ঘুরে আসুন দার্জিলিং

ভারতে করোনার কারণে সবচেয়ে ধাক্কা খেয়েছে পর্যটনশিল্প। ঘরবন্দি মানুষ হাঁপিয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় কিছুটা হলেও ভ্রমণের ক্ষেত্রে আশার কথা শোনাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং। আসন্ন দুর্গাপূজার আগেই ছন্দে ফিরতে চলেছে পাহাড়। যতদূর জানা গেছে, চলতি সেপ্টেম্বরেই সম্ভবত খুলে যাচ্ছে পাহাড়ের দরজা। স্বাভাবিকভাবেই দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড়ে জমজমাট হয়ে উঠবে পাহাড়। মন টানলে আপনিও লকডাউনের বদ্ধ জীবন কাটিয়ে একটু মুক্ত শ্বাস নিতে চলে যেতে পারেন পাহাড়ে। আপনাকে টানবে দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং ও  মিরিখ।

দার্জিলিংয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু রেলওয়ে স্টেশন। এখানে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০ হাজার ফুট উঁচু চূড়া থেকে দেখা যায় অপূর্ব সূর্যোদয়। এখানে ভোরবেলা আট হাজার ৩০০ ফুট উঁচু টাইগার হিল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা পাহাড়চূড়ায় সূর্যোদয়ের অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। এখানে রয়েছে ঘুম মোনাস্ট্রি। রয়েছে সুন্দর স্মৃতিসৌধ বাতাসিয়া লুপ। রয়েছে দার্জিলিং চিড়িয়াখানা। রয়েছে পাহাড় অভিযান শিক্ষাকেন্দ্র হিমালিয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট। এখানে এসে কেবল কারে ১৬ কিলোমিটার দূরত্বের এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে ভ্রমণ করতে পারেন। চা পানের অপূর্ব অভিজ্ঞতা পাবেন এখানকার হ্যাপি ভ্যালি টি গার্ডেনে। রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত শরণার্থী কেন্দ্র তিব্বতিয়ান সেলফ হেল্প সেন্টার। রয়েছে দার্জিলিং মিউজিয়াম। দেখতে পাবেন বৌদ্ধবিহার জাপানিজ টেম্পল। রয়েছে পাথর কেটে তৈরি রক গার্ডেন ও গঙ্গামায়া পার্ক। রয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা পানির ঝর্ণাধারা ভিক্টোরিয়া ফলস। এ ছাড়া রয়েছে পাহাড়ের নয়নাভিরাম দৃশ্য। চাপতে পারবেন টয় ট্রেনে।

কীভাবে যাবেন

পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া বা শিয়ালদহ স্টেশন থেকে ট্রেনে করে যেতে হবে নিউ জলপাইগুড়ি। শিয়ালদহ থেকে ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা বেজে ১৫ মিনিট নাগাদ ছেড়ে যায় দার্জিলিং মেইল। পরদিন সকাল ১০টায় পৌঁছে যাবেন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে। আকাশপথে গেলে নামতে হবে বাগডোগরা বিমানবন্দরে। ঢাকা থেকে সরাসরি শ্যামলী পরিবহনে চেপে বুড়িমারী স্থলবন্দর হয়েও যাওয়া যায়। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে রিকশায় শিলিগুড়ি জিপ স্টেশন। সেখান থেকে টানা সুমো বা কমান্ডার জিপ ভাড়া নিয়ে আড়াই ঘণ্টার পথ দার্জিলিং। এ ছাড়া কলকাতার ধর্মতলা থেকে বাসে করে যাওয়া যায় শিলিগুড়ি। সেখান থেকে প্রাইভেটে ট্যাক্সি ভাড়া করে বা শেয়ার ট্যাক্সি নিয়ে যেতে পারেন দার্জিলিং।

কোথায় থাকবেন

দার্জিলিং ভ্রমণের আগে ওয়েবসাইট থেকে হোটেল বুকিং করে নিতে পারেন। হোটেল আগে থেকে বুকিং করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। তবে হোটেল বুকিংয়ের আগে জেনে নিন গরম পানি এবং হিটারের ব্যবস্থা আছে কিনা। হোটেল বুকিংয়ের ক্ষেত্রে দালাল এড়িয়ে চলাই বাঞ্ছনীয়।

খাবার-দাবার

দার্জিলিংয়ে অধিকাংশ খাবারের হোটেলে বাঙালি খাবারের ব্যবস্থা থাকে। ভাত, মাছ, মাংস, রুটি, সবজি পেতে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না।

কোথায় কেনাকাটা করবেন

দার্জিলিং শহরের লাডেন লা রোডের মার্কেটে আপনার সাধ্যের মধ্যে পেয়ে যাবেন শীতের পোশাক। সোয়েটার, মাফলার, লেদার জ্যাকেট, নেপালি শাল, শাড়ি, গিফট আইটেম, কার্ডিগান, সানগ্লাস কিনে নিতে পারেন। প্রতারণার ভয় নেই। তবে ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে কিছু না কেনাই ভালো।

দার্জিলিং ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

দার্জিলিং ভ্রমণের জন্য শীতের শুরু বা শীতের শেষ দিক বেছে নেওয়াই ভালো। ভরা বর্ষা মৌসুমে দার্জিলিং ভ্রমণে না যাওয়াই ভালো। কারণ, দার্জিলিংয়ে পাহাড়ি ধস নামে বর্ষায়। শীত বা গরমে সে ঝুঁকি থাকে না। ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে অবশ্যই সঙ্গে নিন গরম কাপড়। দার্জিলিং ভ্রমণের ক্ষেত্রে হোটেল কর্তৃপক্ষের পরামর্শ মেনে চলা বাঞ্ছনীয়।

দার্জিলিং ভ্রমণে খরচ কত

বাংলাদেশ থেকে দার্জিলিং ভ্রমণে এলে ভারতীয় মুদ্রায় জনপ্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার রুপির মতো খরচ হবে। তবে সরাসরি ঢাকা থেকে বাসে চেপে দার্জিলিং এলে সে খরচটা হাজার পনেরোর মধ্যে হয়ে যেতে পারে। কলকাতা হয়ে দার্জিলিং যেতে গেলে খরচ কিছুটা বেশি। সে ক্ষেত্রে দার্জিলিং যাওয়ার পথে কলকাতা দর্শনের সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: