1. [email protected] : চলো যাই : cholojaai.net
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট :সম্ভাবনা ও শঙ্কা
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ০৫:০১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
Uncategorized

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট :সম্ভাবনা ও শঙ্কা

  • আপডেট সময় শনিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২১

মানুষের চিন্তনক্ষমতা, বিশ্লেষণদক্ষতা ও বিচক্ষণ বুদ্ধিমত্তা আধুনিক বিজ্ঞানের প্রযুক্তিগত উত্কর্ষতায় যন্ত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়ন এবং সে অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আধুনিক বিজ্ঞানের এক অনন্য আশীর্বাদ। অত্যাশ্চর্য এই আশীর্বাদের অভূতপূর্ব ফলাফল হিসেবে মনুষ্যনির্মিত কৃত্রিম যন্ত্রগুলো মানুষের মতো অনুধাবন এবং সে অনুযায়ী প্রতিকূল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম!

বিখ্যাত দার্শনিক ও গণিতবিদ রামোন লোল ১৩০০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে গল্প ও কৌতুক বলার উপযোগী এবং বিশ্লেষণধর্মী যুক্তি উপস্থাপন করতে পারদর্শী একটি যন্ত্র তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। গণিতজ্ঞ গটফ্রিড লিবনিজ লোলের আবিষ্কৃত ক্যালকুলাস রেটিওসিনেটর ব্যবহার করে ভাষা বোধগম্য মেশিন প্রস্তুতের এই ধারণাকে আরো প্রসারিত করেন। আর এর বাস্তবসম্মত রূপদান করেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী অ্যালান টুরিং। গাণিতিক যুক্তিবিজ্ঞান অধ্যয়নকালে গণিতের এক বিস্ময়কর তত্ত্বের সূত্রপাতের মাধ্যমে তিনি দেখাতে সক্ষম হন যে, গাণিতিক রাশি ‘০’ ও ‘১’ ব্যবহার করে মানুষের চিন্তাভাবনাকে মেশিনের বোধগম্য ভাষায় রূপান্তর করা সম্ভব। তার এই প্রায়োগিক তত্ত্ব সে সময় বিজ্ঞানীমহলে ভূয়সী প্রশংসা কুড়ায়। বিশেষ করে স্নায়ুবিদ্যা, তথ্য তত্ত্ব ও সাইবারনেটিক্সের গবেষকদের জন্য বৈদ্যুতিক মস্তিষ্ক নির্মাণের সম্ভাবনাকে এটি বাড়িয়ে দিয়েছিল বহুগুণে, যা বর্তমান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিক্স প্রযুক্তির উদ্ভব ঘটায়।

একুশ শতকের এই যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিক্স প্রযুক্তির সুফল হিসেবে একেকটি রোবট জ্ঞানে, গুণে ও বুদ্ধিদীপ্ত আচরণে মানুষের সমকক্ষ হয়ে উঠছে। উদাহরণ হিসেবে অত্যাশ্চর্য রোবট গ্রেসের কথা বলা যেতে পারে। হংকংভিত্তিক রোবটিক্স কোম্পানি হ্যানসন রোবটিক্সের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকৌশলী ডেবিড হ্যানসন রোবট সোফিয়ার পর এবার তৈরি করেন অত্যাধুনিক রোবট গ্রেসকে। সোফিয়া মূলত বাস্তব তথ্যকে প্রক্রিয়াজাতকরণ, ফেসিয়াল রিকজনাইজেশন, মানুষের অঙ্গভঙ্গি ও মুখের অভিব্যক্তি নকল করা, প্রশ্নের উত্তর দিতে পারা এবং বিভিন্ন বিষয়ের ওপর চালিয়ে যেতে পারত কথোকপথন। তবে রোবট গ্রেস একেবারেই ভিন্ন ও আধুনিক। কোভিড-১৯ শুরুর পরবর্তী সময় থেকে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন পৃথিবীর স্বাস্থ্যযোদ্ধারা। মূলত তাদের কষ্ট লাঘব করতেই হ্যানসন রোবটিক্স নিয়ে এসেছে গ্রেসকে। করোনার প্রাদুর্ভাবে সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি এড়াতে যারা দীর্ঘদিন ধরে বাসাবন্দি, তাদের সঙ্গে কথা বলে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করবে গ্রেস। তাছাড়া বুকে ফিটকৃত থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে রোগীর শরীরের তাপমাত্রা মাপা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারবে সে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২২ সালের শুরুর দিকেই চীন, জাপান, হংকং, কোরিয়া ও থাইল্যান্ড এ ধরনের রোবট উত্পাদন শুরু করবে পুরোদমে।

পুরুষদের ব্যাচেলর সমস্যা দূর করতে আসছে রোবট ‘বধূ’

গ্রেস ও সোফিয়াকে বাসাবাড়ির পরিষেবাদানকারীর ভূমিকায় তৈরি করা হলেও এজাতীয় বুদ্ধিমান রোবটকে অফিস-আদালত, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও শেয়ার মার্কেটে ক্লায়েন্ট কিংবা ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে, যেখানে লোকসানের কোনো সুযোগই থাকবে না। তাছাড়া বিমানের পাইলট হিসেবে, দূরপাল্লার গাড়ি ড্রাইভিংয়ে, ভারী ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শ্রমিকের ভূমিকায়, বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপনে, বিপণিবিতান ও চিকিত্সার ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের মতো নিখুঁত কাজেও ব্যবহার করা যাবে এদের। পুলিশের স্পেশাল গোয়েন্দা ফোর্সেও তাদের অবদান হবে অতুলনীয়। তবে এজাতীয় কাজের জন্য মানব জাতির কর্মহীন হয়ে পড়ার সম্ভাবনার পথও সুগম হবে। বিপরীতে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে সমানুপাতে।

সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডভিত্তিক নীতি গবেষণা কেন্দ্র ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম তাদের এক বৈশ্বিক আলোচনাসভায় জানিয়েছে, রোবটের অত্যধিক ব্যবহারের কারণে ২০২৫ সালের মধ্যে মাত্র চার বছরের ব্যবধানে বিশ্ব জুড়ে চাকরি হারাবে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি কর্মজীবী মানুষ। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানীর ভাষ্যমতে, আগামী ৫০ বছরের ব্যবধানে মানুষের অর্ধেক কাজ এবং ১২০ বছরের মধ্যে মানুষের সব কাজ সম্পন্ন হতে পারবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন অত্যাধুনিক রোবটের মাধ্যমে। বিশ্ব জুড়ে এখন যে হারে ভয়ংকর সব পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র তৈরি হচ্ছে, তাতে নিশ্চিতভাবে বলাই যায়, পৃথিবী এখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে অগ্রসরমান। আশঙ্কার কথা, ইতিমধ্যে বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশ যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকের বিপরীতে ব্যবহারযোগ্য অপ্রতিরোধ্য ও প্রলয়ংকরী রোবট তৈরি করছে। রোবটগুলো নিজেদের পর্যবেক্ষণক্ষমতা কাজে লাগিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক্ষ্য নির্ধারণ ও শত্রু-মিত্র চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে শত্রুকে ধ্বংসের কাজটি করবে নিখুঁতভাবে। বিশেষ করে উন্নত বিশ্বের পরাশক্তিগুলো এ ধরনের রোবট ও ড্রোন তৈরির গবেষণায় প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করতে প্রতিযোগীর ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছে, যা ভাবনার বিষয়!

কথায় আছে—বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ। তাই এই আশীর্বাদপূর্ণ বেগ যেন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পৃথিবীর বুক থেকে মানব জাতির বিলুপ্তির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়—এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে থাকতে হবে সর্বোচ্চ সতর্ক। ভবিষ্যত্ প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবটিক্স প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে সবাইকে কাজ করতে হবে একযোগে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবটগুলো হয়ে উঠুক মানুষের দুঃসময়ের পরম বন্ধু; সাহায্য-সহযোগিতা ও নিরাপদ আশ্রয়ের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু।

লেখক :শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Developed By ThemesBazar.Com