দিতে পারলে আপনার ভিসা পাবার সম্ভাবনা থাকবে অনেকটাই নিশ্চিত। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক কিভাবে আপনার ভিসা আবেদনের সাথে ঠিকভাবে আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসগুলো তৈরি করবেন।
আপনাকে নির্ভুল তথ্য দিয়ে ভিসা এপ্লিকেশন ফর্মটি পূরণ করতে হবে এবং ফর্মে নির্ধারিত স্থানে পাসপোর্ট অনুযায়ী সাক্ষর করতে হবে।
(২) পাসপোর্ট
নূন্যতম ৬ মাস মেয়াদ সম্পন্ন একটি পাসপোর্ট থাকতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় আপনি যেদিন ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন ঠিক সেদিন থেকে পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাস থাকে ফলে ভিসা পেতে পেতে আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাস থেকে কমে যায়, এমন হলে অনেক সময় এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন সমস্যা করে। সে ক্ষেত্রে আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাস থেকে কিছুদিন বেশি থাকলে খুবই ভালো হয় যেন ভিসা পাওয়ার পরও পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাস থাকে।
পাসপোর্টে অবশ্যই অন্তত দুটি পাতা ফাঁকা থাকতে হবে যাতে করে ভিসা স্টিকার এবং ইমিগ্রেশন ষ্ট্যাম্প ওই পাতাতে দেয়া যায়। সেই সাথে সকল পুরাতন পাসপোর্টও জমা দিতে হবে।
(৩) ছবি
২ কপি ল্যাব প্রিন্ট ছবি (সাইজ হবে ৩৩ মি.মি X ৪৮ মি.মি) জমা দিতে হবে। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড হবে সাদা। অন্য ব্যাকগ্রাউন্ড, ছবির সঠিক মাপ এবং ৩ মাসের আগে তোলা ছবি গ্রহনযোগ্য হবে না। আর সতর্কতা অবলম্বনের জন্য ছবির পিছনে আপনার সাক্ষর করে দিতে পারেন।
(৪) পেশার প্রমান পত্র (প্রুফ অফ প্রফেশন)
চায়না ভিসা পেতে হলে আপনার প্রফেশনের একটি প্রমানপত্র দিতে হবে।
* আপনি যদি চাকরিজীবী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার এন ও সি (নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট), ও ভিজিটিং কার্ড দিতে হবে। এন ও সি (নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট) অবশ্যই অফিসের প্যাডে অফিস কর্তৃপক্ষের সত্যায়িত করা থাকতে হবে এবং আপনার নাম ও পাসপোর্ট নাম্বার এন ও সি তে উল্লেখ করা থাকতে হবে। নো অব্জেকশন সার্টিফিকেটের স্যাম্পল কপি এখান থেকে দেখে নিতে পারবেন।
* আপনি যদি ব্যবসায়িক হয়ে থাকেন তাহলে আপনার নাম স্পষ্ট অক্ষরে আছে এমন ট্রেড লাইসেন্সের কপি এবং ভিজিটিং কার্ড দিতে হবে। প্রপ্রাইটরশিপ বিজনেস হলে ট্রেড লাইসেন্স, লিমিটেড কোম্পানি হলে ট্রেড লাইসেন্সের সাথে মেমরেন্ডাম কপি জমা দিতে হবে যেখানে আপনার নাম স্পষ্ট করে লেখা আছে।
* আপনি যদি ডাক্তার হয়ে থাকেন তাহলে বি এম ডি সি (বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) সার্টিফিকেট অথবা আপনার হাসপাতালের প্যাডে নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট এবং ভিজিটিং কার্ড দিতে হবে।
* আপনি যদি আইনজীবী হয়ে থাকেন তাহলে বার কাউন্সিল সার্টিফিকেট অথবা আপনার চেম্বারের প্যাডে নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট (আপনার নাম ও পাসপোর্ট নাম্বার সহ) এবং ভিজিটিং কার্ড দিতে হবে।
* আপনি যদি স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন তাহলে আপনার স্কুল / কলেজ / ইউনিভার্সিটির প্যাডে নো অব্জেকশন সার্টিফিকেট (আপনার নাম ও পাসপোর্ট নাম্বার সহ) অথবা বৈধ আই ডি কার্ডের কপি দিতে হবে।
বি দ্রঃ উপরের সমস্ত ডকুমেন্ট ইংরেজিতে অনুবাদ করে নোটারি করে জমা দিতে হবে।
(৫) প্রুফ অফ ফিনান্সিয়াল ডকুমেন্ট
ভ্রমণের সক্ষমতা প্রমানের জন্য আপনাকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং ব্যাংক সল্ভেন্সি সার্টিফিকেটের মূল কপি জমা দিতে হবে। ব্যাংক স্টেটমেন্টটি হতে হবে বিগত ৬ মাসের লেনদেনের উপর ভিত্তি করে। এক্ষেত্রে আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট পার্সোনাল অথবা স্যালারি একাউন্ট ও হতে পারে। আপনি একা ট্রাভেল করলে আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্টে অবশ্যই ন্যূনতম ১,৫০,০০০(এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা অবশিষ্ট থাকতে হবে।
(৬) চায়না হোটেল বুকিং কপি।
চায়নাতে আপনি কোথায় কোন হোটেলে থাকবেন তার একটি বুকিং কপি আপনার ভিসা আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে। শুধু বুকিং কপি হলেই হবে হোটেল কনফার্ম করার প্রয়োজন নেই। যদি আপনার ভিসা হয়ে যায় কেবল তখনি আপনি বুকিং কনফার্ম করতে পারেন। হোটেল বুকিং এর জন্য ট্র্যাভেল এজেন্টের সহযোগিতাও নিতে পারেন।
(৭) ঢাকা চায়না ঢাকা রিটার্ন এয়ার টিকিট বুকিং কপি।
ঢাকা চায়না ঢাকা রিটার্ন এয়ার টিকেটের বুকিং কপি আপনার ভিসা আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে। ভিসা হয়ে যাবার পর টিকিটটি কনফার্ম করে ফেলতে পারেন। এক্ষেত্রেও আপনি ট্র্যাভেল এজেন্টের সহযোগিতা নিতে পারেন।
(৮) ন্যাশনাল আই ডি কার্ডের ফটোকপি।
আপনার মূল ন্যাশনাল আই ডি কার্ডের ফটোকপি আবেদনপত্রের সাথে জমা দিতে হবে। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে আপনার পাসপোর্টে দেয়া তথ্যের সাথে আই ডি কার্ডে দেয়া তথ্যের হুবুহু মিল থাকে।
(৯) ইনভাইটেশন লেটার
চায়না গভারমেন্ট কর্তৃক অনুমোদিত যেকোনো চায়না ট্রাভেল এজেন্টের ইনভাইটেশন লেটার আপনাকে যোগার করতে হবে। এই ইনভাইটেশন লেটারটি নিজে যোগার করা একটু ঝামেলার হয়। এক্ষেত্রে আপনি যদি দেখে শুনে বুঝে কোন ট্রাভেল এজেন্টের সহযোগিতা নেন তাহলে তারাই আপনার জন্য ইনভাইটেশন লেটার যোগার করে দিবে।
ভিসা আবেদন জমা হয়ে গেলে কিছুদিনের মধ্যে আপনার ফোন নাম্বারে ফোন আসবে। ফোনে আপনার তথ্য যাচাই করার জন্য কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবে, অনেক সময় চায়না এম্বাসি ইন্টারভিউ ও নিয়ে থাকে। সবকিছু ঠিক থাকলে ৭ থেকে ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে আপনি ভিসা পেয়ে যাবেন। যদি দ্রুত ভিসা করাতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে কিছু অতিরিক্ত টাকা গুণতে হতে পারে।