চাকরি খোঁজার গল্পটা সবার প্রায় একই। আমাজনের সফটওয়্যার প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন জানালেন, এই টেক জায়ান্টে ৩০-৪০টি পদে আবেদন করে দুটিতে সাড়া পেয়েছেন তিনি। বলেছিলেন, ‘অ্যাপ্লাই করার দুইটা রাস্তা আছে। প্রথমত amazon.jobs ওয়েবসাইটে অ্যাপ্লাই করলে নিয়োগদাতাদের পছন্দ হলে তাঁরাই যোগাযোগ করবেন। আরেকটা হলো কোম্পানিতে এখন কাজ করছেন, এমন কারও রেফেরালসহ (সুপারিশপত্র) অ্যাপ্লাই করা।’ গুগলের ক্ষেত্রেও গল্পটা খুব একটা ভিন্ন নয়। সাদমান সাকিব জানান, শুরুতে কয়েকবার আবেদন করে লাভ না হলেও ‘রেফারেল’ পাওয়ার পর তাঁর আবেদন গ্রহণ করা হয়। এরপর গুগলই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল।
তবে কি রেফারেল ছাড়া বিগ টেকে জায়গা পাওয়া একদমই সম্ভব নয়? তা না। আমরা যে ছয়জনের সঙ্গে আড্ডায় বসেছি, তাঁদের মধ্যে তিনজনই কারও সুপারিশ ছাড়া চাকরিতে ঢুকেছেন। এ ক্ষেত্রে দক্ষতাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
শাহাদাত হোসেন আরেকটি কৌশল শিখিয়ে দিলেন। প্রতিবছর ফেসবুক, গুগল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান থেকে যেসব কোডিং প্রতিযোগিতা হয়, সেগুলোতে ভালো করতে পারলে খোদ প্রতিষ্ঠানগুলোই চাকরির প্রস্তাব দেয়। শাহাদাত গুগল কোড জ্যাম, ফেসবুক হ্যাকার কাপ ইত্যাদির দিকে চোখ রাখার পরামর্শ দিলেন।
একই ক্লাসে যেহেতু ছয়জন বিগ টেকে সুযোগ পেয়েছেন, এর পেছনে নিশ্চয়ই তাঁদের বিভাগের অবদান আছে। সাফায়েত উল্যাহ একমত হলেন। বললেন, ‘আমাদের ডিপার্টমেন্টে খুব সুন্দর একটা চর্চা আছে, সেটা হলো প্রোগ্রামিং কনটেস্ট। আমার মনে হয় আমার সঙ্গে বাকিরাও একমত হবে—আমাদের এই জায়গায় আসার পেছনে প্রোগ্রামিং কনটেস্টগুলো খুব কাজে লেগেছে।’ শিক্ষকেরা অনেকে কোর্সের মধ্যেই প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার বিভিন্ন বিষয় শিখিয়েছেন। এমনকি বৃহস্পতিবার বিকেলে ক্লাস রাখা হতো না, যেন ছাত্রছাত্রীরা প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে পারেন।
বিল গেটস, মার্ক জাকারবার্গদের মতো ‘ড্রপআউট বিলিয়নিয়ারদের’ দেখে অনেকে ভাবতে পারেন, সিজিপিএ দিয়ে কিছু হয় না। নাসিরুল্লাহ সিদ্দিকী অবশ্য এই প্রসঙ্গে ডানে–বাঁয়ে মাথা নাড়লেন। তাঁর বক্তব্য, ‘অবশ্যই একজন ফার্স্ট ইয়ারের শিক্ষার্থীকে আমরা বলব না যে সিজিপিএ দিয়ে কিছু হয় না। ভালো রেজাল্ট করা জরুরি। কিন্তু এটা শেষ কথা নয়।’ সাদমান যোগ করেন, ‘যদি এক জায়গায় ঘাটতি থাকে, তাহলে অন্য কোনো দিক দিয়ে সেটা পূরণের চেষ্টা করতে হবে।’
যাঁদের কর্মজীবন শুরুই হলো গুগল, আমাজনের মতো প্রতিষ্ঠান দিয়ে, তাদের জন্য পরবর্তী ধাপ কী? হেসে সাফায়েত উল্যাহ বলেন, ‘আমার মতে প্ল্যান গোপন রাখা উচিত।’
সবশেষে তাঁদের পরামর্শ—আশা হারানো যাবে না। কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল মানে কেবল ‘প্রবলেম সলভিং’ নয়, আরও নানা ধরনের কাজের সুযোগ হতে পারে। যা আমার ভালো লাগে, তাতে যদি মনোনিবেশ করি, তাহলে কাজকে আর কাজ মনে হবে না।