গ্রিনল্যান্ড

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দ্বীপদেশ সম্পর্কে অবাক করা কিছু তথ্য

বন্ধুরা আশা করি, সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন। আজকে আমরা জানবো বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বীপদেশ সম্পর্কে।

আটলান্টিক মহাসাগর ও উত্তর মহাসাগরের মাঝে অবস্থিত এই দ্বীপটি ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চল। তবে গ্রিনল্যান্ড ভৌগোলিকভাবে আমেরিকা মহাদেশের অংশ হলেও রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে দ্বীপটি ইউরোপের অংশ। গ্রিনল্যান্ডের ৮০ ভাগ অঞ্চল বরফ এবং হিমবাহ দ্বারা আবৃত। তারপরেও দেশটির নামের মর্যাদা রাখার জন্যই হয়তোবা কিছু কিছু অঞ্চলে সবুজের দেখা মেলে।

তাহলে বন্ধুরা চলুন, বরফের দেশ গ্রিনল্যান্ড সম্পর্কে আরো কিছু জানা-অজানা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

১। দেশটির আদি বাসিন্দারা হলো ইনুইট এস্কিমোস, যারা কানাডা থেকে এই দেশটিতে পাড়ি জমিয়েছিল। প্রথমে দেশটি নরওয়ে এবং আইসল্যান্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলেও এটি বর্তমানে ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চল। এমনকি দেশটি ১৯৭৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নেও যোগদান করে, পরে অবশ্য তারা ইউনিয়ন ত্যাগ করে।

২। ২০১৮ সালের এক হিসাব অনুযায়ী ২১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে মোট জনসংখ্যা মাত্র ৫৬ হাজার। আসলে এটিই পৃথিবীর সর্ববৃহৎ দ্বীপ। বিশাল আয়তনের এই দ্বীপটিতে শুধুমাত্র জনসংখ্যা কম থাকার কারণে এটিকে মহাদেশ হিসেবে গণ্য করা হয়না।

৩। দেশটির প্রধান ধর্ম হচ্ছে খ্রিস্টধর্ম।

৪। গ্রিনল্যান্ডের সরকারী ভাষা গ্রিনল্যান্ডিক।

৫। দেশটির রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর হচ্ছে নিউক। এই শহরটিই গ্রিনল্যান্ডের বৃহত্তম সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র। শহরটিতে প্রায় ১৮ হাজার মানুষের বাস।

৬। দেশটিতে গ্রীষ্মে গড় তাপমাত্রা থাকে ৭ ডিগ্রি সেসিয়াস এর আশেপাশে এবং শীতকালে তাপমাত্রা গিয়ে দ্বারায় -৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

৭। অ্যান্টার্কটিকার পরই গ্রিনল্যান্ডেই পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম বরফের স্তর রয়েছে। মেরু অঞ্চলের বাইরে সর্ববৃহৎ কিছু হিমবাহ এই দ্বীপদেশেই অবস্থিত।

৮। দেশটির সবগুলো শহরকে একত্রে যুক্ত করার মত কোনো নিরবচ্ছিন্ন সড়ক পথ নেই।

৯। যদিও দেশটির অধিকাংশই বরফে আচ্ছাদিত, তবুও এর অনেক জায়গায় (বিশেষত দক্ষিণে), অনেক সবুজ অঞ্চল আছে। ঐ অঞ্চলগুলোতেই কৃষি জমিও আছে।

১১। পুরো গ্রিনল্যান্ডে মোট গাড়ীর সংখ্যা ৩০০০ হাজারেরও কম। বেশিরভাগ যাতায়াত বা পণ্য পরিবহণ জাহাজ দ্বারা সম্পন্ন হয়।

১২। যেসব বিজ্ঞানীরা বরফ নিয়ে গবেষণা করেন, তারা বিশ্বাস করেন যে, বিগত ১ লক্ষ বছরে গ্রিনল্যান্ডের তাপমাত্রার গঠন অনেক অনেকবার পরিবর্তন হয়েছে।

১৩। ১৯৪৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে গ্রিনল্যান্ড কেনার অফার দিয়েছিল, কিন্তু ডেনমার্ক দ্বীপটি বিক্রি করতে রাজি হয়নি।

১৪। গ্রিনল্যান্ডে প্রায় ২২৫ ভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। একয়সাথে দেশটির প্রধান রপ্তানিযোগ্য পণ্যও হচ্ছে এই মাছ।

১৫। দেশটিতে গ্রীষ্মে কখনোয় সূর্য অস্ত যায়না।

১৬। শিতকালে দেশটিতে আপনি অসম্ভব সুন্দর নরদান লাইটস অর্থাৎ অরোরা বরিয়ালিস এর দেখা পাবেন।

১৭। গ্রিনল্যান্ডের মানুষেরা সাধারণত সামুদ্রিক মাছ এবং শিকার করা পাখি খেয়ে থাকেন।

১৮। গ্রিনল্যান্ডের জাতীয় খাবার হচ্ছে সুয়াসাত। এটি অনেক রকমের সামুদ্রিক মাছ, আলু এবং পেঁয়াজ সহযোগে রান্না করা একধরণের সূপ।

১৯। স্যামন মাছের মতো দেখতে ক্যপেলিন মাছ দেশটিতে সবচেয়ে জনপ্রিয়।

২০। এই দেশে আরো একটি জনপ্রিয় খাবার হচ্ছে হরিণের লিভার। যা সরাসরি, কোনরকম রান্না করা ছাড়াই খাওয়া হয়।

২১। অত্যন্ত কম জনসংখ্যার এই দেশটিতেই আত্মহত্যা করার হার সবচেয়ে বেশি। শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এটাই সত্যি।

২২। গ্রিনল্যান্ডেই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ন্যাশনাল পার্ক অবস্থিত। এটি প্রায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিসৃত।

২৩।  গ্রিনল্যান্ডের মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস মৎস্য শিকার, তিমি শিকার ও মুদ্রাঙ্কন ইত্যাদি।

২৪। গ্রিনল্যান্ডের সরকারী মুদ্রা হচ্ছে ড্যানিশ ক্রোনা।

২৫। এবং ডায়ালিং কোড হচ্ছে +২৯৯।

তো সব মিলিয়ে এই হচ্ছে গ্রিনল্যান্ড। আসলে দেশটির নাম গ্রিনল্যান্ড হলেও দেশটিতে সবুজের দেখা মেলা ভারি দুষ্কর। তবে সবুজ না থাকলেও দেশটিতে অসম্ভব কিছু সুন্দর জায়গা রয়েছে, যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: