সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:২৯ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

চলুন বেড়িয়ে আসি থাইল্যান্ডের ‘ছিয়াং মাই’ শহর থেকে

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১১ মে, ২০২১

থাইল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রদেশ ছিয়াং মাই। ১২৯৬ সালে এ শহর প্রতিষ্ঠিত হয়। আয়তন ২০ হাজার ১০৭ বর্গকিলোমিটার। প্রাদেশিক রাজধানী ছিয়াং মাই। পাশাপাশি এটি উত্তর থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও বটে। উন্নয়নের দিক দিয়ে শহরটি শুধু দেশটির রাজধানী ব্যাংককের চেয়ে খানিকটা পিছিয়ে আছে। তবে শহরের প্রাকৃতিক দৃশ্য খুব সুন্দর; সবখানে ফুল আর সবুজ ঘাস চোখে পড়বে। বিশেষ করে এখানকার গোলাপ বিশ্বখ্যাত। এ গোলাপ দেশের বাইরে ‘উত্তরাঞ্চলের গোলাপ’ নামে সুপরিচিত।

ছিয়াং মাই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড়ে ৩০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। এটি থাইল্যান্ডের পার্বত্য শহরও বটে। আবহাওয়া হাল্কা ঠাণ্ডা। গরমকালটা পর্যটকদের বেড়ানোর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এখানকার বনভূমির আয়তন ১৬ হাজার ৭শ’ বর্গকিলোমিটার।

ইতিহাসে দীর্ঘকাল থাইল্যান্ডের রাজধানী ছিল ছিয়াং মাই। এ শহরে এখনও অনেক মূল্যবান ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ টিকে আছে। শহরে উত্তর থাইল্যান্ডের উজ্জ্বল ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতিনিধি হিসেবে অনেক প্রাচীন মন্দির আছে। পাশাপাশি ছিয়াং মাইয়ের রেশম ও বস্ত্রপণ্যও বিশ্ববিখ্যাত। প্রতি বছর অনেক রেশম ও বস্ত্রপণ্য এখান থেকে বিদেশে রফতানি হয়। দেশটির নির্মাণ শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ এই শহর।

থাইল্যান্ডের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকেন্দ্র ছিয়াং মাই। এখানে ছিয়াং মাই বিশ্ববিদ্যালয় ও পায়াপ বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় আছে।

ছিয়াং মাইয়ের আঞ্চলিক ভাষা এবং চীনের ইয়ুননান প্রদেশের সিশুয়াংপাননা’র ভাষা একই। কারণ, একসময় এই দু’টি অঞ্চল এক শাসকের অধীনে ছিল।

চলুন বেড়িয়ে আসি থাইল্যান্ডের ‘ছিয়াং মাই’ শহর থেকে

বিমান  যোগাযোগ ব্যবস্থা:

ছিয়াং মাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সি বা শাটল বাসে করে মূল শহরে যেতে ১৫ মিনিট লাগে।

ছিয়াং মাই শহরে হলুদ রঙের বাসের পাশাপাশি রিকশা, টুকটুক ও ট্যাক্সি রয়েছে। শহরে টুকটুকের ভাড়া সাধারণত ১০ থাই বাথ। বাসের চেয়ে এটি বেশ সুবিধাজনক। দিন হিসেবে ভাড়া করলে ৩০০ বাথের মতো লাগবে টুকটুকে। তখন আপনি টুকটুকে চড়ে শহরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।

পর্যটনের শ্রেষ্ঠ সময়:

 ছিয়াং মাইয়ের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। ছিয়াং মাই-এ ভ্রমণের স্বর্ণ সময় হচ্ছে প্রতি বছরের নভেম্বর থেকে পরবর্তী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত। এপ্রিলে জাঁকজমকপূর্ণ পানি ছিটানো উত্সব অনুষ্ঠিত হয় ।

দই সুথেপ পাহাড় ও ওয়াট ফ্রা থাট

চলুন বেড়িয়ে আসি থাইল্যান্ডের ‘ছিয়াং মাই’ শহর থেকে

দই সুথেপ পাহাড়, পশ্চিম ছিয়াং মাইয়ের ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৬৬৭ মিটার উঁচু। ছিয়াং মাইয়ের সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের প্রতীক যেন এই পাহাড়।

ওয়াট ফ্রা থাট দই সুথেপ পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। ১৩৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত। চীনা ভাষায় শুয়াং লোং সি অর্থাত্ দুটো ড্রাগন মন্দির। কারণ, মন্দিরের প্রবেশদ্বারের দু’পাশে ৫শ’ মিটার লম্বা বিরাট ড্রাগন খোদাই করা আছে। মন্দিরে ১৬ শতাব্দীতে নির্মিত একটি স্বর্ণ টাওয়ার আছে। টাওয়ারে বুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত কিছু জিনিস আছে। তাই একে পবিত্র স্থান হিসেবে গণ্য করা হয়। ছিয়াং মাই রাজবংশের বিভিন্ন সম্রাট মন্দিরটির প্রতি খুবই ভক্তিশ্রদ্ধা প্রদর্শন করতেন। তারা এখানে নিয়মিতভাবে ধর্মীয় আচার পালন করতেন। এ ছাড়া, প্রতি বছরের জুন ও জুলাই মাসে এখানে বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মহাসম্মেলন আয়োজিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন এখানে আসেন

চলুন বেড়িয়ে আসি থাইল্যান্ডের ‘ছিয়াং মাই’ শহর থেকে

হাতি সাফারি:

থাইল্যান্ডের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে হাতির অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। হাতি শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো তা নয়, সাদা হাতি ছিল রাজার প্রতীক। থাইল্যান্ডের প্রায় প্রতিটি স্থানেই হাতি দেখা যায়। বিশেষ করে ছিয়াং মাইয়ে আপনি হাতির সাথে ছবি তুলতে পারবেন, হাতির গায়ে হাতও বুলাতে পারবেন।

থাই মাসাজ ও স্পা:

চলুন বেড়িয়ে আসি থাইল্যান্ডের ‘ছিয়াং মাই’ শহর থেকে

থাইল্যান্ডে মাসাজ ও স্পা কোনো বিলাসিতা নয়। এগুলো প্রয়োজনীয় থেরাপি। ছিয়াং মাইয়ের সবই জায়গায় মাসাজ ও স্পা’র ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকি বাজার বা রাস্তার দু’পাশে সারি সারি আসন পাতা আছে দেখতে পাবেন। সেখানে তুলনামূলকভাবে কম দামে মাসাজ সেবা দেওয়া হয়।

জঙ্গল ফ্লাইট:

চলুন বেড়িয়ে আসি থাইল্যান্ডের ‘ছিয়াং মাই’ শহর থেকে

জঙ্গলের ওপর দিয়ে যাত্রা। এটাই জঙ্গল ফ্লাইট। এ যাত্রাপথের দৈর্ঘ্য ৪ কিলোমিটার। এ সময় পর্যটকরা ৩৪টি গাছের উপরে পাতা প্ল্যাটফর্মের মধ্য দিয়ে চলাচল করতে পারেন এবং জঙ্গলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। যাত্রাপথের স্থান ৫০ মিটার থেকে ৩শ’ মিটার উঁচুতে অবস্থিত।

ছিয়াং মাইয়ে তিনটি বিখ্যাত নৈশকালীন বাজার বা নাইট মার্কেট আছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় প্রাচীন নগরের পূর্ব দিকে ছাং খান রোডে এই বাজার বসে। শনিবার সন্ধ্যায় প্রাচীন নগরের দক্ষিণ দিকে ছিয়াং মাই গেটের দক্ষিণ ওয়ালাই রোডে স্যাটারডে মার্কেট বা শনিবারের বাজার বসে। আর রোববার সন্ধ্যায় Tha Pae Gate থা পা-ই গেটের নিকটবর্তী স্থানে বসে সানডে মার্কেট বা রোববারের বাজার। এসব বাজার বা মার্কেটে থাইল্যান্ড বা ছিয়াং মাই’র বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্যময় জিনিস পাওয়া যায়।

রুবি/তৌহিদ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com