মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:১৩ অপরাহ্ন

ঘুরে আসুন ভুটান থেকে

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৩

স্বল্প বাজেটে বজ্র ড্রাগনের দেশ ভুটান ঘুরে আসতে চান কিন্তু, সঠিক তথ্যের অভাবে পরিকল্পনাটা ঠিক মতো দাঁড় করাতে পারছেন না?

তাহলে আপনার জন্য এই লেখাটি। আসুন আহলে আজ আমরা জেনে নেই কম খরচে সড়ক পথে ভুটান ভ্রমণের বিস্তারিত— সড়ক পথে ভুটান যেতে হলে আপনাকে প্রথমেই ভারতের ট্রানজিট ভিসা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, ভিসার মেয়াদ কিন্তু ১৪ দিন। অর্থাৎ আপনি যেদিন যাবেন তার কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ দিন আগে আপনাকে ভারতীয় ভিসা সেন্টার গুলশানে আবেদন করতে হবে।

ভিসা জমা দিতে যা লাগবে:

১. অনলাইনে ফরম পূরণ করে তার প্রিন্ট কপি। ভিসা ফর্ম পূরণের সময় ভিসা টাইপ ট্রানজিট ও পোর্ট দিবেন বাই রোড চ্যাংরাবান্ধা/জয়গাঁও

২. সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডযুক্ত দুই ইঞ্চি বাই দুই ইঞ্চি ছবি, ফরমের সাথে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিতে হবে।

৩. ন্যাশনাল আইডি বা জন্মসনদের ফটোকপি

৪. বর্তমান ঠিকানার সাম্প্রতিক বিদ্যুৎ বা গ্যাস বিল শেষ ৬ মাসের৬. চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে এনওসি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট), ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স এবং ছাত্রছাত্রীদের আইডি কার্ডের ফটোকপি।

৫. ডলার এন্ড্রোসমেন্টের (২০০ ডলার) কপি অথবা ব্যাংক স্টেটমেন্টের (১৫ হাজার টাকা থাকতে হবে) কপি।

৬. বর্তমানে ভুটানে হোটেল রিজার্ভেশনের কাগজও দেখতে চায় ভারতীয় হাইকমিশন,তাই ভুটানে যে হোটেল বুকিং দিয়েছেন, এর কাগজও জমা দিতে হবে।

৭. পাসপোর্ট ও পাসপোর্টের ফটোকপি (পাসপোর্টের মেয়াদ সর্বনিম্ন ছয় মাস থাকতে হবে)। আগে ইন্ডিয়ান ভিসা থাকলে তারও ফটোকপি লাগবে। পুরাতন পাসপোর্ট থাকলে সেটা জমা দিতে হবে।

৮. বাসে আসা যাওয়ার কনফার্ম টিকেট সেক্ষেত্রে শ্যামলী বা এসআর পরিবহন বা অন্য যেকোনো পরিবহনের বুড়িমারি বর্ডার-শিলিগুড়ি পর্যন্ত আসা যাওয়ার টিকেট। যেহেতু কনফার্ম টিকেট কাটবেন বাসের সেহেতু ভ্রমণ তারিখ ও হাইকমিশনে ভিসার আবেদন জমা দেয়ার তারিখের সাথে ১০-১২ দিন গ্যাপ রাখবেন। কারণ, জমা দেবার আট থেকে ১০ দিন পর ভিসা দেয়া হয়। তাই বাসের টিকেটের তারিখ এর পরে হতে হবে। বাসের টিকেটের ফটোকপিও জমা দিতে হবে অরজিনাল কপির সাথে। যেভাবে যাবেন: ট্রানজিট ভিসা নিয়ে সোজা চলে যান বুড়িমারি বর্ডারে। ঢাকা থেকে শ্যামলী, এসআর, মানিক আর নাবিলসহ কয়েকটি বাস ছাড়া হয়। ভাড়া ৮৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা। রাত ৮টার মধ্যে এসব বাস ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়।

পরদিন সকালে অর্থাৎ ভোরে পৌঁছে যাবেন বুড়িমারি। মনে রাখবেন বাংলাদেশের এপাশের নাম বুড়িমারি আর ভারতের ওপাশের নাম চ্যাংড়াবান্ধা। আর বর্ডার খোলা হয় এখানে সকাল ৯টায়। এ সময়টুকু বসেই থাকতে হবে। বাংলাদেশের ইমিগ্রেশনের কাজ সেরে চ্যাংড়াবান্ধা যেতে হবে। সেখানেও রয়েছে বেশকিছু ফর্মালিটি। ট্রাভেল ট্যাক্স ৫০০ টাকা ছাড়াও আরও ১০০ টাকা আপনাকে এখানে দিতে হবে। যদিও আমি জানি না এই টাকাটা কি জন্য প্রয়োজন। না দিলে এক ধরনের ঝামেলায় পড়তে হয়। এসব দেখার এখানে কেউই নেই। এবার দেশের বর্ডার পার হয়ে ওপারে যাবেন। সেখানেও দিতে হবে ১০০ টাকা জনপ্রতি। বাংলা ভাষায় ঘুষ। যেখানে দেশে এসব দেখার কেউ নেই অতএব ওই ভিনদেশেও কাউকে আশা করে লাভ নেই। এবার কাজ শেষ করে যাত্রার পালা।

এখানে অর্থাৎ চ্যাংড়াবান্ধায় আপনাকে ভারতীয় দালালরা জোর করবে টাকা অথবা ডলার ভাঙানোর জন্য। ওদেরকে বুঝতে দিবেন না আপনার কাছে কত টাকা আছে। অল্প কিছু ভাঙিয়ে কোনো মতে, এখান থেকে কেটে যাবার চিন্তা করবেন। চ্যাংড়াবান্ধা থেকে আপনাকে যেতে হবে জয়গাঁও বর্ডার। ট্যাক্সিতে চলে যেতে পারেন। সময় লাগবে সাড়ে তিন ঘণ্টার মতো। ট্যাক্সিতে ৪০০ রুপি মতো খরচ পড়বে জনপ্রতি। ৪ জন রিসার্ভ যেতে চাইলে সেটা হয়ে যাবে দেড় থেকে দুই হাজার রুপির মতো। চাইলে বাসেও যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে খরচ কমে আসবে অনেকটাই। . চ্যাংড়াবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে বাসস্ট্যান্ড ভ্যানে যেতে লাগবে ১০ রুপি সময় লাগবে ১০ মিনিট। . বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়নাগুড়ি বাস ১৫-২০ রুপি, সময় লাগবে ৩০ মিনিট। . ময়নাগুড়ি থেকে সোজা জয়গাঁও বাসে ভাড়া নেবে ৫০-৬৫ রুপি, সময় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। . জয়গাঁও থেকে ভারতীয় ইমিগ্রেশন পয়েন্ট টেম্পোতে লাগবে ১০ রুপি সময় লাগবে ১৫ মিনিট। ইমিগ্রেশনের কাজ সেরে আপনাকে হেঁটেই ঢুকতে হবে ভুটান। এটা ভুটানের প্রবেশ পথ। ফুন্টসোলিং। জয়গাঁও এর ওপারেই ফুন্টসোলিং। এখানেই আপনাকে অন অ্যারাইভাল ভিসা দেবে ভুটান।

এবার নিশ্চিন্তে ভুটান ঘোরার পালা। চাইলে সেদিন ফুন্টসোলিং থেকে যেতে পারেন। মোটামুটি কম খরচেই মিলবে ভালো হোটেল। এক রুম ১ থেকে দেড় হাজার টাকায় থাকতে পারবেন দু’জন। সময় বেশি না থাকলে সেদিন ফুন্টসোলিং না থেকে চলে যান পারো অথবা থিম্পুতে। ওইখানেই বাসস্ট্যান্ড। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শেষ বাস। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে পারো কিংবা থিম্পু যেতে পারেন, ভাড়া নিবে ২৫০ রুপী, সময় লাগবে ৬ ঘণ্টা। তবে হাতে সময় থাকলে একদিন থেকে ছোট্ট শহর ফুন্টসোলিং ঘুরে দেখতে ভুলবেন না। সুন্দর সাজানো গোছানো শহরের পাশ দিয়ে রয়েছে চলেছে নদী। কম খরচে পারো অথবা থিম্পু যেতে চাইলে বাসই ভরসা। সেক্ষেত্রে আগের দিন টিকিট করে রাখুন। ট্যাক্সি নিয়েও চলে যেতে পারেন। পারোতে থাকার খুব ভালো ব্যবস্থা রয়েছে।

পারোতে গেলে টাইগার্স নেস্ট ও পারো জং দেখতে ভুলবেন না। পারো এয়ারপোর্টও মুগ্ধ করবে আপনাকে। পারো খুবই শান্ত ও আরামদায়ক একটি শহর। পারো থেকে থিম্পু যেতে দুই ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। বুদ্ধ পয়েন্ট, থিম্পু মনেস্ট্রি, রাজার বাড়িসহ বেশকিছু দৃষ্টিনন্দন জায়গা রয়েছে এখানে। থিম্পু ঘুরে দেখতে একদিনই যথেষ্ট। ডিসেম্বরের দিকে ভুটান ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকলে চেলালা পাস ও দোচালা পাস ঘুরে আসতে ভুলবেন না। ভাগ্য সহায় থাকলে এখানে পেয়ে যাবেন বরফ। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত বরফ পড়ে এখানে। ফেরার সময় মনে রাখবেন বুড়িমারি থেকে মূলত বাস ছাড়ে সন্ধ্যায়। তাই ফুন্টসোলিং থেকে অবশ্যই ১২ টার মধ্যে বের হবার চেষ্টা করবেন। বের হবার সময় ঠিক আগের মতই সব ইমিগ্রেশন পয়েন্ট থেকে আপনার পাসপোর্টে এক্সিট সিল মারতে মারতে আসবেন একদম বুড়িমারি পর্যন্ত। ভারতীয় ইমিগ্রেশন পয়েন্ট থেকে জয়গাঁও বাসস্ট্যান্ড টেম্পোতে যেতে ১০ রুপি আর সময় লাগবে ১৫ মিনিট। . জয়গাঁও থেকে ময়নাগুড়ি বাসট্যান্ড বা ৫০-৬৫ রুপি সময় লাগবে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা।

ময়নাগুড়ি থেকে চ্যাংড়াবান্ধা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত বাসভাড়া পড়বে ১৫-২০ রুপি, সময় লাগবে ৩০ মিনিট। . চ্যাংড়াবান্ধা বাসস্ট্যান্ড থেকে চ্যাংড়াবান্ধা জিরো পয়েন্ট ভ্যানে ১০ রুপি এবং সময় লাগবে ১০ মিনিট।

যে বিষয়গুলো জেনে রাখবেন :

১. ভুটানের সড়ক পথের সৌন্দর্য অসাধারণ। তাই ফুন্টসোলিং থেকে পারো অথবা থিম্পু যেতে চাইলে দিনের আলো থাকতে থাকতেই চলে যান।

২. চ্যাংড়াবান্ধা বর্ডারে টাকা থেকে রুপি করে নিতে পারবেন। সঙ্গে ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি ও পাসপোর্টের ফটোকপি রাখবেন।

৩. ট্রানজিট ভিসার ক্ষেত্রে আসা যাওয়ার সময় ভারতে প্রতিবার সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অবস্থান করতে পারবেন। আর এ সুযোগে আপনি চাইলেই জলপাইগুড়ি কিংবা দার্জিলিং হয়ে একদিন কিংবা ২ দিন ঘুরে আসতে পারবেন।

৪. হোটেলের জন্য প্রতিদিন বাজেট ১ থেকে দেড় হাজার রুপি।

৫. খাওয়া প্রতি বেলা ১০০ থেকে ২০০ রুপি। যদিও খাওয়া নিয়ে অনেকেরই একটু কষ্ট হতে পারে। ভাত, সবজি, মুরগী আর লাল রুটি ছাড়া সবই ভুটানি খাবার।

৬. ভুটানের টাকার নাম নুলট্রাম। তবে সেখানে সব জায়গাতেই ভারতীয় রুপি চলে। তবে আসার আগে কোনো নুলট্রাম থাকলে চেষ্টা করবেন অবশ্যই তা সেখানেই শেষ করে আসতে। কারণ, এই নুলট্রাম আবার ভারতের বর্ডার এলাকা ছাড়া কোথাও চলে না।

৭. ভুটানে কোথাও সিগারেট খেতে পারবেন না। সেইসাথে যত্রতত্র থু থু ফেলা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন। রাস্তা পার হতে জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করুন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

Like Us On Facebook

Facebook Pagelike Widget
© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com
%d bloggers like this: