1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
গারোদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ০৫:১৫ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
Uncategorized

গারোদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২১
পৃথিবীর কয়েকটি মাতৃতান্ত্রিক সমাজের মধ্যে গারো অন্যতম। গারো সমাজ প্রধানত মাতৃতান্ত্রিক। পরিবারে সদস্যরা মায়ের পরিচয় বহন করে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব এবং পশ্চিমে এবং বাংলাদেশের বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলায় গারো উপজাতি বাস করে।

গারো ইতিহাস

নৃ-বিজ্ঞানীর মতে, গারো মঙ্গোলীয় জাতির তিববতী-বার্মিজ শাখার বোড়ো উপশাখার অন্তর্ভুক্ত। গারোদের আদি বাসভূমি ছিল চীনের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের সিন-কিয়াং প্রদেশে। সেখান থেকে দেশত্যাগ করে পরবর্তীকালে চলে যান তিব্বতে।
পরবর্তী, তারা ভারতের উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলে এবং বাংলাদেশের বসবাস শুরু করে। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে গারো পাহাড়ে তাদের বসবাস শুরু হয়। এছাড়াও গারো পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, নাগাল্যান্ডে এবং দিনাজপুরে সংখ্যালঘু হিসেবে বসবাস করে। গারোদের নিজস্ব উপভাষা রয়েছে।
গারোদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, azhar bd academy
গারোরা সবসময় নিজেদের “আছিক” বা পার্বত্য পুরুষ হিসাবে আখ্যা দেয়। গারো নামটি তাদের দেয়া নাম না। এই নামটি  তাদের কাছে আপত্তিকর ও অবমাননাকর হিসেবে বিবেচিত। গারো জনগোষ্ঠী নয়টি গোত্রে বিভক্ত। গোত্র গুলো হল অ্যাও, ছিসাক, ম্যাচি-ডুয়াল, মাতাবেং, আম্বেং, রুগা-চিবক্স, গারা-গাঞ্চিং, আতং এবং মেগাম অন্যতম।
বাংলাদেশে মূলত আবেং, রূগা, আত্তং, মেগাম, চিবক প্রভৃতি দলভুক্ত গারো বাস করে। গারো সম্প্রদায় “সংসারেক ” (যারা প্রাচীন বিশ্বাস এবং প্রথা অনুসরণ করেন) এবং খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী ।

গারো বিয়ে

গারো উপজাতি বিয়ের পর, পাত্র স্ত্রীর বাড়িতে থাকে। প্রথানুযায়ী, পরিবারের সবচেয়ে ছোট কন্যা সম্পত্তির একমাত্র অধিকারী হয়। ছেলেরা যৌবনে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় এবং গ্রামের ব্যাচেলর ডরমেটরিতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে । পরিবারে প্রধান কর্তা থাকে মা। গারোরা বাইরের লোকদের কাছে “গারোস” হিসাবে পরিচিত।
গারোদের প্রধান উৎসব
গারো উপজাতির প্রচলিত উৎসব মূলত কৃষিকাজের সাথে সম্পৃক্ত। গারো উৎসবগুলির মধ্যে প্রধান হচ্ছে ‘‘ওয়াঙ্গালা‘‘ অনুষ্ঠান।  ফসল কাটার পরে ইশ্বরকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য উৎসবটি উদযাপন করা হয়। এটির পালনের জন্য কোনও নির্দিষ্ট তারিখ থাকে না। তবে প্রচলিতভাবে, ওয়াঙ্গালা অনুষ্ঠান অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে পালিত হয়।
তারা উদযাপনে জন্য প্রচুর পরিমাণে খাবার এবং বিয়ার প্রস্তুত রাখে। উদযাপনের সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিষয় হলো চমকপ্রদ ওয়াঙ্গালা নৃত্য, যাতে পুরুষ এবং মহিলারা জাঁকজমক পোশাকে অংশ নেয়। গারোরা অলঙ্কার পরনের জন্য বিখ্যাত। পুরুষ এবং মহিলা উভয়ই অলংঙ্কার পরিধান করে এবং এতে কনুই রিং, কানের দুল, পুতিঁমালা, হাতির দাঁত এবং চুড়ি অন্তর্ভুক্ত।

গারো বর্ণমালা

গারো বর্ণমালা মূলত লাতিন বর্ণমালার ভিত্তিতে তৈরি করা। তাদের বর্ণমালার অক্ষর সংখ্যা ২১ টি। এই বর্ণমালা বাংলাদেশের গারো সহ মেঘালয় এবং আসামের গারোদের লিখিত ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গারো ভাষার অনেকগুলো উপভাষা রয়েছে, যেমন আউই, আমবেং, আতং, ম্যাচি, রুগা, চিবোক, চিসাক, গারা-গাঞ্চিং ইত্যাদি। A B CH D E G H I J K L M N O P R S T U W হচ্ছে গারোদের ২১ টি বর্ণমালা। এই বর্ণগুলোর উচ্চারণে ইংরেজির সাথে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে।
ঘরবাড়ি
 
গারোদের ঘরগুলি সাধারণত বাঁশের দেয়াল এবং খড়ের ছাদ দিয়ে তৈরি। কিছু বাড়িতে খড়ের ছাদ সহ কাদামাটির দেয়াল রয়েছে। গারোদের  ঘরগুলি সাধারণত ৬ ফুট প্রস্থ এবং ১২ ফুট দীর্ঘ হয়। তাদের বাড়ির সামনের স্থান ফাঁকা থাকে।
গারো উপজাতি অত্যন্ত পরিশ্রমী। পুরুষ এবং মহিলা উভয়ই ক্ষেত এবং ঘরের সাধারণ কাজে অংশ নেয়। কিছু কাজ স্বাভাবিকভাবেই পুরুষরা করে, যেমন জঙ্গল-পরিষ্কার, ঘর নির্মাণ এবং কঠিন শারীরিক শ্রমের কাজ। মহিলারা সাধারণত ফসল রোপণ, তুলা করার পাশাপাশি কাপড় বুনন, রান্না ইত্যাদি করে।

গারো খাবার

গারোদের প্রধান খাবার হল ভাত। ভুট্টাও তাদের অন্যতম খাবার। গারোরা তাদের খাদ্যাভাসে খুব স্বাধীন এবং সখিন। এরা গরু, ছাগল, শূকর, পাখি, হাঁস ইত্যাদির মাংসের স্বাদ নিতে অভ্যস্ত। তারা হরিণ, বুনো ষাড়, বুনো শূকর ইত্যাদি বন্য প্রাণী খায়। মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া, বানমাছ এবং শুটকি মাছ তাদের খাবারের একটি অংশ। বন থেকে প্রয়োজনীয় শাকসবজী এবং মূল সরবরাহ করে।
গারোরা বাঁশের অঙ্কুরকে একটি সুস্বাদ খাবার হিসেবে বিবেচনা করে। তারা একটি বিশেষ ধরণের ভাত দিয়ে মদ তৈরি করে এবং তৈরিকৃত  মদকে ‘মিনিল বিচি’ বলে। অন্যান্য পানীয় ছাড়াও দেশীয় অ্যালকোহল গারোদের জীবনে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com