‘নীল’কে বলা হয় বিষাদের রঙ। মন খারাপ কিংবা বিষন্নতার রঙ। মনোবিজ্ঞানীদের মতে নীল অবসাদের রঙ হলেও, প্রকৃতি কিন্তু বলে অন্য কথা। প্রকৃতিকে সবচেয়ে সুন্দর ও মনোরম করতে নীল রঙের জুড়ি নেই। যেখানে নীল সেখানেই প্রকৃতির অপূর্ব মায়া হাতছানি দেয়। যে রঙ বিষন্নতার বাহক, সে রঙ কিন্তু বিষন্নতা দূর করার কারণও হতে পারে। নীল আকাশের কাছাকাছি চলে গেলে আপনার মন ভালো হতে বাধ্য। কিন্তু আকশের এতো কাছাকাছি কিভাবে যাবেন সেটা নিয়েই ভাবছেন তো? তাহলে আজকের কনটেন্টটি আপনার জন্যই। নীল আকাশ কিংবা সাদা মেঘ এর সবকটিই খুঁজে পাবেন বাংলাদেশের অত্যন্ত সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর একটি স্থান নীলাচলে। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং দূর সমুদ্রের হাতছানি থেকে শুরু করে গাছপালা ও পাখ-পাখালির কিচিরমিচির সবই আছে নীলাচলে। তাহলে চলুন জেনে নিই প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ঘেরা নীলাচল সম্পর্কে।
নীলাচল বান্দরবন জেলায় অবস্থিত একটি পর্যটন কেন্দ্র। এটি বান্দরবন শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সেখানকার জেলা প্রশাসনের আওতায় বানানো হয়েছে এই নীলাচল। নীলাচল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই হাজার ফুট উচ্চতায় টাইগারপাড়া নামক স্থানে অবস্থিত। ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে এই প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ উচ্চতায় অবস্থিত বলে নীলাচল থেকে সমগ্র বান্দরবন ও দূরের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেখা যায়। এই পর্যটন কেন্দ্রটি এতোটাই উচ্চতায় অবস্থিত যে নিচের পাহাড়গুলোকে এর সামনে বেশ ছোট মনে হয়। পাহাড়ে ট্রেকিং করতে কিংবা বনের গভীরে যেতে যাদের অসুবিধা হয়। নীলাচল তাদের জন্যই। আকাশের বিশালতাকেও হার মানায় এর সৌন্দর্য। নীলাচলে পর্যটকদের সুবিধার্থে অনেকগুলো ছোট-বড় বিশ্রামাগার রয়েছে। এবং বাচ্চাদের খেলাধুলার জন্য আকর্ষনীয় ব্যবস্থাও রয়েছে।
নামের সাথে মিল রেখে এখানকার প্রত্যেকটি বিশ্রামাগারের রঙও নীল করা হয়েছে। বর্ষাকালে নীলাচলের সৌন্দর্য দেখার মতো। বর্ষার সকালে ভেজা প্রকৃতির মায়া আপনাকে বিমোহিত করবে। দূরের ঘন সতেজ অরণ্য, আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা আর দূরের সমুদ্র সৈকতের গর্জন সব মিলিয়ে প্রকৃতির এক অপরূপ রুপ আপনার সামনে ভেসে উঠবে। শরৎ ও হেমন্ততে নীলাচলে দেখা যায় মেঘের ভেলকি। সাদা তুলোর মতো বুনো মেঘের দল ছোটাছুটি করে সর্বত্র। তখন মেঘের পিছুপিছু ছুটে যেতে বাধ্য হবেন আপনি। এরপর পরই আসে শীতের সৌন্দর্য। শীতকালে নীলাচল নববধূর রুপ ধারণ করে। কুয়াশা ঘেরা ও শিশিরভেজা পাহাড় কিংবা হালকা মেঘে ঘেরা সমুদ্র সবই যেন একটি মোহ। যে মোহ কখনোই ভাঙ্গে না। সূর্যোদয় থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বিভিন্ন রঙের ঘনঘটা নীলাচলকে করে তোলে আরো রঙ্গিন। মোটামুটি সব সিজনেই ঘুরে ভালো লাগবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই নীলাচলে।
বাসের মাধ্যমেই সরাসরি ঢাকা থেকে বান্দরবন যাওয়া যায়। এসি ননএসি দুইধরনের বাস আছে। এসি বাসে সচরাচর ভাড়া একটু বেশী লাগে। ননএসি বাসে গেলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে যাওয়া যায়। বিভিন্ন বাসের মধ্যে সৌদিয়া, এস আলম, শ্যামলি, ইউনিক ইত্যাদি বাস বেশ ভালো ও উন্নত মানের। ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম হয়েও বান্দরবন পৌঁছা যায়। সেক্ষেত্রে সেন্টমার্টিন পরিবহণ বাসে করে যাওয়া যায় চট্রগ্রাম পর্যন্ত। তারপর সেখানকার বদ্দারহাট নামক একটি স্থান থেকে পূবালী অথবা পূর্বানী যেকোন একটি বাস দিয়ে সরাসরি বান্দরবন যাওয়া যায় খুব সহজেই।
বাস ছাড়াও ট্রেন কিংবা এয়ারেও ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবন যাওয়া যায়। ট্রেনের ক্ষেত্রে সময় কিছুটা বেশী লাগবে। বান্দরবন থেকে নীলাচল যেতে জীপ গাড়ী, অটো রিকশা অথবা সিএনজির ব্যবস্থা আছে। যেকোন একটি দিয়ে সহজেই নীলাচল পৌঁছানো যাবে। তাছাড়া বান্দরবনের বিখ্যাত চাঁন্দের গাড়ি নামক জীপ গাড়ি দিয়েও নীলাচল যাওয়া যায়। চাঁন্দের গাড়িতে খুব সহজেই ১০-১৫ জন বসতে পারবে। তাই বেশী লোকজন নিয়ে গেলে একটা চাঁন্দের গাড়ি ভাড়া করলেই হবে। নীলাচলে কতক্ষণ থাকবেন সেসময়ের উপর নির্ভর করে গাড়ি ঠিক করতে হবে। জীপ গাড়ির ভাড়া কিছুটা কম পড়বে চাঁন্দের গাড়ির তুলনায়। মনে রাখবেন যে গড়ি দিয়েই যান না কেনো দর কষাকষি করলে ভাড়া কিছুটা কম করা যায়।
নীলাচলে অসংখ্য রিসোর্ট, হোটেল ও মোটেল রয়েছে। বিভিন্ন রিসোর্টে রয়েছে কটেজ। এই কটেজগুলো বেশ আকর্ষনীয় এবং রাত্রিযাপনের জন্যও বেশ ভালো। কটেজগুলোতে সাধারণত দুই থেকে তিনটি করে কামরা থাকে। এবং প্রতিটি কামরার ভাড়া পড়বে ২৫০০-৩০০০ পর্যন্ত। আরো কমে থাকতে চাইলে সেখানেই রয়েছে উন্নতমানের কিছু হোটেল। সেখানকার ভাড়া কিছুটা কম পড়বে। তবে সময়ভেদে নীলাচলের হোটেল ও মোটেলগুলোর ভাড়ার পরিবর্তন হয়। তাই যাওয়ার আগে বুকিং দিয়ে যাওয়াই ভালো।
নীলাচলে কিছুকিছু হোটেল কিংবা রিসোর্টে খাবারের ব্যবস্থা থাকে। তবে নীলাচলে তেমন ভালো খাবারের হোটেল নেই। তাই বান্দরবন শহর থেকে খাবার নিয়ে নেয়া ভালো। বান্দরবন শহরের অদূরেই বেশ উন্নতমানের খাবারের হোটেল রয়েছে। সেখানে বাঙ্গালী খাবারের পাশাপাশি স্থানীয়দের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোও খুব সহজেই পাওয়া যায়।
নীলাচল নীলের মায়ায় ঘেরা বাংলাদেশের অন্যতম একটি স্থান। স্বচ্ছ নীল আকাশের বিশালতার ছোঁয়া পেতে আজই প্ল্যান করে ফেলুন নীলাচল ট্যুর নিয়ে আর ঘুরে আসুন মন্ত্রমুগ্ধকর একটি স্থান থেকে।