শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:১৮ অপরাহ্ন
Uncategorized

কানাডা ভ্রমণ বা ইমিগ্রেশনে ভুল তথ্য উপস্থাপন কতটা মারাত্মক হতে পারে?

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

বিদেশি কোনও নাগরিক কানাডায় ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে চাকরি করলে কানাডা সরকার তার স্পাউস (স্বামী বা স্ত্রী)-কে কানাডা ভিজিট করার অনুমতি দিয়ে থাকেন। স্পাউস কেবল কানাডা ভিজিট নয়, ক্ষেত্রবিশেষে ওপেন ওয়ার্ক পারমিটে কানাডায় কাজ করার সুযোগও পেতে পারেন। তাছাড়া এ দম্পতির কোন মাইনর বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান থাকলে তারাও কানাডায় পড়াশোনার সুযোগ পেতে পারেন।

কাদের সাহেবের স্ত্রীও এ সুযোগের আওতায় কানাডায় প্রবেশের আবেদন দাখিল করেন। কিন্তু গোল বাঁধলো এখানে- আবেদনপত্রে তিনি যে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিয়েছেন তাতে গোলমাল ছিল। নিজের জমানো টাকা বলে দাবি করলেও ব্যাংক ব্যালান্সের অর্থ বাস্তবে তিনি অন্যের কাছ থেকে ধার করে ব্যাংকে রেখেছেন। বিষয়টি প্রমাণ হয়েছে এভাবে, কানাডা ইমিগ্রেশনের অনুরোধ সত্বেও তিনি সঞ্চিত অর্থের উৎস বিষয়ক বিশ্বাসযোগ্য নথিপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। ইমিগ্রেশনের ভাষায় এটিকে বলে মিসরিপ্রেজেন্টেশন বা, ভুল উপস্থাপন। এছাড়া, বিশেষ উদ্দেশ্যে কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন, বা ইমিগ্রেশন অফিসারের সাথে ইন্টারভিউয়ের সময় মিথ্যা কথা বলাও মিসরিপ্রেজেন্টেশন হিসেবে গণ্য হয়।

কানাডার ইমিগ্রেশন অফিস থেকে কাদের সাহেবের স্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে অর্থের উৎস বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য আরও কয়েক সপ্তাহের সুযোগ দিয়ে বলা হয়েছে, যথাযথ তথ্য দিতে ব্যর্থ হলে তাকে মিসরিপ্রেজেন্টেশনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ বছরের জন্য কানাডায় প্রবেশের অযোগ্য বা ইনঅ্যাডমিজিবল ঘোষণা করা হতে পারে। চিঠিটির একটি কপি তার স্বামী কাদের সাহেবকেও দেওয়া হয়েছে। স্বভাবতই, চিঠি পেয়ে পরিবারটি একেবারে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছেন।

ভদ্রলোক আমার সাথে এক ঘণ্টার একটা প্রাইভেট কনসালটেশন বুক করে বিষয়টা সবিস্তার জানালেন। জানা গেল, তার স্ত্রী বাংলাদেশের এক আন-রেজিস্টার্ড কনসালটেন্টের পরামর্শে আবেদন প্রস্তুত ও দাখিলের কাজটি সম্পন্ন করেছেন।

কানাডা সরকারের রেজিস্ট্রিতে ওই ‘কনসালটেন্ট’-এর নাম অন্তর্ভুক্ত না থাকায় বুঝতে বাকি রইলো না যে তিনি আসলে হাতুড়ে ডাক্তার ধাঁচের কনসালটেন্ট। কানাডার অনুমোদিত কনসালটেন্ট নন বলে তার বিরুদ্ধে কানাডিয়ান হাই কমিশন, বা ইমিগ্রেশন অফিসে অভিযোগ করেও কোন সুফল পাওয়া যাবে না। এসব ভুয়া কনসালটেন্টের হাতে কেউ প্রতারিত হলে, বা ত্রুটিপূর্ণ আবেদন দাখিল করলে তার পুরো দায় কিন্তু আবেদনকারীর উপর বর্তায়। কাদের সাহেবের স্ত্রীর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

প্রশ্ন হলো, মিসরিপ্রেজেটেশনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে এর সাজা বা ফল কী হতে পারে?

চিঠির সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হলে কানাডা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ কাদের সাহেবের স্ত্রীকে পাঁচ বছরের জন্য কানাডা প্রবেশে অযোগ্য ঘোষণা করতে পারে। মিসরিপ্রেজেন্টেশনের গুরুত্ব বিবেচনা করে কানাডা ইমিগ্রেশন চাইলে তাঁর স্বামীকেও একই সময়ের জন্য কানাডা প্রবেশের অযোগ্য বা ইনঅ্যাডমিজিবল সাব্যস্ত করতে পারে। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কাদের সাহেবের ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে তাকে কানাডা হতে বহিষ্কারও করা হতে পারে। কেননা, পরিবারের এক সদস্য মিসরিপ্রেজেন্টেশনের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে অন্য সদস্যরাও একই দোষে দুষ্ট হয়ে পড়েন, এটা এমনই মারাত্মক এক দোষ।

কানাডায় রেজিস্টার্ড নন এমন তথাকথিত ইমিগ্রেশন কন্সাল্ট্যান্টরা সচরাচর দ্রুত ফাইল জমা দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের ক্লাইয়েন্টদের ভুল পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যার চরম মূল্য শেষতক আবেদনকারীকেই দিতে হয়। কানাডার রেজিস্টার্ড ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট বা, আরসিআইসি-রা নিজেদের রেগুলেশন, পেশাগত সুনাম ও ব্যবসায়িক স্বার্থে এ ধরনের ভুল পরামর্শ দেওয়ার কথা নয়; দিলে তারাও কানাডা সরকারের কাছে জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে পারেন।

আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝির বা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয় এমন কারণেও কেউ কেউ মিসরিপ্রেজেন্টেশনের চিঠি পেয়ে থাকেন। তাই, এধরনের চিঠি পেয়ে থাকলে তার উত্তর দেওয়ার সময় দ্রুত কোন ইমিগ্রেশন পরামর্শকের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নেওয়া বাঞ্চনীয়। এছাড়া, মিসরিপ্রেজেন্টেশনের কারণে দোষী সাব্যস্ত হয়েও বিশেষ প্রয়োজনে কানাডা যাওয়া, এমনকি তিন বছর পর্যন্ত সেখানে অবস্থানের সুযোগও ইমিগ্রেশন আইন দিয়েছে। আপনার ক্ষেত্রে সে ধরনের সুযোগ বিবেচনাযোগ্য কিনা আপনার পরামর্শক তা খতিয়ে দেখতে পারেন। উপযুক্তক্ষেত্রে মানবিক দৃষ্টিকোণও বিবেচনায় আনা যেতে পারে।

যাক, এ লেখা আর দীর্ঘ না করি। কানাডায় পড়াশোনা, বা ইমিগ্রেশন বিষয়ে কোনও বিশেষ প্রশ্ন থাকলে আমাকে নিচের ইমেইল ঠিকানায় জানাতে পারেন। পরের কোনও লেখায় আপনার আগ্রহের প্রতিফলন ঘটানোর প্রয়াস থাকবে।

তবে, বর্তমান পর্বসহ এ সিরিজের অন্য পর্বগুলোতে কানাডা ইমিগ্রেশন বিষয়ে যে সাধারণ আলোচনা করা হয়েছে তা যেন কোনভাবেই লিগ্যাল অ্যাডভাইস বা, আইনি পরামর্শ হিসেবে বিবেচনা করা না হয়। কারণ, সুনির্দিষ্ট আইনি পরামর্শ দেওয়া হয় ব্যক্তিগত সাক্ষাতে, সাধারণ আলোচনায় নয়। মনে রাখবেন, প্রত্যেকের ইমিগ্রেশন কেইসই কোন না কোনভাবে আলাদা। তাই, একই ধরনের সমাধান সবক্ষেত্রে সুফল নাও বয়ে আন্তে পারে।

এছাড়া, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এ নিয়মিত চোখ রাখুন কানাডা ইমিগ্রেশন নিয়ে আমার নতুন নতুন লেখা পড়তে। ভবিষ্যতে আপনাদের সাথে আরো অনেক মূল্যবান তথ্য সহভাগের প্রত্যাশা নিয়ে আজ এখানেই শেষ করি।

লেখক: কানাডীয় ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট, আরসিআইসি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

Like Us On Facebook

Facebook Pagelike Widget
© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com
%d bloggers like this: