মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১৪ অপরাহ্ন
Uncategorized

খুলনা শহরে ঘোরাঘুরি – কোথায় কি খাবেন ?

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৪ মার্চ, ২০২১

ঢাকা থেকে কিভাবে খুলনা যাবেন সেটা বর্ননা করে সময় নষ্ট করতে চাইনা। ((এর জন্য গুগল একাই একশো।)) বাস, ট্রেন অথবা প্লেন যেকোনো একটি পথ বেছে নিন। দর্শক খুলনা বিভাগে প্রচুর বিখ্যাত ট্যুরিস্ট স্পট রয়েছে। সুন্দরবন, ষাট গম্বুজ মসজিদ এমন আরো অনেক বিখ্যাত জায়গা। কিন্তু শুধুমাত্র খুলনা শহরে ঘুরে বেড়ানোর মত সুন্দর সুন্দর জায়গার পরিচয় তুলে ধরতেই আমার এবারের ভ্রমণচিত্র। খুলনা শহরের খাবার দাবারের রিভিউ নিয়ে ভ্রমণবন্ধুর পক্ষ থেকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি আতিক বাবলা।

বলে রাখা ভালো, খুলনা শহরে পরিবহণ ব্যয় খুবই সুলভ। তাই আর পরিবহণ ব্যয় নিয়ে বিস্তারিত জানানোর প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না। বাহন হিসেবে পাবেন রিক্সা, অটোবাইক। আরামদায়ক চলাফেরার জন্য এধরনের পরিবহণ আপনার ভ্রমনে বিশেষ সুবিধা প্রদান করবে।

দর্শক শুরু করা যাক খুলনার সুপরিচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিএল কলেজ দিয়ে। এ কলেজের সুনাম সম্পর্কে কমবেশি সবাই জানেন। তবে এর সৌন্দর্য্য বলায় বাহুল্য। মূল গেইট দিয়ে প্রবেশ করেই ডান দিকে দেখবেন পুরো বিএল কলেজের একটি বিশাল ম্যাপ যা আমার কাছে বেশ অভিনব লেগেছে। রয়েছে ইউনিক ডিজাইনের শহীদ মিনার। সাভারের স্মৃতিসৌধ এবং ঢাকাস্থ জাতীয় শহীদ মিনারের মিশেলে নির্মাণ করা হয়েছে এটি। এছাড়া রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় র্নিমিত বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের ছবি মোজাইককৃত চমৎকার মুর‌্যাল। বিশাল খেলার মাঠ, বাচ্চাকাচ্চাদের খেলার জায়গা সবই পাবেন এখানে। পড়ন্ত বিকেলে স্থানীয় জনগনের পদচারনায় ভরে উঠে।

চুইঝালের ঘুগনি ও ঝালমুড়ি

এবার চলে আসি খাওয়া-দাওয়ার বিষয়ে। মূল গেইটের পাশেই দেখবেন ছগির ভাই তার স্পেশাল লেবুর সরবত এবং চুইঝালের ঘুগনি ও ঝালমুড়ির গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছেন। ঝালমুড়ির সাথে পাবেন আস্ত রসুন ভূনা। চমৎকার টেস্ট। তবে বেশি খাবেন না। এধরনের মুখোরোচক খাবার বেশি খাওয়া ঠিক নয়। আর যদি খেয়েই ফেলেন তবে রয়েছে ছগির ভাইয়ের স্পেশাল লেবুর সরবত। পেট ঠান্ডা করতে আশেপাশে এর চেয়ে ভালো অপশন আর হয়না।

ছগির ভাইয়ের স্পেশাল লেবুর সরবত

খুলনা শহরের নামিদামি কিছু হোটেলের মধ্যে টাইগার গার্ডেন ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অন্যতম। এটি একটি থ্রি স্টার হোটেল। দেশি-বিদেশি মানুষের আনাগোনা আছে এখানে। এরই একটি নিজস্ব রেস্টুরেন্ট সুবিধা রয়েছে হোটেলে অবস্থানরত অতিথিদের। যেখানে আপনিও আসতে পারেন স্বপরিবারে। নিজের পরিবার অথবা বন্ধুদের  সাথে কোয়ালিটি টাইম যাপনের একটি অনবদ্য সিলেকশন হতে পারে টাইগার গার্ডেন রেস্টুরেন্ট। চমৎকার সাজানো-গোছানো। অসাধারণ লাইটিং করা। দেয়ালে বাহারি ডিজাইন। প্রিয়জনের সাথে সময় কাটানোর পারফেক্ট স্থান এটি। এবার আসি খাবারের বিশ্লেষণে। মেনু থেকে বেছে নিতে পারেন পছন্দের খাবারটি। আমরা অবশ্য চিকেন স্টেক, ফ্রেন্স ফ্রাই সাথে পছন্দের ড্রিংকস অর্ডার করেছিলাম। দাম নাগালের মধ্যেই। খাবারের মানও খুব ভালো। রয়েছে বুফে সার্ভিসের সুবিধা। তবে এই হোটেলের যে বিষয়টি আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে সেটি হলো লাইভ মিউজিকের ব্যবস্থা। খেতে খেতেই উপভোগ করতে পারবেন লাইভ মিউজিক।ওভারঅল সাভির্স আমার খুবই ভালো লেগেছে।

আমরা চিকেন স্টেক, ফ্রেন্স ফ্রাই সাথে ড্রিংকস অর্ডার করেছিলাম

খুলনা জিরো পয়েন্টের চুইঝাল মাংসের কথা কে না জানেন। এখানকার চুইঝালের খাসি এবং গরুর মাংস অনেক বিখ্যাত।অনেকেই জেনে থাকবেন চুইঝাল একটি বিশেষ ধরনের গাছের ডাল যা মাংস রান্নায় মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। জিরো পয়েন্টের চারদিকেই রাস্তার পাশে ছোট ছোট সাধারণ মানের হোটেল দেখতে পাবেন যেগুলোতে চুইঝালের মাংস পাবেন। তবে যারা একটু পরিচ্ছন্ন এবং গোছানো জায়গায় খেতে ভালোবাসেন  তাদের জন্য রয়েছে চিটাগং দরবার হোটেল। জিরো পয়েন্ট থেকে যশোর রোডের দিকে ১০০শত গজ দুরত্বে অবস্থান এই হোটেলটির। সুন্দর পরিবেশ। পরিবার কিংবা বন্ধুদের সাথে চলে আসতে পারেন এখানে। চুইঝালের খাসি এবং গরুর মাংসের পাশাপাশি এখানে পাবেন মেজবানি গরুর মাংস ও  কালাভুনা। খাবারের টেস্ট এক কথায় অসাধারণ। সেট মেনুর সুবিধাও পাবেন এখানে। অর্ডার নিয়ে ইন্সট্যান্ট রান্না করে পরিবেশন করা হয়।

চুইঝালের খাসি এবং গরুর মাংসের পাশাপাশি এখানে পাবেন মেজবানি গরুর মাংস ও  কালাভুনা

দর্শক অটোবাইক রিজার্ভ নিয়ে জিরো পয়েন্ট থেকে সোজা চলে যাবেন রূপসা ব্রিজ। এটি খান জাহান আলি সেতু নামেও পরিচিত। বিভিন্ন ধরনের নানান কর্মের মানুষের দেখা পাবেন এখানে। দর্শক এরই মধ্যে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা ছুই ছুই। ব্রিজের ল্যাম্প পোস্টের বাতিগুলো তখন আস্তে আস্তে জ্বলে উঠছে। সে এক অসাধারণ দৃশ্য। ঠিক এমন সময়ে আপনার কিছু হালকা নাস্তা বা স্ন্যাক্স খেতে মন চাইবে। আর তখনই আপনার সামনে হাজির হবে আল্লাহর বান্দার চটপটি-ফুচকা। এক কথায় মাউথ ওয়াটারিং টেস্ট। এই স্বাদ ভোলার নয়।

আল্লাহর বান্দার চটপটি-ফুচকা, এক কথায় মাউথ ওয়াটারিং টেস্ট

শহীদ হাদিস পার্কের উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থান পার্কসাইড ক্যাফের। ছোট্ট জায়গা কিন্তু চমৎকার পরিবেশ। বিভিন্ন ধরনের এবং নানা স্বাদের ড্রিংস পাবেন এখানে। সাথে রয়েছে আইস কফি, ফ্রুটস ইয়োগার্ট ইত্যাদি। এতো কম দামে এতো ভালো মানের কফি কখনো খেয়েছেন কিনা আমার সন্দেহ আছে। ইতোমধ্যেই আমি এদের কোল্ড কফির ভক্ত হয়ে গেছি বুঝতেই পারছেন। এই ক্যাফের ভেতরে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। প্রিয়জনকে নিয়ে নির্দিধায় চলে আসতে পারেন এখানে।

পার্ক সাউড ক্যাফের কোল্ড কফি ভালো লাগবে আপনারও

বন্ধুরা এই ছিলো খুলনা শহর নিয়ে ভ্রমণবন্ধুর বন্ধুদের জন্য আমার এবারের ভ্রমণচিত্র। আমাদের এবারের প্রয়াস ছিলো খুলনার কমন পরিচিত জায়গা যেমন নিউমার্কেট বা ডাকবাংলো মাকের্টের বাইরে আরো কিছু জায়গাকে আপনাদের সামনে পরিচিত করে তোলা। জানিনা কতটুকু পেরেছি। আজ এ পর্যন্তই। দেখা হবে অন্যকোন জায়গা বা খাবারের রিভিউ নিয়ে। থাকুন ভ্রমণবন্ধুর সাথে। টিল দেন আদিওস।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com