রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৪ পূর্বাহ্ন

ঘুরে আসুন সাগর কন্যার দ্বীপ- সন্দ্বীপ

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৪

এ কথার সত্যতা যথাযথ ভাবে বোঝা যায় বাংলাদেশের অত্যন্ত প্রাচীন দ্বীপ সন্দ্বীপে গেলে। স্থানীয় জনগণের কাছে এটি ‘সাগর কন্যা দ্বীপ’ নামেই বেশি পরিচিত। সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ এই সময়টি বেড়ানোর জন্য বেশি উপযোগী। বছরের অন্যান্য সময়ে জোয়ার বেশি থাকায় সমুদ্রপথে যাতায়াত করা থেকে একটু সাবধান থাকাই শ্রেয়।

যেভাবে যাবেন:
বাংলাদেশের যে কোন অঞ্চল থেকে সন্দ্বীপ উপজেলায় যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম নৌপথ। দ্বীপ থেকে মূল ভূখন্ডে যাতায়াতের জন্য রয়েছে বি.আই.ডাব্লিউ. টি সি এর দুটি স্টিমার (যার একটি প্রাকৃতিক পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে বন্ধ রয়েছে )।

দেশের যে কোন জায়গা থেকে চট্টগ্রামের এ কে খান মোড়ে নামবেন। এখান থেকে প্রাইভেট গাড়ি বা লোকাল বাসে কুমিরাঘাট আসা যায়। লোকাল বাসে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১৫ টাকা , প্রাইভেট গাড়িতে আসলে ৩০০-৩৫০ টাকা খরচ পরতে পারে।

কুমিরাঘাট থেকে সন্দ্বীপ গুপ্তছড়া ঘাট:

চট্টগ্রাম থেকে দ্বীপে পৌঁছানোর সহজরাস্তা ‘কুমিরা টু গুপ্তছড়া ঘাট’ । দ্বীপটি বঙ্গোপসাগরের মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত এবং সন্দ্বীপ চ্যানেল দ্বারা চট্টগ্রাম উপকূল থেকে পৃথক। জাহাজ, স্পিডবোটে যেতে পারলে ভালো। অবশ্য অনেক সময় ট্রলারে করেও যেতে পারেন। জাহাজে দ্বীপ পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লাগবে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা , স্পিডবোটে ২০-২৫ মিনিট। জাহাজে শ্রেণিভেদে বিভিন্ন দামের টিকেট পাবেন। স্পিডবোটের টিকেট পাবেন জনপ্রতি ২৫০ টাকা করে এবং শিশুদের জন্য হাফ টিকেট নিলে চলবে।

 

কুমিরা থেকে সন্দ্বীপ চ্যানেল যাওয়ার পথের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, সেই সাথে গাঙচিলদের পাশাপাশি উড়ে চলা এবং সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে আকাশে রংধনুর অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেখতে দারুণ সময় কাটবে।

সকালে সাতটার দিকে কুমিরা থেকে রওনা হয়ে সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ পৌঁছে যাবেন দ্বীপে। যদি খুব কম সময় নিয়ে বেড়াতে যান, তাহলে রাতে না থেকে ঐ দিনই যে কোন সময় স্পিডবোটে করে ফিরে আসতে পারেন চট্টগ্রাম। আর যদি সাগর কন্যার রাতের সত্যিকার মোহনীয় রূপ দেখতে চান, তবে থেকেই যান না রাত টা।

থাকার ব্যবস্থা:

সন্দ্বীপে এখন থাকার জন্য বেশ ভালো কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। খুব স্বল্প খরচে থাকতে পারেন এসব হোটেলগুলোতে। গুপ্তছড়া ঘাট থেকে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল বা সিএনজি করে সন্দ্বীপ কমপ্লেক্স চলে গেলে পেয়ে যাবেন আবাসিক হোটেল। গ্রিনচিলি, জামান গেস্ট হাউজ, রয়েল ইন আবাসিক হোটেলগুলো ভালো মানের। হোটেলগুলোতেই তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা আছে। এছাড়া বাজারের ভেতর যে খাবারের হোটেলগুলো আছে, ওখানেও আপনার পছন্দ অনুযায়ী খাবার পাবেন।

খাবার ব্যবস্থা :

দ্বীপ দেখতে যেয়ে তাজা মাছ না খেয়েই ফিরে আসবেন, তাই কি হয় ! এখানে আপনি পাবেন সকল প্রকার সামদ্রিক মাছ সহ পুকুরের সকল প্রকার মাছ। দ্বীপে ঘুরতে এলে সন্দ্বীপের ঐতিহ্যবাহী বিনয়সাহার দোকানের ছানার মিষ্টি, সন্দ্বীপের মহিষের দই, ডাব অবশ্যই একবার হলেও খেয়ে দেখবেন। এই দ্বীপের ডাব একাধারে মিষ্টি ও সু স্বাদু।

দ্বীপবন্ধু মুস্তাফিজুর রহমান জেটি:

 

সন্দ্বীপ গুপ্তছড়া ঘাটে এই নবনির্মিত জেটিটি অবস্থিত। জেটির দুই পাশের ল্যাম্পপোস্টের আলোর সৌন্দর্য দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন। সাগরের গর্জনের শব্দের সাথে সাথে  সাগরের শীতল হাওয়া আপনাকে এনে দিবে অনাবিল প্রশান্তি। এই জেটির দুই পাশে রয়েছে ম্যানগ্রোভ বন, যা জেটির সৌন্দর্য দ্বিগুণ বৃদ্ধি করেছে ।

সমুদ্র সৈকত:

সৈকতটি সন্দ্বীপের রহমতপুরে ইউনিয়নে অবস্থিত। এটি রহমতপুর পুরাতন স্টিমারঘাট নামে পরিচিত। পড়ন্ত বেলায় পশ্চিম আকাশে তেজ কমে যাওয়া সূর্যটা সৈকতের প্রান্ত জুড়ে ছড়িয়ে দেয় রক্তবর্ন আভা। এই সমুদ্র সৈকতে আপনি দেখতে পাবেন সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য। সৈকতটি ভ্রমণ পিপাসুদের তির্থ স্থানে পরিনত হয়েছে। সমুদ্র সৈকতটির দৈঘ্য প্রায় ১০ কিলোমিটার।

সবুজ চর:

নাম শুনেই হয়তো অনেকটা অনুমান করতে পারছেন, কেন এই জাইগাটির নাম সবুজচর। স্থানিয় অনেকে এই স্থানটিকে গ্রিনল্যান্ড ও বলে। এই জাইগাটি সন্দ্বীপের দীঘাপাড় ইউনিয়নে অবস্থিত। প্রকৃতির শান্ত স্নিগ্ধরূপ , সবুজ ঘাসের গালিচায় মোড়ানো এই চরটি। যতদূর চোখ যাবে সবুজ আর সবুজের নয়নাভিরাম দৃশ্য আপনাকে উৎফুল্ল করবে।ৱ

 

এই চরে রয়েছে ম্যানগ্রোভ বন, বনে রয়েছে বক, চিল, মাছরাঙা, বালিহাঁস, ময়না, টিয়া, ঘুঘুসহ আরো অনেক রকম পাখি। শীতকালে অতিথি পাখির কলকাকলীতে মুখরিত হয়ে ওঠে এই গ্রীনল্যান্ডটি।চিন্তার কোন কারণ নেয়,ভাড়া চালিত মোটরসাইকেল, সিএনজি দিয়ে সন্দ্বীপ কমপ্লেক্স থেকে ৩০-৪০ মিনিটে মধ্যে পৌঁছে যাতে পারবেন সবুজচর।

নিরাপত্তা:

আপনি কোথাও ঘুরতে যাবেন, নিরাপত্তার কথা ভাববেন না তা কী হয়! আপনার নিরাপত্তা দেয়ার জন্য এখানে রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ ও কোস্টগার্ড। নিরাপত্তার বিষয়ে চিন্তা করার কোন প্রয়োজন নেয়। এই দ্বীপের স্থানীয় লোকজন অনেক আন্তরিক ও অতিথিপরায়ণ।

প্রতিদিনকার ব্যস্ত জীবন থেকে একটু মুক্তি পেতে চাইলে ঘুরেই আসুন না অসম্ভব সুন্দর সাগর কন্যার দ্বীপ থেকে। দেখুন প্রকৃতি কি অপরূপ পসরা সাজিয়ে আপনার আসার অপেক্ষায় আছে।

মিজানুর রহমান টিটু

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com