শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৪২ অপরাহ্ন
Uncategorized

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠা পুলির স্বাদ নিতে পিঠা উৎসব

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। ষড় ঋতুর এই দেশ বাংলাদেশ। প্রতিটি ঋতু স্ব-মহিমায় আমাদের বাঙ্গালি সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে আছে ওতপ্রোত ভাবে। পিঠা-পায়েস-পুলি-নাড়ুর কথা উঠলেই শীত ঋতু আমাদের সামনে এসে পড়ে। যার প্রভাব বাঙ্গালি সমাজ ও জাতীয় জীবনে অনস্বীকার্য। নগর জীবনের প্রভাবে আজ আমরা ভুলতে বসেছি গ্রামীণ ঐতিহ্য পিঠা, পায়েস, পুলির কথা। আর আমাদের এই অতীত ঐতিহ্য কে স্মরণ করিয়ে দিতে এখন নগরীতে আয়োজন করা হয় পিঠা উৎসবের। প্রতি শীতে শুরু হয় ঘরে ঘরে পিঠা পুলির উৎসব। পাশ্চাত্যের সংস্কৃতিতে নতুন প্রজন্ম যখন গা ভাসিয়ে দিচ্ছে, নিজস্ব সংস্কৃতি আর কৃষ্টিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। লোপ পাচ্ছে মানবিকতা। আর পাশ্চাত্যের সংস্কৃতিতে বের হয়ে সিলেটের অন্যতম সংগঠন শ্রুতি সিলেট প্রতি বছর আয়োজন করে পিঠা উৎসবের। একযুগ ধরে আয়োজিত হচ্ছে এই আয়োজন। প্রতি বছর নতুন শতকের আগমনের মাসে সিলেটে আয়োজিত হয় এই পিঠা উৎসবের। বলছিলেন আমার সহকর্মী মুসা ভাই তাই আমরা ছক করে ফেলি এই বছর আমাদের যেতে হবে। প্রতি বছরের মত সূর্যোদয়ের পর পর শুরু হয় এই আয়োজনের।

একদিকে চলে পিঠা মেলা আর অন্যদিকে চলে সাংস্কৃতিক আয়োজন। যদিও আমি খুব অলস প্রকৃতির মানুষ এরপরেও নতুন চালের পিঠার স্বাদ নেয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে প্রস্তুত হয়ে নিলাম।বারে শনিবার তাই অফিস বন্ধ, মুয়া ভাইয়ের ফোন দাদা তৈরি হয়েছেন তো? আমি বললাম, আমিতো সেই কখন থেকে তৈরি হয়ে বসে আছি। ঘড়ির কাঁটাতে তখন ছয়টা, সূর্যদেব সবে মাত্র আঁখি মেলে তাকিয়েছেন। আমরা বেরিয়ে পড়লাম পিঠা উৎসবের পানে। ভোরের হিমেল হাওয়ায় হাত পা বরফ হবার জোগাড়, তার মাঝেই আমরা এগিয়ে চলছি। স্বল্প সময়ের মাঝেই আমরা এসে পৌঁছলাম পিঠা উৎসবের প্রাঙ্গণে।ভৈরবী সুরে সপ্তসুরে আহ্বানের চলছে শ্রুতি পিঠা উৎসবের প্রথম পর্বের আয়োজন। কোন কোলাহল নেই মঞ্চে চলছে সপ্তসুরের আহ্বান।

পিঠা উৎসব
পিঠা উৎসবের পাশাপাশি ছিলো বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক আয়োজন। ছবি : সুমন্ত গুপ্ত

অসাধারণ পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। দেখতে পেলাম সেই সাত সকালেই মানুষের আনাগোনা পিঠার স্টলে। আমি আর মুসা ভাই বসে পড়লাম গান শুনতে। সিলেটের বন্ধুরা একের পর এক গান শুনিয়ে যাচ্ছেন শ্রোতাদের। দেখা পেলাম গুণীজন, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, আবৃত্তির কিংবদন্তী শিমুল মুস্তফা, বেলায়েত হোসেনের। ঢাকা থেকে ওনারাও এসেছেন অনুষ্ঠান দেখতে। প্রায় একঘণ্টা হতে চললো, আমরা একের পর এক গান উপভোগ করছি কিন্তু গান শুনে তো আর পেট ভরছে না, পেটে এবার দানা পানি কিছু দেবার প্রয়োজন। দেখলাম মঞ্চের পাশে সবাই লাইন ধরে দাঁড়িয়ে পিঠা খাচ্ছে আয়োজকদের পক্ষ থেকে সবাইকে বিনামূল্যে পিঠা খাওয়ানো হচ্ছে।

আমি, মুসা ভাই গিয়ে সেই লাইনে দাঁড়ালাম। সবার জন্য গরম গরম ভাপা পিঠা পরিবেশন করা হচ্ছে। আমরা ও পেলাম ভাপা পিঠার স্বাদ। গরম গরম ভাপা পিঠা অসাধারণ স্বাদ। ভাপা পিঠার স্বাদ গ্রহণ করে আমরা আবার বসে গেলাম সাংস্কৃতিক আয়োজন উপভোগ করতে।একের পর এক চলছে পঞ্চ কবির গান এদিকে মুসা ভাই বললেন আর কত গান শুনবেন এবার চলেন পিঠার স্টল গুলো ঘুরে দেখি। আমি বললাম চলেন তাইলে ঘুরে দেখি পিঠার স্টল গুলো। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছে পিঠার স্টল নামের ও ভিন্নতা বিদ্যমান। গ্রামীণ পিঠা বাড়ি, চন্দ্রপূরী্‌ চড়ই ভাতি, মিঠাই বাড়ি, বান্ধবী পিঠা ঘর, নকশি পিঠা ঘর, সংক্রান্তি, চট্টগ্রাম পিঠা ঘর হরেক রকমের নাম। আমরা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম পিঠার স্টল গুলো। প্রতিটি স্টল থেকেই পিঠা চেখে দেখতে লাগলাম।একেক পিঠার একেক রকম স্বাদ। কোনটা মিষ্টি , কোনটা ঝাল আবার কোনটা নোনতা। পিঠার নামের ভিন্নতা ও দেখতে পেলাম ভাপা পিঠা, চুঙা পিঠা, বিরইন চালের পিঠা, মুগপুলি পিঠা,অনুতুন, কলসি পিঠা, চন্দ্র পুলি, চৈ পিঠা, মুখশালা পিঠা, শাড়ি পিঠা, হৃদয় হরণ পিঠা,পব পিঠা, পোস্ত দানা পিঠা, নকশা পিঠা, বক পিঠা, সুরেস পিঠা, দুধ পুলি,পাটি সাপটা , হরেক রকমের সন্দেশ আরো হরেক রকমের পিঠা নাম বলে শেষ করা যাবে না। সব গুলো পিঠার স্টলে পিঠা চেখে দেখতে গেলে প্রায় সারাদিনই চলে যাবে।

পিঠা উৎসবআবৃত্তিকার শিমুল মোস্তফার সাথে লেখক ও ভ্রমণ সঙ্গীরা। ছবি : সংগৃহীত

প্রতিটি স্টলে দেখতে পেলাম বেশ পরিপাটি করে পরিবেশন করা হচ্ছে। মাটির থালায় পিঠা দেয়া হচ্ছে, আবার কেউ কলাপাতায় দিচ্ছেন পিঠা। প্রতিটি স্টলে শতাধিক পিঠা প্রদর্শিত হচ্ছে। আমাদের মত সবাই এসেছেন শ্রুতি পিঠা উৎসবে হরেক রকম পিঠার স্বাদ নিতে। অনেকেই ব্যাগ ভর্তি করে পিঠা নিয়ে যাচ্ছেন বাসার জন্য। আমরাও কিছু পিঠা কিনলাম বাসায় নেবার জন্য, দাম ও বেশ সহনশীল। মুসা ভাই আবার বসে পরলেন তার প্রিয় আবৃত্তিকার শিমুল মুস্তফার আবৃত্তি শুনতে। মুসা ভাই বলছিলেন দিনব্যাপী আয়োজনে ধর্ম জাতি বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মেতে থাকেন প্রকৃতির মহোৎসবে। এমনই সময়ে প্রতিবারের মত আয়োজন করা হয় ,বাঙ্গালি সংস্কৃতির বর্ণাঢ্য আয়োজন পিঠা উৎসবের।

যেভাবে যাবেন :

পিঠা উৎসব দেখতে হলে বাস/ট্রেন করে যেতে হবে সিলেটে, ভাড়া নিবে ৩৫০ টাকা থেকে ১,২০০ টাকা। এরপর আপনাকে যেতে হবে মিরেরময়দান, পিঠা উৎসবের মাঠে। প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হয় এই পিঠা উৎসব। ২০২০ সালে ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হচ্ছে পিঠা উৎসবের মিলন মেলা।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

Like Us On Facebook

Facebook Pagelike Widget
© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com