বিগত কয়েক দশকে কম্পিউটার প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে বিশ্বজুড়ে। মানুষের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ সব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ব্যবহার বিপুলভাবে বেড়েছে। আর তাই এখন শিশুদের শিক্ষার অভিমুখ আগের থেকে অনেকটাই বদলেছে। বদলেছে শিক্ষার ধরনও। পুঁথিগত শিক্ষার পরিবর্তে কারিগরি শিক্ষায় বেশি জোর দিচ্ছে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই।
প্রযুক্তির এই অভূতপূর্ব বিকাশের কারণেই একবিংশ শতকে শিক্ষা ব্যবস্থায় অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে গিয়েছে কোডিং। একই সঙ্গে শিশু শিক্ষায় যৌক্তিক চিন্তাভাবনা, সৃজনশীলতা, গণনামূলক চিন্তাভাবনা, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতায় জোর দেওয়া হচ্ছে, যা শিশুদের মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের দ্বারা প্রকাশিত একটি জনপ্রিয় অনুমান অনুসারে, বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষায় থাকা শিশুদের 65 শতাংশ বড় হয়ে এমন কাজ করবে, যে কাজ আজকের দুনিয়ায় নেই বললেই চলে। এই তথ্যকে সমর্থনের সবথেকে বড় প্যারামিটার অবশ্যই প্রযুক্তি। প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের কারণেই আমাদের স্কুলগামী শিশুদের শিক্ষাকেও নতুনভাবে ভাবাতে বাধ্য করেছে।
শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যেই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি আরও প্রশস্ত করতে এবং তাদের চারপাশের বিষয়ে সচেতন করতে সহায়তা করবে। ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য নেওয়া অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে চলেছে NEP 2020। এর সাহায্যে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকেই প্রযুক্তির মাধ্যমে কোডিং শুরু করবে ছাত্র-ছাত্রীরা। স্টেম প্রোগ্রাম, এআই, থ্রিডি প্রিন্টিং, ড্রোন এভিয়েশন এবং আরও অনেক কিছুর সাহায্যে শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাও যেমন বেড়েছে, তেমনই আবার তাদের অভিনব দক্ষতা বিকাশের জন্য একটি প্ল্যাটফর্মও তৈরি হয়ে গিয়েছে।
কোডিংকে এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ টুল হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে। কারণ, কোডিং শুধুমাত্র শিশুদের প্রযুক্তিগত ভাবে শক্তিশালী হতে সাহায্য করছে এমনটা নয়। সেই সঙ্গেই আবার একবিংশ শতাব্দীর জন্য সঠিকভাবে বেড়ে উঠতেও সাহায্য করছে। পেশা যাই হোক না কেন, সৃজনশীলতা, সমস্যা-সমাধান, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার দক্ষতা যে কোনও মানুষকে সাহায্য করবে। আর এই কারণেই রোবট এখনও মানুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছে না। ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থাতেও কোডিং যুক্ত হওয়ার পিছনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে এই বিষয়টিকেই।
বিশেষত, করোনাভাইরাস অতিমারি মানুষকে জীবনের সব ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নিতে শিখিয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে দৈনন্দিন যা কিছু জরুরি কাজ যেমন, বাজার করা, অফিসের কাজ, পড়াশোনা থেকে শুরু করে জীবনের সব ক্ষেত্রেই ত্রাণকর্তা হয়ে উঠেছে প্রযুক্তি। আর সেই জন্যই অন্য সব শিল্প যখন মুখ থুবড়ে পড়েছে, ঠিক সেই সময় লাফিয়ে লাফিয়ে অগ্রগতি হচ্ছে প্রযুক্তিগত শিল্পের।
‘ক্ষমতার সঙ্গেই আসে দায়িত্ব’, প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত মানুষদের এই দায়িত্ব একদিন না একদিন অনুভব করতেই হবে। যত দ্রুত এই উপলব্ধি করা যাবে, ততই মঙ্গল। সমাজে আরও বেশি মানুষের জন্য কাজ করার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত মানুষদের। অনুমান করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে শুধুমাত্র আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কারণেই প্রায় 6 কোটি চাকরি সৃষ্টি হবে। পাশাপাশিই আবার ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী সিস্টেমকে সুরক্ষিত রাখতে আরও বেশি মানুষের প্রয়োজন হবে, যা আরও কাজের সুযোগ করে দেবে।
দূর ভবিষ্যতে প্রযুক্তির বিকাশের গতি কমার কোনও সম্ভাবনা নেই। ভবিষ্যতে রোবটের শরণাপন্ন হতে হলেও, যৌক্তিক চিন্তাভাবনা, সৃজনশীলতা, গণনামূলক চিন্তাভাবনা, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতার কারণেই মানুষকে কাজ করে যেতে হবে। তবে, শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত ভাবে দক্ষ মানুষরাই কাজের সুযোগ পাবেন বলে মনে করছেন অনেকেই। আর সেই কারণে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সেই পথে প্রস্তুত করার প্রয়োজন।