গ্রিসে কর্মী সংকটের শূন্যতা পূরণ করতে বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের ৩০ হাজার অনিয়মিত অভিবাসীকে নিয়মিতকরণের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। গত মঙ্গলবার গ্রিক পার্লামেন্ট এ সংক্রান্ত একটি নতুন আইন অনুমোদন করেছে।
দেশটির আশ্রয় ও অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের যৌথ প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, এসব অভিবাসীকে গ্রিসে তিন বছরের আবাসিক পারমিট এবং কাজ করার অধিকার দেবে।
কর্মী সংকটের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সমস্যায় পড়েছে গ্রিসের বেশ কিছু খাত। বিশেষ করে বিপুল সংখ্যক আলবেনীয় নাগরিক পশ্চিম ইউরোপের নানা দেশে চলে যাওয়ায় অচল অবস্থায় পড়েছে গ্রিক কোম্পানিগুলো। পাশাপাশি অঘোষিত বা চুক্তি ছাড়া চাকরির সুযোগ বন্ধ করতে এবং জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউরোপীয় নয় বা তৃতীয় দেশের নাগরিকদের জন্য নতুন ধরনের রেসিডেন্স পারমিটের ঘোষণা দিয়েছে এথেন্স। ফলে যে সকল অনিয়মিত অভিবাসী দীর্ঘদিন ধরে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই দেশটিতে বসবাস করছেন এবং চুক্তি ছাড়া চাকরিতে যুক্ত আছেন, তারা নিবন্ধিত হয়ে বৈধ কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারবেন।
গ্রিক সরকারের নিয়মিতকরণের নতুন সিদ্ধান্তে কারা কারা বৈধতা পাবেন, সেটি নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর বা এর আগে নিরবচ্ছিন্নভাবে কমপক্ষে তিন বছর ধরে গ্রিসে বসবাস করেছেন এমন প্রমাণ লাগবে। এ ছাড়াও নিয়োগকর্তার পত্র প্রয়োজন হবে, যেখানে কর্মী বৈধতার পর কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন, এমন চাকরি প্রস্তাবের চুক্তিপত্র দিতে হবে আবেদনে। বৈধতার জন্য আবেদনকারী অভিবাসী যদি কোনো ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হন, তবে তিনি বৈধতার আওতায় আসবেন না।
নতুন এই আইনের আওতায় একজন ব্যক্তিকে তিন বছর মেয়াদি রেসিডেন্স পারমিট দেওয়া হবে। আবেদনকারীর স্ত্রী/স্বামী ও সন্তানরা ৩০ নভেম্বরের আগে গ্রিসে উপস্থিত থাকলে তাদেরও বৈধতা প্রদান করা হবে। কিন্তু নতুন করে দেশ থেকে পরিবারের কোনো সদস্যকে নেওয়ার সুযোগ পাবেন না।
তবে নিয়মিতকরণের পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অবশ্যই চাকরি চালিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় কার্ড বাতিলের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নতুন এই নিয়মের আওতায় নিয়মিত হতে আবেদন করতে পারবেন শর্তপূরণকারী অনিয়মিত অভিবাসীরা। এ ছাড়া কোনো প্রকার সামাজিক ভাতাও পাবেন না, এই কোটায় বৈধ হওয়া অভিবাসীরা। এমনকি স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করারও সুযোগ পাবেন না।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সাল থেকে কমপক্ষে সাত বছর ধরে গ্রিসে অবস্থানরত অভিবাসীরা নানা শর্ত পূরণ করে নিয়মিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে গ্রিসে প্রায় এক লাখ ৪৯ হাজার অভিবাসীর রেসিডেন্স পারমিট পুনরায় নবায়নের অপেক্ষায় আছে। এসব প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে পর্যাপ্ত কর্মী নেই মন্ত্রণালয় ও অভিবাসন দপ্তরগুলোতে। সর্বশেষ বাংলাদেশের সাথে গ্রিসের সমঝোতার মাধ্যমে ৫ বছরের জন্য বৈধতার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই প্রক্রিয়া এখনো চলমান রয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশেষ সমঝোতা চুক্তির আওতায় বৈধ হতে নিবন্ধিত হতে পারবেন বাংলাদেশিরা। এথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাসে এ পর্যন্ত ১০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি নিবন্ধন করেছেন। অনেকেই বৈধ হয়ে দেশে এসেছেন।
গ্রিক পার্লামেন্ট অনুমোদিত নতুন এই আইন বাস্তবায়ন হলে যেসব অনিয়মিত বাংলাদেশি ৫ বছরের বৈধতার আওতায় আসেননি, তারাও নতুন আইনে বৈধতার জন্য আবেদন করতে পারবেন।