মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদশালী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) বিদেশি নাগরিকদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ভিসা চালু করে ২০১৯ সালে। এর আওতায় দশ বছর মেয়াদে ভিসা দেওয়া হয়ে থাকে। মূলত ১০ বছর মেয়াদের যে ভিসা আরব আমিরাত দিয়ে থাকে সেটিই গোল্ডেন ভিসা।
২০১৯ সালে চালু হওয়ার পর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের এই গোল্ডেন ভিসা হাজার হাজার বিনিয়োগকারী, পেশাদার, শিক্ষার্থী এবং উদ্যোক্তাদের দেওয়া হয়েছে। অবশ্য চাকরি না থাকলেও আরব আমিরাতের বহু-আকাঙ্ক্ষিত এই ভিসা পাওয়া যাবে ৫টি উপায়ে।
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) আরব আমিরাতের দুবাইভিত্তিক পত্রিকা খালিজ টাইমস এ তথ্য দিয়েছে।
দুবাইয়ের জেনারেল ডিরেক্টরেট অব রেসিডেন্সি অ্যান্ড ফরেনার্স অ্যাফেয়ার্স (জিডিআরএফএ) অনুসারে, ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে আরব আমিরাতে গোল্ডেন ভিসা ইস্যু ৫২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আর ২০২২ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত যোগ্য সম্পত্তি ক্রেতা, বিনিয়োগকারী, পেশাদার এবং অন্যান্য আবেদনকারীকে দেড় লাখেরও বেশি গোল্ডেন ভিসা ইস্যু করেছিল মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদশালী এই দেশটি।
খালিজ টাইমস বলছে, আরব আমিরাতে ১০-বছরের ভিসাধারী ব্যক্তিদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। যার মধ্যে ভিসাধারী ব্যক্তির স্বামী/স্ত্রী এবং সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদেরও আরব আমিরাতে বসবাসের অনুমতি প্রদান করা হয়।
এছাড়া স্পন্সরড শিশুদের বয়সসীমা ১৮ বছর থেকে ২৫ বছর করা হয়েছে, এবং অবিবাহিত কন্যাদের জন্য বয়সের কোনও সীমাবদ্ধতা নেই। এছাড়া বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের সকলকে তাদের বয়স নির্বিশেষে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্যসেবা, মিডিয়া, আইটি এবং অন্যান্য শিল্পে কর্মরত পেশাদারদের মধ্যে যাদের মাসিক বেতন ৩০ হাজার দিরহাম বা তার বেশি তারা গোল্ডেন ভিসার জন্য যোগ্য। গত বছরের এপ্রিলে গোল্ডেন ভিসা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম মাসিক আয় ৫০ হাজার দিরহাম থেকে কমিয়ে ৩০ হাজার দিরহাম করা হয়েছিল।
তবে আরব আমিরাতে এমন কিছু ক্যাটাগরি রয়েছে যেখানে ১০ বছরের ভিসা পেতে আবেদন করার জন্য আবেদনকারীদের চাকরির প্রয়োজন নেই। এমনই পাঁচটি উপায় এখানে তুলে ধরা হলো:
সংযুক্ত আরব আমিরাতের যেসব বাসিন্দা এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের যারা এক বা একাধিক সম্পত্তি কিনেছেন যার মোট মূল্য ২০ লাখ দিরহাম বা তার বেশি তারা গোল্ডেন ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এর মধ্যে রয়েছে অফ-প্ল্যান এবং দেশটিতে বিদ্যমান সম্পত্তি উভয়ই।
অফ-প্ল্যান সম্পত্তি কেনার অর্থ হলো এমন কোনও সম্পত্তি – সাধারণত একটি অ্যাপার্টমেন্ট – যা নির্মাণ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই কেনা হয়ে থাকে।
এছাড়া সম্পত্তি ক্রেতাদের ১০ বছরের ভিসা পেতে যোগ্য হওয়ার জন্য ১০ লাখ দিরহাম ডাউন পেমেন্টের বাধ্যবাধকতাও বাদ দিয়েছে দুবাই। অবশ্য যোগ্যতার মানদণ্ড পূরণ করতে সম্পত্তির মোট মূল্য এখনও ২০ লাখ দিরহাম বা তার বেশি হতে হবে।
উচ্চ-ধনবান ব্যক্তিরা মর্যাদাপূর্ণ এই ভিসা পেতে দুই বছরের জন্য আরব আমিরাতের স্থানীয় কোনও ব্যাংকে ২০ লাখ দিরহাম জমা করতে পারেন। আরব আমিরাতের অনেক স্থানীয় ব্যাংক এই স্কিমটি বেছে নিতে চাওয়া ব্যক্তিদের এই ক্ষেত্রে সাহায্যের প্রস্তাব দিচ্ছে।
গোল্ডেন ভিসা লাভের মাধ্যমে আরব আমিরাতে বসবাসের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নির্বাহী প্রবিধানগুলো উদ্যোক্তাদের জন্য বেশ নমনীয়।
এক্ষেত্রে একজন উদ্যোক্তাকে আরব আমিরাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই) বিভাগে নিবন্ধিত কোনও একটি স্টার্টআপের মালিক বা অংশীদার হতে হবে। অবশ্য সেখানে বার্ষিক আয় ১০ লাখ দিরহামের কম হতে পারবে না।
এছাড়া যদি কোনও ব্যক্তি স্টার্টআপের প্রতিষ্ঠাতা হন বা পূর্ববর্তী কোনও উদ্যোক্তা প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে একজন হন যার মোট মূল্য ৭০ লাখ দিরহামের কম নয়, তাহলে তিনি আরব আমিরাতের গোল্ডেন রেসিডেন্সের অধিকারী হবেন।
তবে এই প্রকল্প বা ধারণার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় বা উপযুক্ত স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
এমিরেটস সায়েন্টিস্ট কাউন্সিলের সুপারিশের ভিত্তিতে উচ্চ কৃতিত্ব ও মেধার স্বাক্ষর রাখা বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের গোল্ডেন ভিসা রেসিডেন্সি দেওয়া হয়।
এক্ষেত্রে প্রার্থীদের বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকৌশল, প্রযুক্তি, জীবন বিজ্ঞান এবং প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের বিষয়ে পিএইচডি বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। এর পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য গবেষণা-সম্পর্কিত অর্জনও থাকতে হবে তাদের।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মেধার উচ্চ-স্বাক্ষর রাখা শিক্ষার্থী এবং আরব আমিরাতের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্বব্যাপী সেরা ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অসামান্য কৃতিত্ব অর্জন করা গ্রাজুয়েটরা আমিরাতে ১০ বছরের ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।
এক্ষেত্রে যোগ্যতার নির্দিষ্ট মানদণ্ডের মধ্যে একাডেমিক পারফরম্যান্স (ক্রমবর্ধমান গড়), স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনার বছর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিবিন্যাস অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।