ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ করে চট্টগ্রামের মেয়ে তাসফিয়া আজিমের আয় এখন মাসে হাজার ডলার, অর্থাৎ প্রায় ৮৬ হাজার টাকা। বাংলাদেশে বসেই তিনি মানবসম্পদ নির্বাহী হিসেবে কাজ করেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ডিজিটাল বিপণন প্রতিষ্ঠান ভাইপার মিডিয়ায়। ২০১৮ সাল থেকে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আছেন। এসইওর (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) কাজও করেন তিনি।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আরেকটি প্রতিষ্ঠান রব শো আউটডোর লাইটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত আছেন। এই প্রতিষ্ঠানে তিনি ভার্চ্যুয়াল সহকারী।করোনাভাইরাসের প্রকোপের এই সময়েও তাসফিয়ার কাটছে ব্যস্ত সময়। গ্রাহক বেড়েছে। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান এখন ডিজিটাল বিপণনে ঝুঁকছে। তাসফিয়া বলেন, ‘করোনা মহামারির শুরুর দিকে ফেব্রুয়ারি মাসে কাজ একটু কমে যায়। কিন্তু পরের মাস থেকে বাড়তে থাকে।
গত মে মাসে তো টানা ৩০ দিনই কাজ করতে হয়েছে। আয়ও হয়েছে হাজার ডলারের ওপরে।’ তাঁদের প্রতিষ্ঠানটি ডিজিটাল বিপণন ও এসইও সম্পর্কিত সব ধরনের কাজ করে। এখন কাজ করানোর জন্য লোক খুঁজতেই বেশি সময় পার হয় তাসফিয়ার। মূলত ডিজিটাল মার্কেটারদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর কাজ দেখেন। পরখ করে সিদ্ধান্ত দেন প্রতিষ্ঠানকে। তাঁর সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বাংলাদেশ থেকে নিয়োগ হয়।
তাসফিয়া বর্তমানে আরলি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে স্নাতকোত্তর করছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর আগে চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে স্নাতক করেছেন। এ ছাড়া ইংরেজির প্রশিক্ষক হিসেবে আছেন ভাষা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্পিকার্স কাউন্সিলে।
২০১৩ সালে যখন এইচএসসি শেষ হলো, তখনই ফটোশপের কাজ রপ্ত করেছিলেন। পান ফ্রিল্যান্সার ডটকমের হদিস। অ্যাকাউন্ট খোলার পর বুঝলেন, এটি একেবারে পেশাদারদের জায়গা। এরপর আসেন আপওয়ার্কে। সেখানে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারের পর সপ্তাহখানেকের মধ্যে কাজ জুটে যায়। প্রথম কাজটি ছিল ছবি সম্পাদনা করার।
একটি ওয়েবসাইটের জন্য বেশ কিছু ছবি সম্পাদনা করে পান ১৫ ডলার। এটিই ছিল প্রথম আয়। তাসফিয়া বলেন, ‘আমার সম্পাদনা করা ছবি যখন ওয়েবসাইটে দেখলাম, ভীষণ আনন্দ হয়েছিল। বলা যায় এটাই আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। শুরুর দিকে আয় ছিল মাসে ১৫ হাজার টাকার মতো। পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করেছি নিয়মিত। আমি টাকার চেয়ে কাজ শেখার দিকে নজর দিয়েছি বেশি।’
এরপর তাসফিয়ার কাজ বাড়তে থাকে। বাড়িয়েছেন নিজের কাজের ক্ষেত্রও। ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করেছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর প্রশিক্ষক গুগল ও ইউটিউব। এখন তাঁর বিচরণ ছবি সম্পাদনা, লেখালেখি, ধারা বর্ণনা (ভয়েস ওভার), অনুবাদ, লোগো ব্যানার তৈরি, এসইও, ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েবসাইট তৈরি, অ্যাপ ডিজাইনসহ নানা ক্ষেত্রে। আপওয়ার্কে একসময় প্রচুর কাজ করেছেন।
এখন অবশ্য নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করেন বলে আপওয়ার্কে সময় দেওয়া হয় না। তাসফিয়ার বিশ্বাস, কাজ জানলে সামনে যত বিপত্তিই আসুক, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। একটা না একটা পথ হয়েই যাবে।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো