শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৩১ অপরাহ্ন
Uncategorized

কিউবাঃ চে গুয়েভারা, ফিদেল কাস্ত্রোর দেশ

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল, ২০২১

কিউবার সরকারী নাম “রিপাবলিক অফ কিউবা”। দেশটি উত্তর ক্যারিবিয়ান সাগরে উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের মধ্যস্থলে অবস্থিত। এর দক্ষিণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাহামা দ্বীপপুঞ্জ, পূর্বে হাইতি, পশ্চিমে মেক্সিকো ও উত্তরে জ্যামাইকা অবস্থিত। দেশটি আশেপাশের অনেকগুলি ছোট ছোট দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত।

উর্বর ভূমি এবং আখ ও তামাকের ফলনের প্রাচুর্যের ফলে কিউবা ক্যারিবীয় অঞ্চলের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্র। পার্শ্ববর্তী সব দেশ থেকে কিউবায় প্রচুর লোক যাওয়া-আসা করেন সবসময়। এই যাতায়াতের ফলে কিউবাতে বহু ধরনের গোষ্ঠী ও সংস্কৃতির সহাবস্থান ঘটেছে। এছাড়াও দেশটি এই এলাকার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক দেশটিতে ঘুরতে আসেন।

তাহলে বন্ধুরা চলুন, কিউবা দেশ সম্পর্কে আরো কিছু জানা-অজানা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

১। উর্বর ভূমি, অসংখ্য পোতাশ্রয় এবং খনিজের ভাণ্ডারের জন্য দেশটিকে স্পেন, এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময়ে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চেয়েছে। কিউবা ৪০০ বছর ধরে স্পেনের একটি উপনিবেশ ছিল। অবশেষে ১৯শ শতকের মধ্যভাগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় কিউবা স্পেনীয়দের কাছ থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।

১৯০২ সালে কিউবানরা স্বায়ত্তশাসন শুরু করলেও তখনো দেশটিতে মার্কিন প্রভাব প্রবল ছিল। বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগের অধিকাংশ সময় জুড়ে কিউবার সরকার ধারাবাহিকভাবে কিছু দুর্নীতিপরায়ণ রাষ্ট্রপতি ও স্বৈরশাসকের অধীনে শাসিত হয়। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন স্বৈরশাসন ফুলগেনসিও বাতিস্তা। ১৯৫৯ সালে ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি বাতিস্তা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং কিউবায় একদলীয় কমিউনিস্ট শাসন প্রবর্তন করেন। এটাই বিখ্যাত কিউবান বিপ্লব নামে পরিচিত। এই বিপ্লবের অন্যতম ব্যক্তিত্ব ছিলেন চে গুয়েভারা। ১৯৬১ সালে কাস্ত্রোর নেতৃত্বাধীন কিউবা সরকারি ভাবে মার্কসবাদ গ্রহণ করে।

২। ১ লাখ ৯ হাজার ৮৮৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১২ লাখ। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ১০৪ তম দেশ।

৩। কিউবার সরকারী ভাষা স্প্যানিশ এবং দেশটির বেশিরভাগ মানুষই এই ভাষাতেই কথা বলেন। কিউবাতে প্রচলিত স্প্যানিশ ভাষা কিউবান স্প্যানিশ নামে পরিচিত। তবে পর্যটন ব্যবসার সাথে জড়িতরা ইংরেজি ভাষা জানেন।

৪। দেশটির প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী। বাকিদের মধ্যে প্রায় ২৪ শতাংশ মানুষ কোন ধর্মেই বিশ্বাসী নয় এবং ১১ শতাংশ মানুষ অন্যান্য স্থানীয় ধর্মে বিশ্বাসী।

৫। হাভানা কিউবার রাজধানী, বিভাগীয় এবং প্রধান বাণিজ্যিক শহর ও সমুদ্র বন্দর। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে রোমান্টিক এবং বৃহৎ শহরটি হলো এই হাভানা।

এখানকার অপূর্ব সব স্থান আর বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি পর্যটকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। সেই ফেলে আসা সময়ের সবকিছুই যেন এখনো জীবন্ত এখানে ভিনটেজ গাড়ি আর খোয়া বিছানো রাস্তা আপনাকে পুরনো সময়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। স্থাপত্যের দিক দিয়ে হাভানা ঐতিহ্যমণ্ডিত। এই শহরে রয়েছে কয়েক শ বছরের পুরনো বাড়িঘর।

এছাড়াও শহরটিতে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে ক্রাইস্ট অব হাভানা হলো যীশুর বিশাল এক ভাস্কর্য। এটা কিউবার খ্যাতিমান ভাস্কর জিলমা মাদেরার হাতে গড়া এক অনবদ্য শিল্পকর্ম। এছাড়াও হাভানা উপকূল দিয়ে প্রবেশপথে রয়েছে অসাধারণ মোরো ক্যাসেল। এর নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী যেকোনো মানুষকে বিস্মিত করবে। আরো আছে হাভানা ক্যাথেড্রাল। এটাও এক দারুণ স্থাপনা। পুরনো ভবনটি তুলে ধরছে বারোকি স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন।

৬। দেশটিতে একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু বিদ্যমান। এখানে বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ২১-২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ডিসেম্বর থেকে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত আবহাওয়া খুবই চমৎকার থাকে।

৭। কিউবা একটি একদলীয় কমিউনিস্ট রাষ্ট্র। এর শাসনযন্ত্র সম্পূর্ণভাবেই কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির অধীন। ১৯৯২ সালে গৃহীত নতুন সংবিধান অনুসারে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি “রাষ্ট্র এবং সমাজের নেতৃত্বপ্রদানকারী মূল চালিকাশক্তি” হিসেবে অভিহিত হয়েছে।

৮। কিউবার মত সবুজে ছাওয়া দেশ অতি বিরল, মাইলের পর মাইল অবারিত অপাপবিদ্ধ নিষ্কলঙ্ক নিসর্গ। এখানে অনুমতি ছাড়া গাছ কাটার নিয়ম নেই। কেউ লুকিয়ে চুরিয়ে গাছ কাটলেই পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যাবে।

৯। দেশটির রাজধানী হাভানার নাম অনেকেই মনে রাখে হাভানা চুরুটের নামে। রাম এবং সিগারেটের বৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত হাভানা। অনেকেই কার্টুন ভর্তি করে সিগারেট নিয়ে আসেন হাভানা থেকে। এত সস্তায় এত ধরনের সিগারেট সহজে আর কোথাও মিলবে না।

১০। দেশটির রাজধানী হাভানা কেবলমাত্র ওয়েস্ট ইন্ডিজ, উত্তর বা মধ্য আমেরিকা কিংবা ল্যাতিন আমেরিকার নয়, বরং সমগ্র আমেরিকার নিরাপদতম মেট্রপলিটন শহর। এখানে এমন কোন জায়গা নেই যেখানে পর্যটকদের একলা চলাচল করতে নিষেধ করা হয়েছে।

১১। কিউবায় আছে বিশ্বের সেরা চিকিৎসা ব্যবস্থা। প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার হাসপাতালগুলোতে এবং জনসংখ্যা প্রতি সবচেয়ে বেশী ডাক্তার বিশ্বের যে দুটি দেশে তার একটি কিউবা, অন্যটি ইসরায়েল।

১২। দেশটির কৃষকরা পরিবেশদূষণকারী যন্ত্রের সাহায্যে জমি মাড়াই করে না, ঠিক তেমনি জমিতে ব্যবহার করে না কোন কীটনাশক না রাসায়নিক সার। তারা এখনো সেই আদি এবং অকৃত্রিম উপায়েই চাষাবাদ করে থাকেন।

১৩। যদিও কিউবার অর্থনীতি রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত তবুও এটি বর্তমানে বাজার অর্থনীতির দিকে যাচ্ছে। এখন বেশিরভাগ মানুষ কৃষিকাজ এবং পশু পালন করে জীবিকা নির্বাহ করে। কৃষিকাজ কিউবাবাসীদের প্রধান উপজীবিকা। আবাদি জমির দুই তৃতীয়াংশে ইক্ষুর চাষ হয়। তামাক, কফি, ক্যাকাও, ফল, শাকসবজি, কর্ন, আলু, চাল প্রভৃতি প্রধান কৃষিপণ্য। একইসাথে কিউবা বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ একটি দেশ।

১৪। কিউবায় দুই ধরনের টাকার প্রচলন বিদ্যমান। কিউবাবাসীদের জন্য কিউবান পেসো আর পর্যটকদের জন্য পরিবর্তনযোগ্য কিউবান পেসো, যাকে তারা বলে কনভারটিবল বা কুপস। ট্যুরিস্টদের সব খরচ কুপসেই করতে হয় এবং তাদের জন্য যে কোন কিছুর খরচই স্থানীয়দের চেয়ে অনেক অনেক বেশী। ১ কিউবান পেসো সমান প্রায় বাংলাদেশী ৩ টাকা ২০ পয়সা। কিন্তু ১ কনভার্টিবল পেসো সমান প্রায় বাংলাদেশী ৮৪ টাকা ৮৬ পয়সা।

১৫। দেশটির মোট জিডিপি প্রায় $৯৬.৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু আয় প্রায় $৮,৪৩৩ মার্কিন ডলার।

১৬। কিউবার ডায়ালিং কোড হচ্ছে +৫৩।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com