শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৫ পূর্বাহ্ন

গোল্ডেন গেট ব্রীজ: বিশ্বের অন্যতম সুন্দর এবং বিস্ময়কর ব্রীজ

  • আপডেট সময় শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৪

গোল্ডেন ব্রীজ এবং সানফ্রানসিসকো একে অপরকে জড়িয়ে আছে। উনিশ শতকের দিকে সানফ্রানসিসকোতে সোনার বিপ্লব ঘটে এবং টাকার আশায় মানুষ ভীর জমায় শহরটিতে। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে শহর এবং শহরের লোকজন। পরে আসে অটো মোবাইলের যুগ এবং শহরটি হয়ে উঠে ধনী, চাকুরীজিবী, কর্মীদের শহর। এসব লোকদের আবার ছেড়ে যেতে হতো শহর ছেড়ে।

অপর পাশের মারিন কাঊন্টিতে যেতে সানফ্রানসিসকো বে পাড়ি দিতে হতো। তাই আবির্ভাব হলো ফেরী সার্ভিসের। এতো চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব ছিলোনা যার ফল আমাদের মাওয়া ঘাটের মত – জ্যাম। বিখ্যাত ১৮ ঘন্টার জ্যাম থাকতো ফেরীর জন্য। আবার, রাস্তা পথে যেতে দিতে হতো দিনের যাত্রা সেই সময়ে। প্রয়োজনীয়তা আসে একটা ব্রীজের কিন্তু সেই সময়ে সেটা পাগলের প্রলাপের মত ছিলো

কিন্তু থেমে থাকেনি চিন্তা। ভাবনা আসলো ৩,০০০ ফিটের একটি ঝুলন্ত ব্রীজ করার যার খরচ বলা হলো তৎকালীন ১০০ মিলিয়ন ডলার এবং তখনকার ব্রীজের প্রায় দ্বিগুণ। এর কমে করার মত কাউকে খোজা হচ্ছিলো ।  বাজেট দিলেন ২৫-৩০ মিলিয়ন ডলারের। বিংশ শতাব্দীর সেই পক্ষে তা ছিলো ব্যায়বহুল এবং অসম্ভব, যেখানে সরকার খাদ্য, চাকুরী সহ বিভিন্ন সমস্যার সাথে লড়ছিলো। তাই স্থানীয় সাধারণ জনগণের কাছে যেতে হয় এবং ইতিবাচক সাড়া পায় স্থানীয় সরকার । কিন্তু আসে বাধা, বিভিন্ন যায়গা থেকে প্রধানত সেই ফেরী মালিকদের পক্ষ থেকে, তাদের ব্যাবসা হুমকিতে দেখে বিভিন্ন ভাবে প্রকল্প কে বন্ধ করার প্রয়াস চালায়।

প্রায় ২৩০০ লসুট ফাইল হয় ব্রীজের বিরুদ্ধে ১৯৩০ সালে এবং কিছু দাবি করেন এটি প্রাকৃতিক সৌন্দ্রর্য নষ্ট করবে। কিন্তু সব বাধা পেরিয়ে অবশেষে ব্যাংক অব আমেরিকা এই প্রজেক্টে আগ্রহী হয় সামগ্রিক উন্নয়ণ এবং জনসাধারণের কথা ভেবে। শুরু হয় সপ্ন-এর ব্রীজের কাজ, যা ২৭ বছর ধরে শিরোপা ধরে রেখেছিলো এবং এখনো দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। এই ব্রীজের নির্মাণ শুরু হয়েছিল ৫ই জানুয়ারি, ১৯৩৩ এর সময়। নির্মাণ ব্যয় ৩৫ মিলিয়ন ধরা হলেও ১ মিনিয়ন কম খরচ পড়ে এবং আজকের বাজারে ৪৪০মিলিয়ন ডলারের মত প্রায়।

ব্রীজটি সানফ্রানসিসকো বে এর উপর দিয়ে সানফ্রানসিসকো এবং মারিন কাউন্টিকে যুক্ত করেছে। ব্রীজটির সম্পূর্ণ দৈর্ঘ প্রায় ১.৭ মাইল, ২,৭৩৭ মিটার এবং ৮,৯৮১ ফিট। ৯০ফিট চওড়া । সমুদ্র থেকে ২৩০ মিটার উঁচু, এবং ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত সর্বোচ্চ উঁচু টাওয়ার  ছিলো, এখনও যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ। দুটি টাওয়ার একট পানিতে অপরটি শুকনোতে এবং এদের উপর দুটি কেবলের সাহায্যে দাঁড়িয়ে আছে এই ব্রীজ।

১৯৩০ এর দিকে এরকম স্থাপনার কথা যখন মানুষ কল্পনা করত তখন ক্ষ্যাপাটে ইঞ্জিনিয়ার এবং হাজার হাজার কর্মী অসম্ভব কে সম্ভব করার প্রত্যেয়ে কাজ করতে থাকেন। চার বছরের পরিশ্রম, শ্রমিকের বলিদানের পর এপ্রিল ১৯৩৭ এ শেষ হয় কাজ। এবং খুলে দেওয়া হয় জনসাধারণের জন্য ২৭ মে, ১৯৩৭। ৮০ বছর ধরে দৈনিক হাজার হাজার যানবাহন পাড়ি দিচ্ছে গোল্ডেন গেট ব্রীজ।

গোল্ডেন গেট ব্রীজ সম্পর্কে কিছু জানা অজানা তথ্য

  • মিলিটারী চেয়েছিলো কালো-হলুদ করে রঙ করতে কিন্তু পরে বর্তমান রঙ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
  • এটাকে মানুষ সুইসাড স্পট হিসাবে ব্যাবহার করে আসছে, ১,৫০০ এর বেশি লোক এখান থেকে ঝাপিয়ে মারা যায়।
  • দুটি ক্যাবলের ভেতর যত ক্যাবল আছে তা দিয়ে পৃথিবীকে দুবার পেচানো যাবে।
  • ব্রীজের সেফটি নেট ছিলো যা প্রায় ১৯জনের জীবন বাচায়।
  • সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ১০ মিলিয়ন ট্যুরিষ্ট আসে ব্রীজ টি দেখতে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com