ছোট্ট একটা পেরেক মাটিতে ফেলে দিলে সেটা সঙ্গে সঙ্গে নীচে পড়ে যায়। কিন্তু ওজন হাজার হাজার কেজি ওজনের বিশাল বিমান আকাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা উড়ে বেড়ায়! পড়ে যায় না কেন? কেমন করে এটা সম্ভব? এই প্রশ্ন অনেকের মনেই জাগে। এই প্রশ্নের জবাব কেউ কেউ হয়তো এক কথায়ই দিয়ে দিতে পারেন, কেন, বিমানের ইঞ্জিন ওটাকে ছুটিয়ে নেয়, আর ডানা ভাসিয়ে রাখে! কথাটা ঠিক আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কীভাবে? আমরা যদি দুহাত বাতাসে ভাসিয়ে দিই কিংবা যেকোনো কিছুতে ইঞ্জিন জুড়ে দিয়ে ছুড়ে দিই বাতাসে, তাহলেই কি জিনিসটা ভেসে থাকবে?
এর উত্তর লুকিয়ে আছে বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর প্রযুক্তিতে—অ্যারোডাইনামিক্স। সহজ ভাষায় বললে, আকাশে উড়তে হলে বিমানের চারটি শক্তির মধ্যে সঠিক ভারসাম্য থাকতে হয়—লিফট (উত্তোলন), থ্রাস্ট (ধাক্কা), ড্র্যাগ (বাধা), এবং গ্র্যাভিটি (মাধ্যাকর্ষণ)।
ডানার গঠন
বিমানের ডানার গঠন এমনভাবে তৈরি, যাতে ডানার ওপর দিয়ে যাওয়া বাতাসের গতি বেশি হয় এবং নিচ দিয়ে গতি কম। এর ফলে ওপরে কম চাপ, নিচে বেশি চাপ তৈরি হয়। আর এই চাপের পার্থক্য থেকে যে ‘লিফট ফোর্স’ সৃষ্টি হয়, তা-ই বিমানকে ওপরে তোলে।
ইঞ্জিনের শক্তি
একটি বিমানকে শুধু ভাসিয়ে রাখলেই হয় না, তাকে এগিয়ে চলতে হয়। আর সে কাজটা করে জেট ইঞ্জিন। ইঞ্জিন যত জোরে ঠেলবে, বিমান তত দ্রুত ছুটবে, আর তত বেশি লিফট তৈরি হবে।
ওজন বনাম উত্তোলন
বিমানের ওজন তাকে নিচে নামিয়ে আনতে চায়। কিন্তু যখন লিফট ফোর্স এই ওজনের সমান বা তার বেশি হয়, তখনই বিমান ভেসে থাকতে পারে। এই ভারসাম্য ঠিকঠাক থাকলে, বিমান দীর্ঘ সময় আকাশে উড়তে পারে অনায়াসে।
নিয়ন্ত্রণ পৃষ্ঠ
বিমানের ভেতর আছে নানা রকম নিয়ন্ত্রণ পৃষ্ঠ—আইলারন, এলিভেটর, রাডার ইত্যাদি। এগুলোর মাধ্যমে পাইলট বিমানকে বাঁ দিকে ঘোরানো, ওপরে তোলা, নিচে নামানো—সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
টার্বুলেন্সে কাঁপলেও পড়ে না
বাতাসের ধাক্কা বা টার্বুলেন্স থাকলে অনেক যাত্রী ভয় পেয়ে যান। কিন্তু আধুনিক বিমানের নকশা এমনভাবে তৈরি যে, হালকা ধাক্কা বা কম্পন হলেও তা উড়ানকে প্রভাবিত করে না।