রবিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৫ অপরাহ্ন

গুগলের চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা সরওয়ার কামাল

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৪

সময়টা ২০১৯ সালের এপ্রিল। ছোট এক রুম সাবলেট নিয়ে চারদিক-এর যাত্রা শুরু করেন উদ্যোক্তা সরওয়ার কামাল। গত পাঁচ বছরে একদল দক্ষ কর্মী বাহিনী ও ৩০০ এর বেশি ব্র্যান্ডের ৪ হাজারের বেশি পণ্য নিয়ে দেশ-বিদেশের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছেন। চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পথপরিক্রমা জানালেন দেশ রূপান্তরের মোহসীনা লাইজুকে

শুরুতে আমার টিমে ছিল মাত্র ২ জন। আমরা ছোট আকারে রিটেইল এবং হোলসেল শুরু করি। প্রথম ৬ মাসে আমাদের মাসে ৫০-৬০ হাজার টাকা বিক্রি করি। শুরুটায় কোরিয়ান ব্র্যান্ড নিয়ে কাজ করলেও কাস্টমারদের চাহিদার কারণে বাড়তে থাকে কাজের পরিধি। এর সঙ্গে বড় হতে থাকে চারদিক-এর কর্মী বাহিনী। এক রুমের ছোট অফিস থেকে ৩৩০০ হাজার স্কয়ার ফিটের অফিসে শিফট করি। ইউএস, ইউরোপ, জাপানসহ অন্যান্য দেশের ব্র্যান্ডগুলো অনবোর্ড করি। এখন প্রায় ৩০০-এর বেশি ব্র্যান্ডের ৪ হাজারের বেশি পণ্য আমরা আস্থার সঙ্গে বিক্রি করে যাচ্ছি।

প্রসাধন পণ্যের ব্যাপারে আমাদের দেশের মানুষের মনে আসল-নকলের একটা দ্বিধা কাজ করে। সেই জায়গায় গত ৫ বছরে চারদিক-এর সবচেয়ে বড় সুনাম হলো অথেনটিক প্রোডাক্ট বিক্রি করা। ক্রেতারা জানেন চারদিক ভেজাল কোনো পণ্য বিক্রি করে না। আর এজন্য চারদিক-এর নিয়মিত কাস্টমারের সংখ্যা অনেক বেশি। ক্রেতারা সবচেয়ে বেশি সচেতন থাকেন ভেজাল পণ্য নিয়ে। তাই যেখানে আসল পণ্য পাবেন পরবর্তী সময়ে সেখানেই যাবেন। অন্যদের পণ্যটি সম্পর্কে বলবেন। এভাবে আমার ব্যবসার পরিধি বাড়ছে।

এই পর্যায়ে ২০২১ সালের দিকে আমি ভাবছিলাম দেশেই যদি পণ্য উৎপাদন করতে পারতাম। কিন্তু আমাদের দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ কম। লাইসেন্স নিয়ে নানা রকম দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। বিএসটিআই অনুমোদন নিয়েও আছে নানা জটিলতা। পণ্য উৎপাদন করতে যেহেতু কারখানা স্থাপন করতে হবে। একটা পর্যায়ে সেটাও করলাম সাভারে। একটা রিসার্চ টিম ফার্মাসিস্ট নিয়োগ করলাম। এভাবে ২০২২ সালে আমাদের প্রথম কোরিয়ান ব্র্যান্ড জিফোর্স উৎপাদন শুরু করি। কোরিয়ার দুটো ফ্যাক্টরিতে আমরা ম্যানুফ্যাকচারিং করি। যেটা GFORS (www.gfors.co.kr)। শুরুটা নতুন একটা ব্র্যান্ড হিসেবে কঠিন হলেও বছর খানেকের মধ্যে আমরা অনেক ভালো সাড়া পাই। এরপর আমরা এই ব্র্যান্ডের পণ্য নিয়মিত উৎপাদন করছি। সঙ্গে কোরিয়া, মিডলইস্ট এবং বাংলাদেশে এই ব্র্যান্ডের পণ্য বাজারজাত করছি।

এরপর দেশে আমরা ২০২৩ সাল থেকে ম্যানুফ্যাকচারিং শুরু করেছি। দেশব্যাপী ডিস্ট্রিবিউশন শুরু হয়েছে এই বছরের শুরুতে। এই ফ্যাক্টরিতে আমরা তিনটা ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট তৈরি করছি। বর্তমানে ৪৮ জন ডিলারের মাধ্যমে প্রায় ৬ হাজারের বেশি দোকানে এসব ব্র্যান্ডের পণ্য যাচ্ছে। বাংলাদেশে প্রসাধন পণ্যের বাজার বেশ বড়। আস্তে আস্তে এর বিস্তৃতি বাড়ছে। এই বাজারের বড় অংশটাই আমদানিনির্ভর। অথচ ১৫ হাজার কোটি টাকার মার্কেট এটা। সম্প্রতি হারল্যান অনেক বড় আকারে বাজারে আসছে, কোহিনুর তো অনেক আগে থেকেই আছে। আড়ং আছে। আকিজ গ্রুপও বাজারে আসছে। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে পরিধিটা কতটা বাড়বে।

প্রসাধন পণ্য নিয়ে অনেক অভিযোগ আছে পণ্য নকল হয়। এই বিষয়টাও আমাদের টিমকে ভাবিয়েছে। তাই আমরা আমাদের পণ্যের মোল্ড নিজেরাই বানাই। নিজেদের নকশায়। যার ফলে নকলের সুযোগ নেই। দুই তিন বছর পর পর পাল্টানোর ইচ্ছেও আছে। আমাদের পণ্যের অনেক অর্ডার আছে। কিন্তু অর্ডার অনুযায়ী আমরা দিতে পারি না এমনও হয়েছে। কারণ অনেক উপকরণ আমাদের বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তারপর কেমিস্টদের দিয়ে গবেষণা করে আমরা এর আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত হয়েই পণ্য বাজারে নিয়ে আসছি।

থাকাকালে কোরিয়ানদের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি ও খাবার আমাকে মুগ্ধ করে।

পরবর্তী সময়ে কাজ করেছি কোরিয়ার প্রথম সারির ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড শিনসিগি’র সঙ্গে, এছাড়া পোশাক রপ্তানি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরেছি। এর মাঝের বছরগুলোতে গুগলে চাকরি করেছি। ২০১৩ সালে কোরিয়ায় বসবাসের অনুমতি পাই। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও আমার মনে হতো নিজে একটা কিছু করতে হবে। আর সেটা করব দেশে গিয়েই।

২০১৫ সালে ঢাকায় এসে রেস্তোরাঁ ও অনলাইনে কিছু ব্যবসা পরীক্ষামূলকভাবে করেছি। কিন্তু সেগুলোতে সফলতা পাইনি। বছরের শেষে বুঝতে পারলাম আমার নিজে থেকে কিছু করতে হলে চাকরি ছাড়তে হবে। এরপর শিনসিগি ছাড়তে দুই বছর লেগে যায়। শেষে সিদ্ধান্ত নিলাম বাংলাদেশে বিশুদ্ধ প্রসাধনী পণ্যের বাজারে ব্যবসা শুরু করব।

পরিবারের সঙ্গে থাকার জন্য ঢাকায় ফিরে আসি। দেশে ফিরে পিডিএস মাল্টিন্যাশনাল গ্রুপে কাজ করি। পিডিএস-এ কাজ করার সময় যুক্তরাজ্য, কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পোশাক রপ্তানি করেছি। পোশাক ব্যবসার পরিস্থিতি ভালো হলেও আমি সন্তুষ্ট ছিলাম না। কেবল মনে হতো নতুন কিছু একটা করা দরকার। অবশেষে ২০১৯ সালে নিজের দীর্ঘদিনের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে কোরিয়ান প্রসাধনী পণ্য বিক্রির ব্যবসা শুরু করি। ব্যবসা করতে গিয়ে বুঝতে পারলাম আমদানি করা কোরিয়ান প্রসাধনী পণ্যের লুকানো একটি বাজার রয়েছে দেশে। তাই ব্যবসায় পুরোপুরি মনোযোগ দেওয়ার ইচ্ছায় পিডিএস গ্রুপ ছেড়ে দিলাম। এখন একদল তরুণ কর্মী নিয়ে ‘চারদিক’ সামলাচ্ছি।

শুরুতে অনেক ব্যাংকের কাছে গিয়ে ঋণ না পেলেও এখন অনেক ব্যাংকই ঋণ দিতে আগ্রহী। দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা দরকার। প্রসাধন পণ্যের কাঁচামাল প্রাপ্যতা সহজীকরণ করা জরুরি।

ভবিষ্যতে আরও অনেক কিছু করার ইচ্ছে আছে। আস্তে আস্তে দেশেই তৈরি পণ্যের সংখ্যা বাড়াব। উৎপাদন বাড়াব। সামনের বছর মেইড ইন বাংলাদেশ নামে একটা মেলা করতে চাই। আসলে বাংলাদেশে বেস্ট আর অ্যান্ড ডি করতে চাই। কোরিয়ায় থেকে দেখেছি ওরা ওদের পণ্যকে সবচেয়ে সেরা ভাবে। আমিও সেটা করতে চাই। আমি আগামীর বাংলাদেশ নিয়ে অনেক আশাবাদী। তরুণরা অনেক কিছু করবে। চারদিক সম্পর্কে জানতে দেখতে পারেন ওয়েবসাইট www.chardike.com Ges

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com